গরমে বাড়ছে টাইফয়েড

টাইফয়েডে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের মাত্রা ও মেয়াদ ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করবেন না।

গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে টাইফয়েড জ্বরের প্রকোপ। এতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। অনিরাপদ পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবার টাইফয়েডের জীবাণু ছড়ায়। একটু সচেতন হলেই এ সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।

সালমোনেলা টাইফি নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া টাইফয়েডের জন্য দায়ী। এটি আক্রান্তের মলের মাধ্যমে পরিবেশে ছড়ায় এবং অস্বাস্থ্যকর–অপরিষ্কার খাবার বা হাতের মাধ্যমে অন্যকেও আক্রান্ত করে। সাধারণত রেস্তোরাঁয় অস্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রস্তুত খাবারের মাধ্যমেই মানুষ আক্রান্ত হয়। জীবাণু আক্রান্ত দেহে পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর নানা অঙ্গে আক্রমণ করে। রক্তে ছড়ানোর পর তীব্র জ্বর আসে।

টাইফয়েড হলে উচ্চমাত্রার জ্বর, মাথাব্যথা, প্রচণ্ড দুর্বলতা, ডায়রিয়া, কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকে র‌্যাশ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হলে পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন হৃদ্‌যন্ত্রে ও মস্তিষ্কে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া বা অন্ত্র ছিদ্র। তীব্রতা ও মাত্রার দিক দিয়ে যেকোনো সাধারণ ভাইরাস জ্বরের সঙ্গে এ জ্বরের পার্থক্য আছে। ভাইরাস জ্বর সাধারণত পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়। আর ফ্লু হলে সর্দি–কাশি, নাক বন্ধ ইত্যাদি হয়। টাইফয়েড জ্বর কিছুতেই সারতে চায় না। বরং জ্বরের ঘোরে অনেকে ভুল বকেন। টাইফয়েডেও সামান্য কাশি থাকতে পারে, তবে এটি শুষ্ক ধরনের কাশি।

গ্রীষ্ম ও বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশে টাইফয়েড ও ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বাড়ে। করোনা তো আছেই। এ সময় জ্বর হলে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের কারণে আমাদের দেশে টাইফয়েড অ্যান্টিবায়োটিকরোধী হয়ে পড়ছে আর অনেক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা হারাচ্ছে। তাই রোগ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত নিজে নিজে কোনো ওষুধ খাওয়া চলবে না। টাইফয়েড জ্বর সন্দেহ হলে প্রথম সপ্তাহে রক্ত কালচার করা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। এতে রক্তে সালমোনেলা টাইফির উপস্থিতি নিশ্চিত করা ছাড়াও যথার্থ অ্যান্টিবায়োটিক বেছে নেওয়া সম্ভব হয়। মনে রাখবেন, অন্যান্য রোগের চেয়ে টাইফয়েডে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের মাত্রা ও মেয়াদ ভিন্ন হয়ে থাকে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করবেন না।

অনেক সময় জ্বর সাত দিনের বেশি পার হয়ে গেলে রক্ত কালচার ছাড়া অন্যান্য পরীক্ষার দরকার হয় রোগ শনাক্ত করতে। এ ছাড়া শুরুতেই রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট দেখেও কিছুটা আন্দাজ করা সম্ভব যে জ্বরটি টাইফয়েড না ডেঙ্গু। মহামারি অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত জ্বর হলে এ সময় কোভিড টেস্ট করাও উচিত।

এ সময় টাইফয়েড প্রতিরোধ করতে হলে সতর্ক থাকতে হবে। শৌচাগার ব্যবহারের পর, খাবার প্রস্তুত বা পরিবেশনের আগে এবং খাওয়ার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। অপরিষ্কার জায়গার খাবার খাবেন না। বিশুদ্ধ ও ফোটানো পানি পান করতে হবে। কাঁচা শাকসবজি, ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। বাইরের খোলা শরবত, পানি, জুস ইত্যাদি কিছুতেই খাবেন না।