ঈদ উৎসবে সুস্থ থাকতে

করোনার প্রকোপ কমে এলেও সংক্রমণ কিন্তু থেমে নেই। আবার গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বাড়ছে ডায়রিয়া, কলেরাসহ পানিবাহিত রোগের প্রকোপও। এরই মধ্যে আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ উৎসবে সুস্থ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

ঈদের কেনাকাটায় স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলুন
ছবি: প্রথম আলো

বছর ঘুরে আবার এল পবিত্র ঈদুল ফিতর। কোভিড অতিমারির কারণে গত দুই বছর দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ঠিকভাবে ঈদ পালন করতে পারেনি। এ বছর বিধিনিষেধ যেমন নেই, তেমনি লম্বা ছুটিও পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা, তাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদের আনন্দে মেতে উঠবেন সবাই। ধারণা করা হচ্ছে, অধিকাংশ রাজধানীবাসী ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। ব্যাপক হারে চলাচল ঘটবে। সব মিলিয়ে ঈদের ছুটিতে সবাই যেন সুস্থ থাকেন, তার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।

দুশ্চিন্তার নাম ডায়রিয়া

কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমে এসেছে। তবে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডায়রিয়া। কয়েক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়ার প্রকোপ লক্ষ করা যাচ্ছে বেশ। সারা দেশেই প্রচুর লোক আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ঈদে খাবারদাবারে অনিয়ম আর গরমে দীর্ঘযাত্রার সময় অসচেতনতায় ডায়রিয়ার প্রকোপ আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।

ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং, কলেরা ইত্যাদি খাদ্য ও পানিবাহিত রোগ। তাই ঈদে খাবার গ্রহণের সময় সতর্ক থাকুন। প্রচণ্ড গরমে বাইরের পানি বা পানীয় কিছুতেই খাবেন না। যাঁরা ঈদযাত্রা করছেন, তাঁরা পথের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি বহন করবেন। পথেঘাটে কোনো খাবার গ্রহণ করবেন না। সম্ভব হলে যাত্রাপথের জন্য সহজে নষ্ট হয় না, এমন শুকনা খাবার বহন করুন। বিশেষ করে শিশুদের খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভালো।

কোভিড কিন্তু যায়নি

কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা কমে গেছে মানে অতিমারি সমাপ্ত হয়েছে, তা কিন্তু নয়। শোনা যাচ্ছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কোভিডের হার আবার বাড়ছে। এটি আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। এবার ঈদের বিপুলসংখ্যক মানুষ ভারত ও অন্যান্য দেশে বেড়াতে যাচ্ছেন। তাঁদের উচিত হবে কোভিডের বিধিনিষেধ মেনে চলা। ভ্রমণের সময় ও ভিড়ের মধ্যে মাস্ক পরুন। এটি কোভিডসহ অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগ থেকেও বাঁচাবে। বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস ছাড়বেন না। এতে বাড়তি লাভ হলো ডায়রিয়াসহ খাদ্যবাহিত রোগ থেকেও মুক্তি মেলে। দেশের ভেতরও যাঁরা চলাচল করবেন, ভিড়ের মধ্যে বা মার্কেট–শপিং মলে মাস্ক পরবেন। গণচলাচলের কারণে কোভিডের সংক্রমণ আবার যেন না বাড়ে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

ওষুধপত্র নিয়ে সতর্কতা

যাঁরা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, হাঁপানি ইত্যাদি নানা রোগে ভুগছেন, তাঁরা ভ্রমণের আগে এবং ছুটির আগেই নিজেদের ওষুধপত্র যথেষ্ট পরিমাণে সংগ্রহ করে নিন। যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে সব ওষুধ না–ও পেতে পারেন; তাই নিজের ওষুধপত্র পর্যাপ্ত পরিমাণে বহন করুন। ইনসুলিন বহন করার জন্য আলাদা বাক্স বা পানি/বরফভর্তি ফ্লাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। ইনহেলার ও অন্যান্য ওষুধ একটি মুখ বন্ধ ব্যাগে নিন। সঙ্গে নিতে পারেন প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ, যেমন প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন, খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেট ইত্যাদি। চাইলে ছোট্ট একটা ফার্স্ট এইড বক্সও সঙ্গে নিতে পারেন।

গরমে ভ্রমণকালীন সতর্কতা

প্রচণ্ড গরম আর রোদের মধ্যেই ঈদভ্রমণ করতে হচ্ছে। তাই গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর পানি পান করবেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের যাতে পানিশূন্যতা না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখবেন। বারবার তরল গ্রহণ করবেন। হালকা সুতি কাপড় পরবেন। বেশি ঘেমে গেলে শিশুদের পোশাক পরিবর্তন করে দেবেন। রোদে ছাতা, সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। ভ্রমণের আগে–পরে হালকা খাবার খাবেন।

বেড়াতে গিয়ে সতর্ক থাকুন

ঈদের ছুটিতে অনেকেই সমুদ্র, পাহাড়, রিসোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে যাবেন। অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস–আনন্দে সতর্কতার কথা ভুলে যাবেন না। প্রতিবছর এ সময় নানা দুর্ঘটনা ঘটে। শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন। পানি বা আগুনের কাছে যেন না যায়, উৎসবের আনন্দ যেন বেদনায় পর্যবসিত না হয়। বন্ধুবান্ধব ও স্বজনদের সঙ্গে মজা করার সময় খেই হারিয়ে ফেলবেন না।

অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ভ্রমণ করার আগে অবশ্যই নিজের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। কেউ গ্রামের বাড়ি বা মফস্বলে বা পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে গিয়ে অসুস্থ বোধ করলে নিকটস্থ কোন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করবেন, আগে থেকেই তা জেনে রাখুন।