খাবারের পিরামিড দেখে খাদ্যাভ্যাস

শরীর সুস্থ রাখতে সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, তাপ উৎপাদন করার জন্য ও নিজেদের কর্মক্ষম রাখতে সুষম খাবারের বিকল্প নেই। খাদ্যের প্রধান ছয়টি উপাদান: শর্করা, আমিষ, স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি। এগুলো খাবারের তালিকায় সঠিক অনুপাতে উপস্থিত থাকলে তাকে সুষম খাদ্য বলে। নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সুষম খাদ্যে কোন উপাদান কী রকমভাবে উপস্থিত থাকবে, তা বুঝতে সহজ উপায় হলো খাদ্য পিরামিড দেখে খাওয়া। খাদ্য পিরামিড হলো আমাদের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের ডায়াগ্রাম্যাটিক উপস্থাপনা। আমাদের দেহের জন্য কোন খাদ্য উপাদান কতটুকু অনুপাতে প্রয়োজন, তা নিচ থেকে ওপরে ক্রমান্বয়ে সাজালে এই পিরামিড তৈরি হয়। দৈনিক খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে কি না, তা এই পিরামিড দেখে বোঝা যায়।

সুষম খাদ্য পিরামিডের পাঁচটি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি স্তর দখল করে আছে শর্করা, শাকসবজি ও ফলমূলজাতীয় খাবার। পিরামিডের নিচু স্তরে শর্করাজাতীয় খাদ্য। এর ওপরের স্তরে শাকসবজি ও ফলমূলজাতীয় খাবার। তার ওপরের স্তরে রয়েছে আমিষজাতীয় খাবার। চতুর্থ স্তরে রয়েছে দুগ্ধজাতীয় খাদ্য এবং পঞ্চম স্তরে রয়েছে স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার।

শর্করা: সুষম খাদ্য পিরামিডের নিচের সারিতে অবস্থান শর্করাজাতীয় খাদ্যের। আমাদের দেহে শক্তি জোগানের প্রধান উৎস হলো শর্করা। সাধারণত ভাত, রুটি, মুড়ি, খই, চিড়া, ওটস, আলু, নুডলস ও পাস্তা শর্করার প্রধান উৎস। প্রতিদিন ৬-১১ সার্ভিংস শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে জটিল শর্করা, যেমন গমের আটার রুটি, লাল চাল, ওটস—এগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে।

ভিটামিন ও খনিজ লবণ: সাধারণত শাকসবজি ও ফলমূল ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রধান উৎস। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে এই দুটি খুবই জরুরি। দৈনিক ৩-৫ সার্ভিংস শাকসবজি এবং ২-৪ সার্ভিংস ফলমূল গ্রহণ করা উচিত। খাবার তালিকায় গাঢ় সবুজ শাকসবজি, হলুদ ফলমূল, দেশীয় ফলকে প্রাধান্য দিতে হবে।

আমিষ: মাছ, মাংস, কলিজা, ডিম, ডাল, বাদাম ও বীজজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আমিষ রয়েছে। দেহের বৃদ্ধিসাধনে আমিষের বিকল্প নেই। এর মধ্যে প্রাণিজ আমিষের উৎস মাছ, মাংস, ডিম। এগুলোকে প্রথম শ্রেণির আমিষ বলা হয়। অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ আমিষের উৎস যেমন ডাল, বীজকে দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ বলা হয়। দৈনিক ২-৩ সার্ভিংস আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।

দুধ ও দুধজাতীয় খাবার: দুধ, দই, ছানা, পনির দেহের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আমিষের চাহিদা পূরণ করে। দৈনিক ২-৩ সার্ভিংস দুধ বা দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।

স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার: তেল, ঘি, মাখন, মিষ্টি এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। দৈনিক সামান্য পরিমাণে স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে হেলদি ফ্যাট, যেমন: অলিভ, ক্যানোলা, সানফ্লাওয়ার বা বাদামের তেলকে প্রাধান্য দিতে হবে।

এ ছাড়া দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। খাদ্য পিরামিডের ছবি দেখে আপনি প্রতিদিন কোন ধরনের খাবার কতটুকু খাবেন, কোনটা কম কোনটা বেশি—সে বিষয়ে ধারণা পেতে পারেন।

আগামীকাল পড়ুন: শিশুর টাইফয়েড