কেমোথেরাপির কথা

প্রতীকী ছবি

ক্যানসারের আধুনিক চিকিৎসায় বহুল প্রচলিত ও পরিচিত পদ্ধতি কেমোথেরাপি। এটি ক্যানসার কোষের খাদ্য সংগ্রহকে বাধা দেয়। ফলে ধীরে ধীরে কোষটি অ্যাপোটোসিস প্রক্রিয়ায় ধ্বংস হয়ে যায়। ব্যাহত হয় ক্যানসার কোষের জন্ম ও বৃদ্ধি। কেমোথেরাপির সফলতার হার অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় বেশি হলেও এটি প্রয়োগ করলেই ক্যানসার কোষ পুরোপুরি নির্মূল হবে—এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। রোগের তীব্রতা ও রোগীর স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে ইনজেকশন, টপিক্যাল (ত্বকে ক্রিম হিসেবে ব্যবহার) ও ওরাল—এই তিন মাধ্যমে কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়। প্রক্রিয়াটি কয়েক দিন, সপ্তাহ বা মাস ধরেও চলতে পারে।

যেসব ক্ষেত্রে দেওয়া হয় কেমোথেরাপি

• প্যানক্রিয়াট্রিক ক্যানসার: প্যানক্রিয়াট্রিক ক্যানসার চিকিৎসায় সহজে সার্জারি করার জন্য সার্জারির আগে এবং সার্জারির পরে থেকে যাওয়া কোষ নির্মূল করতে পরে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়।

• টেস্টিকুলার ক্যানসার: ক্যানসার কোষ যদি বেশি ছড়িয়ে পড়ে তাহলে প্রথম পর্যায়ে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই কেমোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

• লিম্ফোমা: শ্বেত রক্তকণিকাগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ক্যানসারের সূচনা হয়। একপর্যায়ে লিম্ফোসাইটও আক্রান্ত হয়ে পড়ে। কেমোথেরাপির মাধ্যমে এটি নির্মূল করা সম্ভব।

কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধের ধরন

• অ্যালকাইলেটিং এজেন্ট
• অ্যান্টিমেটাবলিটস
• প্ল্যান্ট অ্যালকালয়েড
• অ্যানথ্রাসাইক্লিন।

বিভিন্ন ধরনের কেমোথেরাপি

অ্যাডজুভেন্ট কেমোথেরাপি: সার্জারির পর ক্যানসার কোষের অবশিষ্ট অংশ ধ্বংস করতে এই থেরাপি ব্যবহার করা হয়।

নিও-অ্যাডজুভেন্ট কেমোথেরাপি: ক্যানসার কোষকে সংকুচিত করে সহজে অপসারণ করতে সার্জারির আগে এটি প্রয়োগ করা হয়।
ইনডাকশন কেমোথেরাপি: অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার মতো ক্যানসার নির্মূলে প্রয়োগ করা হয় এই থেরাপি।

কনসোলিডেশন কেমোথেরাপি: রোগী যাতে দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকেন, তাই এটি দেওয়া হয়। এর অপর নাম ইনটেনসিফিকেশন কেমোথেরাপি।
মেইনটেন্যান্স কেমোথেরাপি: অ্যাকিউট লিম্ফোসাইটিক ও প্রো-লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া নিরাময়ে এর প্রয়োগ দেখা যায়।

ফার্স্ট লাইন কেমোথেরাপি: কোনো ক্যানসারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও প্রমাণিত থেরাপিকে সেই ক্যানসারের ফার্স্ট লাইন থেরাপি বা স্ট্যান্ডার্ড থেরাপি বলে।

সেকেন্ড লাইন কেমোথেরাপি: ফার্স্ট লাইন থেরাপি ক্যানসার কোষকে প্রতিহত করতে ব্যর্থ হলে তখন সেকেন্ড লাইন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। এর অন্য নাম স্যালভাজ থেরাপি।

প্যালিয়েটিভ কেমোথেরাপি: রোগের উপসর্গগুলো কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে, সেটি পর্যবেক্ষণ করা এই থেরাপির কাজ।

কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

• চুল পড়া
• ক্ষুধামান্দ্য
• বমি ভাব
• ওজন হ্রাস
• মুড সুইং
• ডায়রিয়া
• মনঃসংযোগে ব্যাঘাত
• প্রজননতন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস
• কিডনি ও মূত্রাশয়ে সমস্যা।

কেমোথেরাপি-পরবর্তী যত্ন

থেরাপির প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যকর কিছু নিয়মকানুন। চর্বিজাতীয় খাবারের পরিবর্তে খেতে হবে পর্যাপ্ত আমিষ ও ভিটামিনযুক্ত খাবার। খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তীব্র সূর্যালোকে বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে হবে। ত্যাগ করতে হবে ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস।