কৈশোরে থাইরয়েডের সমস্যা

ছবিটি প্রতীকী

থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা যেকোনো বয়সে হতে পারে। শিশুদের জন্মগত বা কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বড়দের থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা নিয়েই আমরা বেশি আলোচনা করি। কৈশোরেও থাইরয়েড হরমোনের অভাবজনিত সমস্যা বা জুভেনাইল হাইপোথাইরয়েডিজম হতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এ সমস্যাকে অবহেলা করা হয়।

থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা নানা ধরনের হতে পারে, হতে পারে হরমোনের স্বল্পতা বা আধিক্য। তবে সার্বিক বিচারে হরমোনের ঘাটতি বা হাইপোথাইরয়েডিজমই বেশির ভাগ সময় সমস্যার কারণ হয়ে থাকে।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাইরয়েড হরমোনের জন্মগত সমস্যা বিলম্বিত হয়ে কৈশোরে প্রকাশ পায়। একে বলে লেট অনসেট কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম। আবার কিছু সমস্যা কিশোরকালে নতুনভাবে দেখা দেয়। এর কারণ অনেক রকম হতে পারে। তবে অটোইমিউন থাইরয়েডাইটিস বা অ্যান্টিবডির আক্রমণে থাইরয়েড কোষ ধ্বংস হওয়াই অন্যতম কারণ। এ সমস্যার পেছনে রয়েছে বংশগত ও পরিবেশের সমন্বিত প্রভাব। এ ছাড়া কিছু খাবার, আয়োডিনের ঘাটতি, অন্যান্য রোগ, ওষুধ বা তেজষ্ক্রিয়তার প্রতিক্রিয়া, কোনো কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে ফেললে ইত্যাদি কারণে কৈশোরে থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা হতে পারে।

এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শিশুর হঠাৎ করেই বৃদ্ধি ও বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা বয়স অনুযায়ী সঠিক হারে লম্বা না হওয়া। পাশাপাশি অনেকের ওজন বেড়ে যেতে থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য, চোখ-মুখ ফোলা, চুল পড়া বা ত্বক শুষ্ক হতে পারে। কেউ কেউ দুর্বল বোধ করে, অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, বেশি ঘুমায়, কাজে মনোযোগ ও উদ্যমের অভাব দেখা দেয়। অনেকের যৌবনপ্রাপ্তি বা পিউবারটি বিলম্বিত হয়। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে পিউবারটি আগেভাগেই চলে আসতে পারে। কারও কারও গলার সামনে থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। এ সমস্যাকে গলগন্ড বলে। খুব কম ক্ষেত্রে মাথাব্যথা ও দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

উপরিউক্ত উপসর্গের কোনোটা লক্ষ করলে দ্রুত হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যত আগে চিকিৎসা শুরু করা যায়, ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া ততটাই সহজ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মুখে খাবার থাইরয়েড হরমোন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। বারবার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ওষুধের মাত্রা সমন্বয় করে নিতে হয়। যথাযথ চিকিৎসা পেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়।

ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগবিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল