অ্যাপেন্ডিসাইটিস কেন, সারবে কীভাবে

কিছুদিন আগে পত্রিকায় একটা খবর পড়ছিলাম। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে ছোট্ট একটা সংবাদ। সেখানে লেখা, জিপিএ–৫ পেয়েও নিজের ফলাফল দেখে যেতে পারলেন না একজন দুর্ভাগা ছাত্রী।

খবরের বিস্তারিত পড়তে গিয়ে দেখতে পেলাম, পরীক্ষার দুদিন আগে মেয়েটার অ্যাপেন্ডিক্সের সংক্রমণ ধরা পড়ে। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শমতো অস্ত্রোপচার করানো হয়নি। মেয়েটি এ অবস্থা নিয়েই পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিকেলে মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তত দিনে অ্যাপেন্ডিক্সের সংক্রমণ পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভর্তি হওয়ার পরদিনই সেপটিক শকে মেয়েটি মারা যায়।

এখন তার এই ভালো ফলাফল আর মার্কশিট অভিভাবকদের মুখে কি হাসি ফোটাতে পারবে?
জেনারেল সার্জারিতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি যে অস্ত্রোপচার করা হয়, তা হলো অ্যাপেন্ডিক্সের অস্ত্রোপচার। পরিচিত রোগ হলেও সময়মতো চিকিৎসা না করালে এটি রোগীর মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। তাই এ রোগ সম্পর্কে জানা আর সচেতন থাকা জরুরি।


অ্যাপেন্ডিক্স আসলে কী?
অ্যাপেন্ডিক্স হলো একটা টিউবের মতো বস্তু, যা আমাদের খাদ্যনালির বৃহদন্ত্র যেখানে শুরু, সেখান থেকে পেটের ভেতর দিকে ঝুলে থাকে। ধারণা করা হয়, এর নিঃসরণ রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস কী?
অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলো অ্যাপেন্ডিক্সের সংক্রমণ। অ্যাপেন্ডিক্সের নিঃসরণ যে ছিদ্র দিয়ে খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে, কোনো কারণে সেটি বন্ধ হয়ে গেলে এই সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

শক্ত পায়খানা বা অন্য কিছু মুখটি বন্ধ করে দিলে এর নিঃসরণগুলো ভেতরে জমা হতে থাকে। সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। আর পরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে এটি ফেটেও যেতে পারে। তখন ভেতরে জমা জীবাণুগুলো সারা পেটে ছড়িয়ে পড়ে রোগীর প্রাণনাশের কারণ হয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস বোঝার উপায় কী?
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা হঠাৎ পেটে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে উপস্থিত হন। তবে তাঁদের অনেকে কিছুদিন যাবৎ শক্ত পায়খানা হওয়ার কথা বলেন। কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যথাটা শুরু হয় নাভির চারপাশে বা কিছুটা ওপরে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে পেটের নিচে ডান দিকে তীব্র ব্যথা অনুভব হয়। সেখানে ব্যথার কারণে হাত লাগানো যায় না।

অনেকের এর সঙ্গে হালকা জ্বর ও বমি বমি ভাব থাকে। তবে রোগের সংক্রমণ বাড়া বা কমার সঙ্গে সঙ্গে উপসর্গগুলো পরিবর্তিত হতে পারে।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিশ্চিত হওয়ার উপায় কী?
এ ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের নিজের হাতে করা শারীরিক পরীক্ষাই রোগ নির্ণয়ের প্রধান পদ্ধতি হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃত।

তবে আরও কিছু রোগে একই রকম উপসর্গ দেখা যেতে পারে। তাই রক্ত, প্রস্রাব আর পেটের আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে অন্য রোগগুলোকে বাতিল করা হয়।

এ ছাড়া রক্ত পরীক্ষায় সংক্রমণের মাত্রা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।
একদম নিশ্চিত হওয়ার জন্য পেটের সিটি স্ক্যান করানো যায়। তবে এটি ব্যয়বহুল। সেই সঙ্গে এ পরীক্ষায় প্রচুর পরিমাণে রেডিয়েশন এক্সপোজার হয়, যা রোগীর জন্য ক্ষতিকর। আর সবখানে ভালো ফলাফলও আসে না। তাই সাধারণত সিটি স্ক্যান করানো হয় না।

এর চিকিৎসা কী?
অ্যাপেন্ডিক্সের সংক্রমণ একবার হলে তা বারবার হবার আশঙ্কা থাকে। তাই প্রথমে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রোপচার করে ফেলাই উত্তম। তবে সংক্রমণের মাত্রা ও রোগীর শারীরিক সক্ষমতার কথা বিবেচনা করে চিকিৎসক সে অনুযায়ী পরামর্শ দিতে পারেন।

কীভাবে অস্ত্রোপচার করা হয়?
এটি কেটে বা লেপারোস্কপি যন্ত্রের মাধ্যমে করা যায়। দুটি পদ্ধতিতেই সঙ্গে সঙ্গে গোড়া থেকে বেঁধে একে কেটে ফেলা হয়। আর পেটে যদি পুঁজ বা ময়লা জমে থাকে, সেটা পরিষ্কার করা হয়।

অনেক সময় সংক্রমণের মাত্রা বেশি থাকলে লেপারোস্কপির মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয় না। তখন কেটে করা উত্তম। আর বেশি সংক্রমণ থাকলে পেটে একটি নল লাগিয়ে দেওয়া হয়, যাতে পেটের ভেতর কোনো ময়লা জমলে তা বেরিয়ে আসতে পারে। সেটি পরে খুলে দেওয়া হয়।

অস্ত্রোপচারের পর কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
অ্যাপেন্ডিক্স কেটে বের করার সময় তা পেটের ত্বকের স্পর্শে আসতে পারে। তা থেকে পরে ক্ষতস্থানে সংক্রমণ হতে পারে। তবে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আর মলম লাগালে তা একসময় সেরে যায়। ডায়াবেটিক ও বয়স্ক রোগীদের সেরে উঠতে কিছু সময় বেশি লাগতে পারে।

অস্ত্রোপচারের কত দিন পর স্বাভাবিক কাজ শুরু করা যায়?
সাধারণত অস্ত্রোপচারের পরদিনই রোগী বাড়ি চলে যেতে পারেন। তবে সপ্তাহখানেক নরম খাবার খেতে পারলে ভালো। আর ভারী কাজ, খেলাধুলা অপারেশনের এক মাস পর থেকে করা যেতে পারে।

প্রতিরোধের উপায় কী?
নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি ও শাকসবজি, ফলমূল খেতে হবে।

ডা. রেজা আহমদ
পরামর্শক, জেনারেল ও লেপারোস্কপিক সার্জারি
ইবনে সিনা হসপিটাল, সুবহানীঘাট, সিলেট।