করোনারি এনজিওগ্রাম

করোনারি এনজিওগ্রাম কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি নয়। এটি এক্স–রে ইমেজিং পদ্ধতি ব্যবহার করে হৃদ্‌যন্ত্রের রক্তপ্রবাহ কোথাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কি না, তা খুঁটিয়ে দেখার পরীক্ষা। হৃদ্‌যন্ত্রে পুষ্টির জোগান ও অক্সিজেন সরবরাহে রয়েছে দুটি রক্তসঞ্চালক ধমনি। যদি ধমনিগুলো ব্লক হয়ে যায়, তখন সেই জায়গার হৃদ্‌পেশিগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়। এনজিওগ্রামের মাধ্যমে ব্লকের সংখ্যা, অবস্থান এবং কত শতাংশজুড়ে ব্লক রয়েছে সেসব জানা যায়।

যে যে কারণে এনজিওগ্রাম প্রয়োজন
• ক্রমেই বাড়তে থাকা বুকে ব্যথা
• জন্মগতভাবে হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা
• হার্টের ভালভে কোনো সমস্যা
• বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হলে
• আগে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে
• হার্ট অ্যাটাকের পর স্ট্রেস টেস্ট পজিটিভ হলে
• স্ট্রেস টেস্ট বা ইটিটিতে ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ ধরা পড়লে
• দীর্ঘস্থায়ী অ্যানজিনা রোগীর ওষুধ খাওয়ার পরও ক্রমেই বুকে ব্যথা বাড়লে
• ঘাড়, চোয়াল ও বুকে প্রচণ্ড ব্যথা এবং কোনো পরীক্ষায় ব্যথার কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলে।

যেভাবে এনজিওগ্রাম করা হয়
এনজিওগ্রামের জন্য প্রয়োজন আধুনিক ক্যাথ ল্যাব। ল্যাবে নিয়ে রোগীকে এক্স–রে টেবিলে শুইয়ে আয়োডিন সলিউশন দিয়ে এনজিওগ্রাম করার স্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। প্রয়োগ করা হয় ৫ থেকে ১০ সিসি লোকাল অ্যানেসথেসিয়া। পরীক্ষা শেষে রোগীকে অবজারভেশনে রেখে প্রচুর পানি পান করতে বলা হয়। যাতে রোগীর শরীর থেকে ওপেক ডাই বেরিয়ে যেতে পারে। পায়ে এনজিওগ্রাম করা হলে পা নড়াচড়া করতে নিষেধ করা হয়। এতে পায়ের ফিমোরাল আর্টারি পাংচার এরিয়া থেকে রক্তপাত হতে পারে। তাই রোগীকে এক দিন হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে হাতের রেডিয়াল আর্টারি দিয়ে এনজিওগ্রাম করা হলে হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় না।

এনজিওগ্রামে ভয় নয়
অনেক সময় রোগীকে এনজিওগ্রাম করতে বললে রোগী ঘাবড়ে যান। যদি জ্ঞান না ফেরে! এনজিওগ্রামে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এই পরীক্ষায় রোগীকে অজ্ঞান করা হয় না। ধমনিতে ক্যাথেটার (সরু প্লাস্টিক টিউব) প্রবেশ করানোর জন্য চামড়ার নিচে অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে অবশ করে নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে এনজিওগ্রামে জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন
• ডায়াবেটিস রোগী
• বয়স ৭০ বছরের বেশি হলে
• কিডনি রোগী
• হার্ট ফেইলিওর ও রক্তনালির গাত্র শক্ত হলে

পরীক্ষার আগে সতর্কতা
যেহেতু করোনারি এনজিওগ্রামের মাধ্যমে রোগের ধরন নির্ণয় করে সে অনুযায়ী রোগীকে রিং, বাইপাস, এনজিওপ্লাস্টিসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। তাই পরীক্ষার আগে রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কি না; কিডনির কার্যক্ষমতা ঠিক আছে কি না; হেপাটাইটিস বি, সি বা এইচআইভি ভাইরাস আছে কি না নিশ্চিত হতে হবে। দেখতে হবে রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট, হিমোগ্লোবিন, ব্লিডিং টাইম ও ক্লোটিং টাইম। এ ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ফিটনেস পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে ও এনজিওগ্রামের চার থেকে ছয় ঘণ্টা আগে খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।