জরুরি চিকিৎসাসেবায় অ্যাম্বুলেন্স কীভাবে এল
‘কী যে হলো, ক’দিনেই এমন বেহাল।
অ্যাম্বুলেন্স আসেনি এখনো। প্লিজ টেলিফোন করো আবার।’
পঙ্ক্তিগুলো কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতার। এতে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাতে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষার চিত্র ফুটে উঠেছে। সত্যিই জরুরি চিকিৎসাসেবায় অ্যাম্বুলেন্স জরুরি একটি বাহন। বিশেষ করে সংকটাপন্ন কোনো রোগীকে যথাসম্ভব কম সময়ে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য এর বিকল্প নেই।
আম্বুলেন্স মানে সামনে এগোনো
ল্যাটিন শব্দ ‘অ্যাম্বুলারে’ থেকে ফরাসি ‘অ্যাম্বুলঁ’ শব্দটির জন্ম। এই শব্দ থেকে এসেছে ইংরেজি অ্যাম্বুলেন্স। অর্থ হাঁটা বা সামনে এগোনো। এটি দিয়ে মূলত ‘চলমান হাসপাতাল’ বোঝানো হতো।
অ্যাম্বুলেন্সের আদিকথা
হাসপাতাল–পূর্ব জরুরি চিকিৎসাসেবার অংশ হিসেবে সৃষ্টি হয় অ্যাম্বুলেন্সের ধারণা। তবে ধারণাটি যথেষ্টই প্রাচীন। ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে প্রথম অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবহারের কথা জানা যায়। চট বা দড়ি দিয়ে নির্মিত দোলনাসদৃশ বিছানা ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে যুক্ত করে বানানো হয়েছিল প্রথম অ্যাম্বুলেন্স। এটি অ্যাংলো-স্যাক্সন সময়ের কথা। এরপর একাদশ শতকে ক্রুসেডের সময় যুদ্ধাহত সৈনিকদের হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয় বলে জানা যায়।
অ্যাম্বুলেন্সের বিবর্তন
অ্যাম্বুলেন্সের বিবর্তন প্রক্রিয়ায় ১৪৮৭ খ্রিষ্টাব্দ খুব গুরুত্বপূর্ণ। রানি ইসাবেলার শাসনামলের এই সময়ে স্পেনে প্রথমবারের মতো বিস্তৃতভাবে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবহার শুরু হয়।
এর বেশ কিছুকাল পরের কথা। একজন ফরাসি শল্যবিদ ও সামরিক চিকিৎসক অ্যাম্বুলেন্সের উন্নয়নে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করেন। ভদ্রলোকের নাম ডমিনিক জ্যঁ ল্যারি। তিনি সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপার্টের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর হাত ধরে অ্যাম্বুলেন্সের নির্মাণ ও ব্যবহারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। অ্যাম্বুলেন্সের আকার বড় করেন তিনি। দুই চাকার অ্যাম্বুলেন্সে শুরু হয় চার চাকার ব্যবহার।
অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার সার্বিক ব্যবস্থা করেন ল্যারি।
এরপর একসময় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছায় এই সেবা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাসপাতালকেন্দ্রিক অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু হয় ১৮৬৫ সালে, যুক্তরাষ্ট্রে। তবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা জনগণের জন্য কাছে পৌঁছানোর গুরুত্বপূর্ণ কৃতিত্ব আয়ারল্যান্ডের রয়্যাল ডাবলিন সোসাইটির। প্রতিষ্ঠানটি ১৯১০ সালে সর্বসাধারণের জন্য এই সেবার ব্যবস্থা করে।
এরপর ধীরে ধীরে সময় গড়িয়েছে। সভ্যতা এগিয়েছে। ক্ষমতা বেড়েছে মানুষের। যুদ্ধ কিংবা মহামারিতে জরুরি চিকিৎসাসেবার দরকারও হয়েছে যুগে যুগে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়েছে এ বাহনটি। সড়ক, নৌ কিংবা আকাশপথ—সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত নানা ধরনের অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে এখন।