ইমিউন সিস্টেম আপনার পরীক্ষিত বন্ধু

ইমিউন সিস্টেম ঠিক থাকলে একজন মানুষ বিনা রোগে দীর্ঘদিন হেসেখেলে বাঁচতে পারে। এই নিয়ে আলোচনা হলো প্রথম আলো আয়োজিত এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠানে। নাম ‘সুস্থতা স্বাভাবিক অসুস্থতা অস্বাভাবিক’। এবারের প্রতিপাদ্য  ‘ইমিউন সিস্টেম আপনার পরীক্ষিত বন্ধু’। নাদিয়া নিতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন আমেরিকান বোর্ড সার্টিফায়েড বিশেষজ্ঞ, ব্যাক ইন মোশন লিমিটেড ঢাকার চিফ মেডিকেল কনসালট্যান্ট ডা. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ। অনুষ্ঠানটি ১৭ জুন প্রথম আলো ও এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।  

নাদিয়া নিতুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন ডা. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ

শুরুতে ডা. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমিউন সিস্টেম সম্পর্কে জানান। তিনি বলেন, ‘অনেকেই আছেন যাঁরা ইমিউন সিস্টেমকে সহজভাবে বোঝেন না। এটি একটি সার্কুলেটরি সিস্টেম বা সংবহনতন্ত্র। এর ভেতর বেশ কিছু সেল জড়িত রয়েছে। যেমন এডেনয়েড, টনসিল, লিম্ফনোট, লিম্ফেটিক ভ্যাসেল, থাইমাস, স্প্লিন, বোনম্যারো প্রভৃতি। ফুসফুস কীভাবে কাজ করছে, সেটা নির্ভর করছে আমাদের ইমিউন সিস্টেম ঠিক থাকা না থাকার ওপর। শরীর যদি একটি রাজ্য হয়, তাহলে ইমিউন সিস্টেম হচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্র, যা বাইরের শত্রু (রোগ-জীবাণু) থেকে শরীরকে রক্ষা করে।’

ডা. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ বলেন, ইমিউন সিস্টেমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি হচ্ছে ইনেট ইমিউন সিস্টেম, যেটা জন্মগতভাবে আমাদের শরীরে আছে। দ্বিতীয়টি অ্যাকোয়ারড। এটি আমরা গ্রহণ করি। যেমন শরীরে কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস আক্রমণ করলে তার বিরুদ্ধে একটা প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তুলছে। একটা মেমোরি তৈরি হচ্ছে, যাকে অ্যান্টিবডি বলা হয়। পরবর্তী সময়ে আবার একই ধরনের কোনো আক্রমণ হলে ইমিউন সিস্টেম সেটাকে প্রতিরোধ করছে।

ডা. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ

অ্যাকোয়ারড ইমিউনিটির একটি অংশ হচ্ছে ভ্যাকসিন। এটি শরীরে একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করছে। ইমিউন সিস্টেমের শেষ ভাগটিকে বলা হয় প্যাসিভ ইমিউনিটি। যখন একটা শিশু জন্ম নেয় তখন তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার কথা। এই দুধের মাধ্যমে মায়ের ইমিউন সিস্টেম বাচ্চার মধ্যে আসছে। এ জন্য বলা হয়ে থাকে, ‘মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই’।

ডা. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ বলেন, এই করোনাকালে আমরা দেখছি, যাদের ইমিউন সিস্টেম ভালো, তারা সারভাইভ করে যাচ্ছে, যাদের ভালো না, তারা করছে না। এ ক্ষেত্রে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করছে। ডা. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ বলেন, ‘একটা শিশু যখন গর্ভে থাকে, তখন মায়ের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। মা যদি শারীরিক বা মানসিকভাবে ভালো না থাকেন, তাহলে শিশু দুর্বল ইমিউনিটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। আবার কারও ইমিউন সিস্টেম সব সময় শক্তিশালী বা দুর্বল হয় না। একেক কারণে এর তারতম্য দেখা দেয়। অন্যদিকে এই ইমিউন সিস্টেম শুধু শারীরিক ব্যাপার নয়। মানসিক স্ট্রেসের জন্য ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হতে পারে। কারণ তখন শরীরে করটিজল নামে হরমোন নিঃসৃত হয়, যা এতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। হাসপাতালে যখন রোগী ভর্তি হয়, তখন দেখা যায় সে যদি ডায়াবেটিসের রোগী হয়, তাহলে ইনসুলিন বেশি করে দিতে হচ্ছে। আবার আইসিইউতে থাকলে ইনসুলিন আরও বেশি করে দেওয়া লাগে। কোনো রোগের জন্য শরীরে স্টেরয়েড দেওয়া হলেও কিন্তু এটি ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে দেয়।’

আমাদের ভেতর অনেকেই আছেন যাঁরা মনে করেন, অসুখ হলে ওষুধ খেলেই হবে। কিন্তু রোগ যাতে না হয়, সেদিকে নজর নেই। একটি অসুখের সবার প্রথম চিকিৎসাই হচ্ছে তা প্রতিরোধ করা, ইমিউন সিস্টেম দিয়ে। আর এই ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে খাবার খুব বড় একটা ভূমিকা পালন করে।

ডা. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ এ নিয়ে বলেন, ‘একটা সময় আমাদের দেশে ভাবা হতো, খুব মোটাসোটা মানুষ মানেই স্বাস্থ্যবান। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যারা মোটা তাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল এবং এ জন্য নানা রকমের রোগে তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই পুষ্টিকর, ব্যালান্স ডায়েট করতে হবে। শারীরিকভাবে ফিট থাকতে যোগব্যায়াম করতে হবে। এতে খুব স্ট্রেসফুল ব্যায়াম হয় না কিন্তু এতে মন এবং শরীর দুটোই কাজ করছে। রক্তসঞ্চালন বাড়ছে। এ ছাড়া মেডিটেশন মানসিক শক্তি বাড়াতে এবং মনকে ইতিবাচক করতে পারে; যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়ক।’