ঘরেই থাকুক ঔষধি গাছ

ঘরের সৌন্দর্যবর্ধনে অনেকেই নানা ধরনের ইনডোর প্ল্যান্ট রাখেন ঘরের ভেতর, বারান্দা বা বাসার ছাদে। এই ইনডোর প্ল্যান্টের জায়গায় রাখা যায় কিছু দেশীয় ঔষধি গাছ। যেগুলো দেখতেও যেমন সুন্দর, তেমনি ঔষধি গুণসম্পন্ন, কার্যকর।

অ্যালোভেরাছবি: উইকিপিডিয়া

ধরুন, হঠাৎই সর্দি-কাশি শুরু হলো। যদি প্রাকৃতিক উপায়ে সুস্থ হতে চান, তবে তুলসী পাতা ও আদার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন, নিমেষেই দূর হবে সর্দি-কাশি। এমন অসংখ্য ঔষধি গাছ রয়েছে আমাদের চারপাশে, যা ব্যবহার করে আমরা দেহ-মনকে রাখতে পারি সতেজ ও রোগমুক্ত। কিন্তু এই শহুরে জীবনে এমন ঔষধি গাছ হাতের কাছে পাওয়া মোটেই সহজ বিষয় নয়। আর বাজারে সাধারণত এ ধরনের গাছের উপকরণও পাওয়া যায় না। সে জন্য আছে সহজ সমাধানও। অতি প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধি গাছ চাইলে আপনি বাসার ছাদে বা বারান্দার টবেও সহজেই লাগাতে পারেন। আবার কখনো কখনো সৌন্দর্যবর্ধনকারী হিসেবেও বাসার ভেতর রাখতে পারেন এসব ঔষধি গাছ।

তুলসী

তুলসীর রয়েছে হাজারো ‍গুণ
ছবি: উইকিপিডিয়া

হাজারো গুণসম্পন্ন এবং বহুল পরিচিত একটি ঔষধি গাছ তুলসী। তুলসীর ফুল, পাতা, কাণ্ড ও মূল আদিকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ও ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সর্দি-কাশি থেকে মুক্ত থাকতে, হাঁপানির সমস্যা নিরসনে, লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে, উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে তুলসীর কার্যকারিতার তুলনা চলে না। তুলসী ব্যথানাশক ও স্মৃতিবর্ধক উদ্ভিদ। ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ ও বয়সের বলিরেখা দূর করতে তুলসী পাতার পেস্ট লাগাতে পারেন। আরেকটি তথ্য জেনে রাখা ভালো, তুলসী গাছ কিন্তু ২৪ ঘণ্টাই অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। বারান্দায় বা ছাদে ড্রামে কিংবা টবে একটি তুলসীর চারা রাখতে ক্ষতি কী!

পুদিনা

পুদিনার রোজমেরিক অ্যাসিড হাঁপানি দূর করে
ছবি: উইকিপিডিয়া

প্রাচীনকাল থেকে পুদিনা পাতা ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পুদিনার রোজমেরিক অ্যাসিড হাঁপানি দূর করে। এর মনোটারপিন নামক উপাদান স্তন, লিভার, অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার রোধ করে। পুদিনা পাতার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস পেটের সমস্যা উপশমে দারুণ কার্যকরী। চুলে উকুন হলে পুদিনাগাছের শিকড়ের রস চুলে লাগালে সমাধান পাওয়া যায়। অ্যালার্জি, ত্বকের সংক্রমণ এবং ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে পুদিনা পাতা ভেজানো পানিতে গোসল করলে উপকার পাবেন। লতানো এই উদ্ভিদ খুব সহজে লাগাতে পারেন ঘরেই।

থানকুনি

ঔষধি গুণে ভরা থানকুনি
ছবি: উইকিপিডিয়া

বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত একটি ঔষধি উদ্ভিদ থানকুনি। গোলপাতার থানকুনি দেখতেও মনোরম। ঔষধি গুণে ভরা থানকুনি একটা সময় গ্রামে অহরহ দেখা মিলত। ঘরে যদি থানকুনি থাকে, তবে তৎক্ষণাৎ আপনি সাধারণ যেকোনো পেটের পীড়া থেকে মুক্তি পেতে পারেন। থানকুনি পাতা হজমশক্তি বাড়ায়, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চুল পড়া রোধ করে, শরীরে রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে, আলসারের নিরাময় করে, মানসিক অবসাদ কমায়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ঘুমের সমস্যা দূর করে, দ্রুত ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং শরীর ডিটক্সিফিকেশন করে।

পাথরকুচি

চ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মূত্রথলির সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে পাথরকুচি
ছবি: উইকিপিডিয়া

পাতা থেকেই জন্ম নেওয়া ঔষধি গুণসমৃদ্ধ এক অদ্ভুত উদ্ভিদের নাম পাথরকুচি। বাসায় যে কেউ চাইলে টবে লাগাতে পারেন পাথরকুচি। দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি গুণেও ভরা এই পাতা দিয়ে সারানো যায় নানা অসুখ। কলেরা, ডায়রিয়া বা রক্ত আমাশয় সারাতে পাথরকুচির জুড়ি নেই। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং মূত্রথলির সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে পাথরকুচি। শরীর জ্বালাপোড়া কমাতে, শিশুদের পেটব্যথা সারাতে, মৃগীরোগের উপশমে ও সর্দিতে পাথরকুচি ব্যবহৃত হয়। ত্বকের অ্যালার্জির সমস্যায় পাথরকুচি পাতা বেটে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

গাঁদা

গাঁদা নানা ঔষধি হিসাবে নানা কাজে লাগে
ছবি: উইকিপিডিয়া

হলুদ রঙের আকর্ষণীয় ফুল গাঁদা। অনেকেরই প্রিয়। বাসার বাগানে বা টবে লাগানো যায় এমন সহজলভ্য ফুলের মধ্যে গাঁদা অন্যতম। গাঁদা ফুলের ঔষধি গুণ জানা থাকলে অবাকই হবেন। গাঁদা ফুলের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভনয়েড উপাদান মানবদেহের ক্যানসার কোষ বৃদ্ধি প্রতিহত করতে ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম। শরীরের কোথাও কেটে গেলে গাঁদা পাতার রস লাগালে রক্ত পড়া বন্ধ হবে। গাঁদা ফুল বেটে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহারে খুশকি দূর হয়। গাঁদা ফুল রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয়, মুখে দুর্গন্ধ দূর হয়। ত্বক মসৃণ ও ব্রণমুক্ত করতে, হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে, হাড়ের ক্ষয়রোধ ও আর্থ্রাইটিসের সমস্যা দূর করতে নিয়মিত গাঁদা ফুলের চা পান করলে উপকার পাবেন।

জবা

জবারও আছে বেশ কিছু ঔষধি গুণ
ছবি: উইকিপিডিয়া

সৌন্দর্যগুণের পাশাপাশি জবা ফুলের আছে বেশ কিছু ঔষধি গুণও। বাসার ছাদে বা বারান্দার টবে জবা ফুল লাগিয়ে থাকেন অনেকে। জেনে নিই জবার কিছু গুণাগুণ। সাধারণ চর্মরোগে বা হাতের তালুর শুকনো চামড়া ওঠা সারাতে লাল জবা তালুতে ঘষলে সেরে যায়। অতিরিক্ত খাওয়ার পর অস্বস্তি কিংবা বমি বমি ভাব দূর করতে জবা ফুল বেটে শরবত করে খেলে অস্বস্তি দূর হবে। নারীদের অনিয়মিত মাসিক ও অতিস্রাবের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ও ত্বকের ফাঙাল ইনফেকশন কাটাতে জবার তুলনা নেই।

অ্যালোভেরা

প্রাকৃতিক ওষুধ অ্যালোভেরা হিসেবে তুলনাহীন
ছবি: উইকিপিডিয়া

নানান ভেষজগুণসম্পন্ন অ্যালোভেরা প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে তুলনাহীন। অ্যালোভেরায় রয়েছে ল্যাকটিন, মেনাস এবং পলিস্যাকারাইডের মতো উপাদান, যা আপনার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার উপশম করতে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে বেশ উপকারী। আগুনে পুড়ে যাওয়া স্থানে অ্যালোভেরার রস লাগালে আরাম পাওয়া যায়। এর আঠালো রস দ্রুত ক্ষতস্থান শুকাতেও দারুণ কার্যকরী। রক্তের শ্বেতকণিকা গঠনে সহায়তা করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং শরীরের ক্ষতিকারক বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে এর রসের জুড়ি নেই। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে অ্যালোভেরার শরবত। পাশাপাশি হজমের সমস্যায়, পাকস্থলীর প্রদাহ, অস্বাভাবিক ঋতুসমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ নানান শারীরিক সমস্যায় অ্যালোভেরা দিতে পারে উপশম। যে কেউ চাইলেই বাসার ছাদে বা বারান্দায় ছোট টবে কয়েকটি অ্যালোভেরার চারা রাখতেই পারেন। এতে প্রাকৃতিক ওষুধের প্রয়োজন যেমন মিটবে, তেমনি বাড়বে অন্দরের সৌন্দর্যও।