চুল পড়া যখন চিন্তার কারণ

যত্ন নিলেই বন্ধ হতে পারে চুল পড়া। মডেল: অমৃতা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

চুল পড়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা। নারী-পুরুষ উভয়ই এ সমস্যা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভোগে। তবে অল্পমাত্রার চুল পড়া স্বাভাবিক। মাত্রাতিরিক্ত চুল পড়লে এবং বিষয়টি টাকের পর্যায়ে চলে গেলে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমেই জানা প্রয়োজন ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অংশ। চুল আঁচড়ানোর সময় চিরুনিতে চুল দেখেই আঁতকে ওঠার কোনো দরকার নেই। চুল প্রতি মাসে আধা ইঞ্চি করে বড় হয়। স্বাভাবিকভাবে একটি চুল দুই থেকে চার বছর পর্যন্ত বড় হতে থাকে। এরপর বৃদ্ধি কমে যায়। সাধারণত সবার ক্ষেত্রেই খুশকি বড় সমস্যা।

প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টা পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক। এর চেয়ে বেশি পড়লে তা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ। বালিশ, তোয়ালে বা চিরুনিতে লেগে থাকা চুল গুনতে চেষ্টা করুন। অন্তত পরপর তিন দিন। অথবা অল্প একগোছা চুল হাতে নিয়ে হালকা টান দিন। যদি গোছার চার ভাগের এক ভাগ চুলই উঠে আসে, তবে তা চিন্তার বিষয়।

কী কারণ
অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন নারীর চুল পড়া ও পুরুষের টাকের সবচেয়ে বড় কারণ। এই হরমোন সাধারণত পুরুষের শরীরে বেশি পরিমাণে থাকে। যাদের শরীরে এই হরমোনের প্রভাব বেশি, তাদেরই বেশি করে চুল পড়ে। নারীর মেনোপজের সময় ও পরে অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন আনুপাতিক হারে বেড়ে যায়। তখন হঠাৎ চুল বেশি করে পড়তে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি করণীয় থাকে না। তবে সমস্যা বেশি মনে করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

চুল পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে, চুল পড়া বেড়ে যাবে। মডেল: সারা ও আশা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ছত্রাকের সংক্রমণ বা খুশকি হলো চুল পড়ার অন্যতম কারণ। তাই চুল ভেজা রাখা যাবে না। প্রয়োজনে ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। ছত্রাকরোধী শ্যাম্পু ব্যবহারকালে অন্য শ্যাম্পু ব্যবহারের কোনো প্রয়োজন নেই। শ্যাম্পু সপ্তাহে কয়বার বা কত দিন ব্যবহার করতে হবে, তা নির্ভর করে খুশকির তীব্রতার ওপর। ওষুধও খেতে হতে পারে। সংক্রমণ ভালো হয়ে গেলে চুল আবার গজায়।

শরীরের পুষ্টির ওপর চুলের স্বাস্থ্য নির্ভর করে। দৈনিক খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, খনিজ ও ভিটামিন পরিমিত পরিমাণে না থাকলে চুল পড়ে যায়। এ ছাড়া শরীরে দীর্ঘদিন কোনো একটি উপাদানের অভাবে চুল পড়ে যায়। আবার যাঁরা না খেয়ে অতিরিক্ত ডায়েট করেন, তাঁদেরও পুষ্টিহীনতা হয়ে চুল অতিরিক্ত পড়তে পারে। তাঁদের প্রত্যেকের উচিত নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া।

দুশ্চিন্তায় ভুগলে বা মানসিক সমস্যা থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়তে পারে।
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

দুশ্চিন্তায় ভুগলে বা মানসিক সমস্যা থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চুল পড়তে পারে। তবে এ চুল পড়া সাময়িক এবং পুনরায় চুল গজায়। দীর্ঘদিন মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকলে বা দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে অনেক বেশি চুল পড়ে যেতে পারে।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বেশি বেশি চুল পড়তে পারে। তবে এটা সাময়িক। পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানীয় পান করলে ধীরে ধীরে এই চুল পড়া স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
অ্যান্ড্রোজেনিক হরমোন ছাড়াও থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম বা বেশি হলে, গর্ভাবস্থায় এবং বাচ্চার জন্মের পর মায়ের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হয় বলে তখন চুল বেশি পড়ে। হরমোনের এ পরিবর্তন আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেলে পুনরায় চুল গজায়।

ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপি দেওয়ার পর চুল উঠে যায়। কেমোথেরাপির প্রথম ডোজ দেওয়ার দু-তিন সপ্তাহ পর চুল পড়ে এবং সর্বশেষ ডোজের তিন থেকে চার মাস পর পুনরায় চুল গজানো শুরু হয়।

চুলের বিশেষ কোনো স্টাইলের জন্য যদি দীর্ঘদিন খুব টেনে চুল বাঁধা হয় বা টাইট করে খোঁপা বা ব্যান্ড করা হয়, তবে এ ধরনের চুল পড়া শুরু হতে পারে। খুব বেশি পরিমাণে চুল রঙিন করার প্রসাধন, চুল সোজা করা বা ক্রমাগত রিবন্ডিং করলে চুল পড়ার হার বেড়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে আবার চুল ওঠে, কিংবা অনেক সময় হেয়ার ফলিকলের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে গেলে চুল আবার না-ও গজাতে পারে।

পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত যত্নও নিতে হবে চুলের
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

কিছু অসুখে, যেমন অ্যানিমিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, ডায়াবেটিস ইত্যাদিতে চুল পড়ে যেতে পারে। অনেক সময় অসুখ ভালো হওয়ার পরও চুল আর আগের অবস্থায় ফেরে না। তাই অসুখের সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে।

চুল পরিষ্কার রাখতে হবে, নিয়মিত পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবেই চুল পড়া রোধ বা কমানো সম্ভব।

অধ্যাপক ডা. মাসুদা খাতুন
চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল