কাজেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে

২ এপ্রিল ছিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে আর অটিজম আছে যাদের, তাদের সদয়চিত্তে গ্রহণ করার বার্তা দিতে এই দিবস।
অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আনতে হবে সমাজের মূলধারায়, এমন বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তাদের জন্য তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর বাবা-মায়েদের দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। আর মা-বাবাহারা অটিজম শিশুদের জন্য তত্ত্বাবধায়কসহ হোস্টেল নির্মাণের ঘোষণাও দিয়েছেন।

এবারের অটিজম দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘ইনক্লুশন ইন দ্য ওয়ার্ক প্লেস (কর্মস্থলে অন্তর্ভুক্তকরণ)’। শিক্ষা হতে হবে সামুদায়িক বা অন্তর্ভুক্তিমূলক, সবাই পাবে শিক্ষার সুযোগ। অন্য প্রতিবন্ধীদের মতো অটিজমে আক্রান্ত মানুষও পাবে শিক্ষা ও কাজ করার অধিকার।

অটিজম মূলত হলো অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিজঅর্ডার বা সংক্ষেপে এএসডি। স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ বিকল হলে হতে পারে এমন রোগ। এমন হলে শব্দ, অঙ্গভঙ্গি, মুখের অভিব্যক্তি বা স্পর্শের মাধ্যমে ভাব প্রকাশে করা তাদের পক্ষে হয় কঠিন। আচরণের হতে পারে পুনরাবৃত্তি। আর আগ্রহ সীমিত হয়ে আসে। তাদের কারও কথোপকথনে সমস্যা, তবে অন্য দক্ষতা থাকে। অসম বিকাশ। আলাপে সমস্যা কিন্তু গণিতে, সংগীতে বা অন্য কোনো শিল্পে দারুণ।

ছোটবেলা থেকে তাদের নানান উপসর্গে নজর দেওয়া উচিত। শিশুর বৃদ্ধির থাকে নানা স্তর আর একে একে বিকাশের মাইলফলক শিশু পেরোতে থাকে। শরীর বেড়ে ওঠার সঙ্গে হতে হবে মানসিক আর সামাজিক বিকাশ। মাকে দেখে সে হাসে, কোনো দিকে ইঙ্গিত করলে তাকায়, শব্দের স্ফুরণ—অটিজমে আক্রান্ত শিশু কিন্তু এমন সব মাইলফলকে সাড়া দেয় না।

তাহলে সমাজে চলতে-শিখতে তার গতি হয় শ্লথ। প্রাথমিক এমন লক্ষণ দেখলে বাবা-মাকে তা বিশেষজ্ঞের নজরে আনা উচিত। প্রাথমিক লক্ষণ শুরু। এমন শিশু অন্য শিশুর সঙ্গে মেলামেশা, খেলাধুলা করতে অনাগ্রহী, নতুন কিছুতে আগ্রহী নয়, ডাকলে সাড়া দেয় না, আপনমনে থাকে। মা-বাবা এসব লক্ষ করবেন জন্মের পর থেকেই।

স্কুলে যাওয়ার আগেই দেখতে হবে

কিছু পরামর্শ দিয়েছে আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস। ১৬ থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশুদের পরীক্ষা করতে পারেন মা-বাবা। অসামঞ্জস্য কিছু দেখলে রিপোর্ট করতে পারেন চিকিৎসককে।

আর শিশুর বেড়ে ওঠার মাইলফলক মিলিয়ে দেখতে পারেন।

পোলিও টিকার কার্ডে উল্লেখ থাকে মাইলফলকের সচিত্রভাবে। মা-বাবা তা মিলিয়ে দেখতে পারেন। এবার বলি শিশুদের মধ্যে কোন তিনটি লক্ষণ দেখলে চিকিৎসকের নজরে আনতে হবে—

১. বেড়ে ওঠার মাইলফলক শ্লথ হওয়া
২. সামাজিকভাবে ভারসাম্যহীন শিশু
৩. শিশু কথা বলে বা না বলে, দেহভঙ্গি করেও ভাব প্রকাশে অক্ষম।

মাইলফলকে ধীরগতি

শিশু ছয় মাস বয়সেও হাসে না।
৯ মাসেও তারা মুখভঙ্গি করে না।
১২ মাসেও শব্দ করা আর বাক্যের স্ফুরণ না হওয়া
১৬ মাসেও কথা না বলা।
সামাজিকভাবে বেসামাল
এরা চোখে চোখে তাকায় না বুকের দুধ দেওয়ার সময়।
একা খেলতে ভালোবাসে।
তাদের স্পর্শ করা পছন্দ করে না।
একটি বাঁধা রুটিন পছন্দ। কারও অনুভূতি বা কথা কোনো কিছুতে আগ্রহ নেই।

যোগাযোগে সমস্যা

একলালিয়া। এরা এক শব্দ বারবার বলতে থাকে। কথা বলে সাদামাটা। কোনো ভঙ্গি নেই। এরা কথোপকথনের সময় অনুভূতি, আবেগ কিছু বোঝে না। নিজে যা চায়, তা প্রকাশ করতে পারে না।

কিছু লাল পতাকা

অভিভাবকদের এগুলো জানা জরুরি। যেমন বিকাশের মাইলফলক পিছিয়ে যাওয়া। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সে হাসছে না, অঙ্গভঙ্গি নেই, শব্দ করে না, আঙুল দেখায় না। তাহলে ডাক্তারদর্শন।

পুনরাবৃত্তি

শিশু মাথা তড়পাচ্ছে, বারবার চোখ পিট পিট করছে, হাত ঝাপটাচ্ছে বারবার। গোল বৃত্ত বারবার হাত দিয়ে তৈরি করছে। তখন দেখা করবেন শিশুবিশেষজ্ঞের সঙ্গে।

খাওয়ার অস্বাভাবিক অভ্যাস

এমন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা, যা খাদ্য নয়; যেমন ময়লা, কাদা, বরফ, চুল।

রগচটা মেজাজ

২ থকে ৬ বছরের বাচ্চা খুব বেশি উত্তেজিত হলে মাথা ঠুকতে থাকে মেঝেতে।