হরহামেশা সংবাদমাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের খবর নজরে পড়ে। এসব ঘটনায় প্রাণহানির কথাও জানা যায়। রোজকার জীবনে একটু সচেতন হলেই অনেক আগুনের দুর্ঘটনা থেকে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। তারপরও অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিকাণ্ডের শিকার হলে কিছু বিষয়ে দৃষ্টি রাখতে হবে। মনোযোগী হতে হবে প্রাথমিক চিকিৎসায়। প্রথমেই কী করতে হবে, তা জানা থাকাটা জরুরি।
আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডের শিকার হলে
সবার আগে আগুনের উৎস থেকে রোগীকে সরিয়ে আনতে হবে। জামাকাপড়ে আগুন লাগলে তা দ্রুত নিভিয়ে ফেলতে হবে এবং সেগুলো খুলে ফেলতে হবে। পুড়ে যাওয়া স্থান ফুলে ওঠার আগেই হাতের আংটি, চুড়ি বা চেইনজাতীয় জিনিস খুলে নিতে হবে।
পুড়ে যাওয়া স্থানে কমপক্ষে আধঘণ্টা পানি ঢালতে হবে। কোনোভাবেই ডিম, টুথপেস্ট, বরফ, ঠান্ডা পানি বা কোনো ধরনের তেল লাগানো যাবে না। এখানে মনে রাখা জরুরি, একমাত্র পানিই পারে আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানে হওয়া তীব্র ব্যথা প্রাথমিকভাবে কমিয়ে আনতে। পাশাপাশি ক্ষতস্থানের গভীরতাও কমিয়ে আনে পানি। তাই পুড়ে গেলে পানিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক চিকিৎসা।
আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানে ফোসকা পড়ে গেলে তা কোনোভাবেই ফাটানো বা তুলে ফেলা যাবে না। ফোসকা তুলে ফেললে সে স্থানটিতে খুব সহজে জীবাণুর সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই পুড়ে গিয়ে ফোসকা পড়লে তা না তুলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি দেওয়ার পর পুড়ে যাওয়া স্থানে সিলভার নাইট্রেটজাতীয় মলম (যেমন সিলক্রিম অয়েন্টমেন্ট) অথবা ব্যাকট্রোসিন কিংবা পোভিডিন আয়োডিন অয়েন্টমেন্ট দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের মলম সব সময় হাতের কাছে রেখে দেওয়া ভালো। বিকল্প হিসেবে অ্যালোভেরাসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
পুড়ে যাওয়া স্থানে স্বাভাবিকভাবেই প্রচণ্ড ব্যথা কিংবা জ্বালাপোড়া হয়। তাই এই ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া কমাতে তীব্রতা ভেদে প্যারাসিটামল অথবা ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম গ্রুপের ট্যাবলেট বা সাপোজিটরি আকারে দেওয়া যেতে পারে।
আগুনে পুড়ে যাওয়া ত্বক সূর্যের আলোর প্রতি অতি সংবেদনশীল হয়। তাই দগ্ধস্থানটি পরিষ্কার কাপড় বা উপযুক্ত ড্রেসিং দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
হাত কিংবা পা পুড়ে গেলে স্থানটি যথাসম্ভব উঁচু করে রাখতে হবে, যাতে দ্রুত ফুলে না যায়।
বেশিমাত্রায় অগ্নিদগ্ধ রোগীদের একদিকে যেমন শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়, তেমনি শরীরের তাপমাত্রাও পড়ে যায়। তাই পানিশূন্যতা থেকে বাঁচাতে রোগীকে বেশি বেশি পানি মুখে দেওয়ার পাশাপাশি শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে কাঁথা বা কম্বল দিয়ে শরীর ঢেকে রাখতে হবে।
দ্রুত যখন হাসপাতালে পাঠাতে হবে
শরীরের ১ শতাংশের বেশি কোনো কারণে পুড়ে গিয়ে ফোসকা পড়লে। এ ক্ষেত্রে রোগীর নিজের হাতের তালুকে ১ শতাংশ হিসাব করতে হবে।
যেকোনো ধরনের বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক পোড়া।
যেকোনো কারণে মুখমণ্ডল, হাত, পা, বগল, কুচকি এবং শরীরের নিচের অংশ পুড়ে গেলে।
দগ্ধস্থানের চামড়া শুষ্ক সাদা বা কালো হয়ে গেলে। এ ক্ষেত্রে ব্যথা কম বা না থাকলে ধরে নিতে হবে, চামড়ার সবগুলো স্তর পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
শিশুদের ক্ষেত্রে দগ্ধের পরিমাণ যাই হোক না কেন হাসপাতালে নিতে হবে।
লেখক, সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী পরিচালক (একাডেমিক), শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট