করোনা সংক্রমণের একটি উপসর্গ হলো স্বাদ-গন্ধ নষ্ট হয়ে যাওয়া। ফলে কোভিড রোগীদের খাওয়া অনেক কমে যায়। খেতে না পাওয়ার কারণে অনেক সময় দুর্বলতা, ওজন হ্রাস ইত্যাদিও দেখা দেয়। এমনকি সেরে ওঠার পর বা কোভিড নেগেটিভ হয়ে গেলেও স্বাদ পুরোপুরি ফিরে পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
বলা হয়া, করোনাভাইরাস ঘ্রাণশক্তিকে সক্রিয় রাখা কোষগুলোকে আক্রমণ করে, ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যায়, গন্ধ পায় না। এ জন্য খাওয়ার রুচি থাকে না, ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়।
তবে শুধু ভাইরাসের কারণে আক্রান্ত নাকের মেমব্রেন বা ঝিল্লির গন্ধ কোষের জন্যই সম্ভবত গন্ধের অনুভূতিতে বিঘ্ন ঘটে না। প্রাণীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে, ভাইরাস গন্ধের কোষ এবং সেখান থেকে স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় এবং সেখানে গন্ধের অনুভূতি বোধের স্নায়বিক প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়।
আবার হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগী নানা কারণে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করায় রুচি কিছুটা নষ্ট হয়। অথচ একজন কোভিড রোগীর যথাযথ পুষ্টির প্রয়োজন। সে জন্য দরকার যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
স্বাদ ও ঘ্রাণ ফিরিয়ে আনার জন্য আর রুচি বাড়াবার জন্য কিছু ঘরোয়া চেষ্টা করা যায়। যেমন রসুন, লেবু, পুদিনাপাতা, কুসুম গরম পানি খেতে পারেন। গরম পানির ভাপ নিতে পারেন।
শরীর ও মন সতেজ রাখার জন্য প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। পছন্দমতো গান শুনুন, অনলাইনে প্রিয় মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিন, রুচিশীল বিনোদনে অংশ নিন।
গন্ধ ফেরানোর অনুশীলন
গন্ধের অনুভূতি বোধের উন্নতি করতে সহজ একধরনের অনুশীলন রয়েছে। একাধিক গবেষণায় তার সুফলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই অনুশীলনে রোগীদের নিয়মিত চারটি কড়া গন্ধওয়ালা কাঠি শুঁকতে হয়। সেই কাঠি নিজের নাকের নিচে ধরে সেই গন্ধ অনুভব করার চেষ্টা করতে হয়। সকাল ও সন্ধ্যায়, অর্থাৎ দিনে দুবার দশ থেকে পনেরো সেকেন্ড ধরে গন্ধ শুঁকতে হয়।
কাঠিগুলোতে গোলাপ, ইউক্যালিপটাস, লেবু ও লবঙ্গের গন্ধ রয়েছে। ইচ্ছা করলে যে কেউ পছন্দমতো অন্য গন্ধও বেছে নিতে পারেন। যেমন সুগন্ধি তেল বা কড়া মসলা। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গন্ধের কোনো গুরুত্ব নেই। গন্ধ পেলেও কখনো তা চেনা যায় না। তবে তাতে কোনো ক্ষতি নেই। এ ক্ষেত্রে গন্ধ চেনা মূল লক্ষ্য নয়, বরং আদৌ গন্ধ পাওয়াই হলো সাফল্য। গবেষকেরা বলছেন, প্রথম দিকে গন্ধ না পেলেও বারবার এটি করতে হবে। সেটা করতে গিয়ে মস্তিষ্কে গন্ধ পৌঁছানোর স্নায়বিক পথ এবং খোদ মস্তিষ্কের অনুশীলন হয়, নতুন আন্তসংযোগ সৃষ্টি হয়। দৈনন্দিন জীবনে আবার গন্ধের অনুভূতি ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
করোনা সংক্রমণের কারণেও গন্ধের অনুভূতি সাময়িক অথবা দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে লোপ পেতে পারে। ফলে খাবার গ্রহণের ইচ্ছা নষ্ট হয়, শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক ও বৃদ্ধরা বেশি দুর্বল হয়ে পড়েন এতে। তাই যাঁদের স্বাদ–গন্ধের অনুভূতি এখনো ফিরে আসেনি পুরোপুরি, তাঁরা এই স্মেল ট্রেনিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।