ভালোবাসা আমার কাছে কলার খোসাএলভিস প্রিসলি
কলা। এই ফলটি আঁশ ও ভিটামিনে ভরপুর। তাই তো কলা ‘সুপারফুড’ হিসেবে বিবেচিত। ‘কলাগাছ’ বলা হলেও আদতে এটি বিশালাকৃতির তৃণ। সে অনুযায়ী কলাকে বেরি বা কুল গোত্রের ফল বলা যায়। কাঁচা ও পাকা দুই রকমের কলাতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান। এ দিয়ে বানানো যায় ঝাল ও মিষ্টিজাতীয় খাবার। কাঁচকলা দিয়ে চিপসও তৈরি করা যায়, যা আলুর চিপসের চেয়েও বেশি স্বাস্থ্যকর।
এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল বলা হয়। একটি জরিপে দেখা গেছে, সকালের নাশতায় সবচেয়ে বেশি খাওয়া খাবারের মধ্যে ডিমের পরই কলার অবস্থান। খোদ আমেরিকাতেই একজন মানুষ বছরে গড়ে ৯০টি কলা খেয়ে থাকে, যা কমলা ও আপেলের মোট সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় এই ফল এখন বিশ্বের সব উষ্ণমণ্ডলীয় দেশে চাষ করা হয়। কলা হজমশক্তি বৃদ্ধি, হৃদ্স্বাস্থ্যের সুস্থতায় ও ওজন কমাতে অনেক সহায়ক।
কলার গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান
একটি বড় কলায় (৮-৯ ইঞ্চি) রয়েছে ১২০ ক্যালরি ও ৪৯০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। এতে একজন মহিলার দৈনিক পটাশিয়ামের চাহিদার ১৯ শতাংশ এবং একজন পুরুষের চাহিদার ১৫ শতাংশ পূরণ হয়। এই পুষ্টিকর উপাদান শরীরের সোডিয়াম অপসারণ করে রক্তনালি শিথিল করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
এই সোনালি ফলটি ভিটামিন বি৬–এর খুব ভালো উৎস। ভিটামিন বি৬ শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া কলাতে রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন ও ফ্যাট।
কিডনি–স্বাস্থ্যের জন্য কলা
কলার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কিডনির কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে। মার্কিন গবেষকদের করা ১৩ বছরের একটি দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীরা সপ্তাহে ২–৩টি কলা খেয়েছে, তাদের কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমেছে ৩৩ শতাংশ। অন্য একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, যারা সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন কলা খায়, তাদের কিডনির অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা, যারা কলা না খায় তাদের থেকে ৫০ শতাংশ কম।
কলা হজমস্বাস্থ্যের উন্নতি করে
একটি মাঝারি আকারের কলাতে রয়েছে তিন গ্রাম ফাইবার। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। কলায় দুই রকমের ফাইবার পাওয়া যায়। পেকটিন ও রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ। রেজিস্ট্যান্স স্টার্চ হজম হয় না। এটি বৃহদন্ত্রে যেয়ে পেটের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাদ্যে পরিণত হয়। অন্যদিকে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পেকটিন কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। নিয়মিত কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, পাকস্থলীর আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলতে গেলে হয়ই না।
ওজন হ্রাসে কলা
কলাকে ওজন হ্রাসবান্ধব ফল বলা হয়ে থাকে। একটি বড় আকারের কলায় আছে মাত্র ১২০ ক্যালরি। কলার রেজিস্ট্যান্স ও পেকটিন ফাইবার হজম হতে দেরি হয় বলে কলা খেলে পেট ভরা থাকে অনেকক্ষণ। এ জন্য যারা ওজন কমাতে চায়, তাদের পুষ্টিবিদেরা সারা দিনে অন্তত একটি কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
খেলোয়াড়দের জন্য
কলা খেলোয়াড়দের জন্য একটি আদর্শ খাবার। এটি খেলাধুলা বা শরীরচর্চার ফলে হওয়া মাসল ক্র্যাম্প, পেশিতে টান ধরা ইত্যাদি কমাতে পারে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরচর্চার পর কলা খেলে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক থাকে।
কাঁচকলা ইনসুলিন সেনসিটিভ
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স টাইপ টু ডায়বেটিসসহ বিশ্বের মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে থাকে। কলার রেজিস্ট্যান্স ফাইবার ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়। কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫-৩০ গ্রাম রেজিস্ট্যান্স ফাইবার প্রতিদিন গ্রহণ করলে মাত্র ৪ সপ্তাহের মধ্যে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ। আর কাঁচকলা রেজিস্ট্যান্স ফাইবারের সবচেয়ে ভালো উৎস।
শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের আধার
ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে। কলাও এর ব্যতিক্রম নয়। এতে ক্যাটিচিন ও ডোপামিনের (এর সঙ্গে মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমোনের কোনো সম্পর্ক নেই) মতো আরও অনেক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ, এটি হৃদ্রোগ, ক্যানসারের মতো ঘাতক ব্যাধি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
ত্বকের সুস্থতায়
একটি মাঝারি আকারের কলায় যে পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ আছে, তা আমাদের দৈনিক ম্যাঙ্গানিজের চাহিদার ১৩ শতাংশ পূরণ করে থাকে। এটি ত্বকের কোলাজেন গঠনে সহায়তা করে এবং ত্বক ও অন্যান্য কোষকে ফ্রি র্যাডিকেলজনিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
কলা সংরক্ষণ
কলা সংরক্ষণ করতে যেয়ে অনেকে বেশ ঝামেলায় পড়েন। এটি সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি বেশির ভাগেরই অজানা। কলা সাধারণত ঠান্ডা–শুকনা জায়গায় রাখতে হয়। ফ্রিজের ভেতর রাখলে কলা পাকবে না। কলা স্লাইস করলে আনারস বা লেবুর রসে ভিজিয়ে নেওয়া ভালো। এটি কলাকে দীর্ঘক্ষণ সতেজ রাখবে, নয়তো এটি বাদামি হয়ে যাবে। কলা কখনোই আপেলের মতো অন্যান্য ফলের সঙ্গে রাখা যাবে না। তাহলে দ্রুত পেকে যাবে। প্লাস্টিক ব্যাগেও রাখা যাবে না। রাখলে এটি নষ্ট হয়ে যাবে, আর তখন ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
তথ্যসূত্র: ওয়েব এমডি, হেলথলাইন, হেলথ এক্সচেঞ্জ