যে কারণে টু-ডু লিস্ট করার পরও সব কাজ শেষ করা হয় না
সারা দিন কী কী কাজ করব কিংবা করব না, তার তালিকাই টু-ডু লিস্ট। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টু-ডু লিস্ট করলে অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে বেশি কাজ করা যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিন শেষে বেশির ভাগ মানুষ টু-ডু লিস্টের কয়েকটা কাজই সফলভাবে শেষ করতে পারে। টু-ডু লিস্ট এত জনপ্রিয় হওয়ার পরও এর কার্যকারিতা এত কম কেন?
আজ সারা দিন যেসব কাজ করার কথা ছিল, সেসব কি শেষ করেছেন? কতটুকু শেষ করেছেন, তার ওপর ভিত্তি করে বলা যাবে আজ আপনার দিনটা ‘প্রোডাক্টিভ’, না ‘আনপ্রোডাক্টিভ’ গেল।
টু-ডু লিস্ট বানানো এবং এর ব্যবহার আজকাল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সারা দিন কী কী কাজ করব কিংবা করব না, তার তালিকাই টু-ডু লিস্ট। শুধু সারা দিন নয়, টু-ডু লিস্ট সাপ্তাহিক, মাসিক কিংবা আরও লম্বা সময় চিন্তা করেও করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টু-ডু লিস্ট করলে অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে বেশি কাজ করা যায়। টু-ডু লিস্ট করলে কর্তব্যের কথা সব সময় চোখের সামনেই থাকে, ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
টু-ডু লিস্ট অনুযায়ী কাজ সমন্বয় করার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘আই ডান দিস’। এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিন শেষে বেশির ভাগ মানুষ টু-ডু লিস্টের কয়েকটা কাজই সফলভাবে শেষ করতে পারে। টু-ডু লিস্টের ৪১ শতাংশ কাজ কখনোই করা হয় না, শেষ পর্যন্ত করা হয় মাত্র ১৫ শতাংশ।
আই ডান দিস-এর চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার জ্যানেট চই বলেন, যেসব কাজ দিন শেষে সম্পন্ন করা হয়, তার সঙ্গে দিনের শুরুতে কী কী করতে চাওয়া হয়েছিল, তার খুব একটা মিল পাওয়া যায় না। টু-ডু লিস্টের কাজগুলো শেষ করা হয় না, ফলে না করা কাজের বিশাল এক তালিকা তৈরি হয়, যা দেখে দুশ্চিন্তা কিংবা উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হয়।
আর এই দুশ্চিন্তা বা উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হয় বলে আমাদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়। তবে আমরা যদি জানি কেন টু-ডু লিস্ট কাজ করছে না, আর কীভাবে তা কাজে লাগানো যায়, তাহলে তা আখেরে লাভজনক।
টু-ডু লিস্ট এত জনপ্রিয় হওয়ার পরও এর কার্যকারিতা এত কম কেন? কেনই-বা মানুষ তালিকা বানানোর পরও কাজগুলো শেষ করতে পারে না? ঠিক কোন জায়গায় গোলমাল বেধে আছে? এর সম্ভাব্য যেসব কারণ গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে, তা এ রকম—
১. নিবেদনের অভাব
বেশির ভাগ সময় কাজের প্রতি নিবেদনের অভাবে গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় আমরা বিনোদনমূলক কাজ করি। তুলনামূলকভাবে একটু কঠিন কাজ থাকলে দেখা যায় কাজটা বাদ দিয়ে ফেসবুক স্ক্রল করে সময় কাটাই। আর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা তা ভুলে থাকার চেষ্টা করি। এ কারণে অনেক সময় টু-ডু লিস্টের কাজগুলো আর শেষ করা হয় না।
২. তালিকায় কাজের বাহুল্য
টু-ডু লিস্টে সারা দিনের যাবতীয় কাজ লিখে ফেলার নেতিবাচক দিক আছে। লম্বা তালিকাটা দেখে কাজ করতে গেলে মনে ভয় চলে আসে। এত বড় তালিকার চাপ মস্তিষ্ক নিতে পারে না। বেশি কাজ করার অভ্যাস না থাকলে সমস্যাটা আরও বাড়ে।
৩. বৃহৎ দৃষ্টিভঙ্গির অভাব
অনেকে জীবনটাকে বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন না বা দেখতে পারেন না। এক সপ্তাহ, এক মাস, এক বছর, পাঁচ বছর—এভাবে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে কী কী করতে হবে, কী কী ঘটতে পারে, এসব বিবেচনায় রেখে কোন কাজগুলো বর্তমানে করা দরকার, কোনগুলো নিকট ভবিষ্যতে করা দরকার, কোনগুলো পরে করা দরকার, তার ধারণা থাকে না। কাজের অগ্রাধিকার না থাকার ফলে গুরুত্বপূর্ণ ও দ্রুত শেষ করা দরকার, এমন কাজগুলো সফলভাবে শেষ করার মানসিকতা তৈরি হয় না।
৪. বাস্তব চিন্তা না থাকা
ব্যবসা ও কর্মসংস্থানবিষয়ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনের এক জরিপ থেকে জানা যায়, রোজ টু-ডু লিস্টের ৮৯ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করা যায় না শুধু চিত্তবিক্ষেপের জন্য। অর্থাৎ একাগ্রভাবে কোনো কাজ করার সময় অন্য কোনো কারণে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া। আপনি যদি দলগতভাবে কোনো কাজ করেন তাহলে চিত্তবিক্ষেপ এড়ানো প্রায় অসম্ভব। আবার একদম একা কাজ করার সময়ও চিত্তবিক্ষেপের নানান উপাদান আছে আমাদের হাতের কাছেই, যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাই টু-ডু লিস্ট করার সময় এসব বাস্তব দিক মাথায় রাখা ভালো।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট