শরীরের বিভিন্ন জায়গার ব্যথায় সেঁক দেওয়ার পদ্ধতি বহু পুরোনো, বিজ্ঞানসম্মত এবং পরীক্ষিত। সেঁক সাধারণত দুই ধরনের হয়। গরম সেঁক এবং ঠান্ডা সেঁক। কিন্তু কখন গরম সেঁক বা ঠান্ডা সেঁক দিতে হবে, কোনটাতে কী উপকার, তা নিয়ে অনেকেই নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। তাই গরম এবং ঠান্ডা সেঁক নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা অনুযায়ী নিতে হবে।
গরম সেঁক
দীর্ঘদিনের ব্যথা, বাতের ব্যথা, মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, জয়েন্ট বা লিগামেন্ট শক্ত হয়ে যাওয়া, কোমর ও ঘাড়ের দীর্ঘমেয়াদি কোনো ব্যথা বা আঘাত, টেন্ডনে আঘাতজনিত ব্যথায় গরম সেঁক খুবই কার্যকরী। যখন মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে গরম সেঁক দেওয়া হয়, তখন রক্তনালি প্রসারিত হয় ও রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এর ফলে আক্রান্ত স্থানে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ বেড়ে যায়। সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচল হয় বলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ব্যথা কমে এবং আরাম বোধ হয়।
গরম সেঁক যেভাবে দিতে হয়
হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ভরে সেঁক দিতে পারেন। তবে এ বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। কারণ, অনেক সময় ব্যাগ ফেটে বা অসাবধানতায় কর্ক খুলে দুর্ঘটনা হতে পারে। ডায়াবেটিস ও স্নায়ুর রোগীদের অনুভূতি কম থাকে বলে অতিরিক্ত গরমে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। গরম পানির ব্যাগ দিয়ে দিনে তিনবেলা ১৫-২০ মিনিট করে সেঁক দিতে পারেন।
কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে বা গামছা ভিজিয়ে নিন। এরপর এটি নিংড়িয়ে যে গরম ভাপটি থাকবে, তা ব্যথার স্থানে ১৫-২০ মিনিট করে দিনে ৩-৪ বেলা দিতে পারেন।
দিনের শুরুতে গরম পানিতে দীর্ঘ সময় ধরে গোসল করলেও উপকার পাবেন। এতে বাত রোগীদের সকালবেলায় স্টিফনেস বা জড়তা অনেকটাই দূর হয়। গোসলের পানির তাপমাত্রা ৯২-১০০ ফারেনহাইট হওয়া উচিত। যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা হাঁটতে বের হন, তাঁরা ব্যায়ামের আগে গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। এতে সন্ধি ও মাংসপেশি রিলাক্স হবে এবং আঘাতের ঝুঁকি কমবে।
যেসব রোগী বাত বা আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, তাঁরা সুইমিংপুলে হালকা গরম পানিতে সাঁতার কাটতে পারেন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩-৪ দিন। একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু থেরাপোটিক ব্যায়াম করতে পারেন।
যেসব ক্ষেত্রে গরম সেঁক উপযোগী নয়
যদি ত্বক গরম, লালচে হয়ে যায় বা ত্বকে কোনো প্রদাহ থাকে।
যাদের চর্মরোগ বা কোনো খোলা আঘাত থাকে।
শরীরের এমন কোনো জায়গা, যেখানে বোধশক্তি নেই।
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির কারণে যেসব ব্যক্তি তাপের প্রতি অসহনীয়।
উচ্চ রক্তচাপ অথবা যাদের হৃৎপিণ্ডে কোনো রোগ রয়েছে।
ঠান্ডা সেঁক
আচমকা (৪৮ ঘণ্টার মধ্যে) যেকোনো আঘাত পেলে, গেঁটে বাত, মাইগ্রেনজনিত মাথাব্যথা, মচকে যাওয়া কিংবা খেলার সময় প্রাপ্ত আঘাততে কোল্ড কমপ্রেশন বা ঠান্ডা সেঁক কাজে আসে। যখন মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে ঠান্ডা সেঁক দেওয়া হয়, তখন রক্ত চলাচল হ্রাস পায়। এর ফলে আক্রান্ত স্থানে ফোলা ও প্রদাহ অনেকাংশে কমে যায়। ফলে সংশ্লিষ্ট জায়গায় ব্যথা কমে যায় এবং আরাম বোধ হয়।
যেভাবে ঠান্ডা সেঁক দিতে হয়
প্যাকে জেল নিয়ে ঠান্ডা করে তা আক্রান্ত স্থানে ৪-৬ ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট করে ঠান্ডা সেঁক দিতে পারেন। এটি ৩ দিন পর্যন্ত বেশ কার্যকরী ফল দেয়।
ঠান্ডা পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে তা ব্যথা বা আক্রান্ত স্থানে দিতে পারেন।
একটি নরম কাপড়ে বরফের টুকরা বা প্যাক নিয়ে আক্রান্ত স্থানে ৫ মিনিট বৃত্তাকারে ম্যাসাজ বা মালিশ করুন। এটি দিনে ২-৫ বেলা পর্যন্ত করতে পারেন। কখনো বরফ সরাসরি ত্বকের ওপর ম্যাসাজ করবেন না এবং খুব বেশি সময় (৫-১০ মিনিটের বেশি) করবেন না।
ঠান্ডা সেঁক নেওয়ার সময় সাবধান
কখনো সরাসরি ত্বকের ওপর বরফ মালিশ করবেন না। এতে আইস বার্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কখনো একই জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বরফ মালিশ করবেন না। এতে ফ্রোস্ট বাইট আশঙ্কা বেশি থাকে।
খুব জটিল কোনো আঘাতে ঠান্ডা সেঁক দেবেন না। এতে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।
ডায়াবেটিস, রেনোডস সিনড্রোমের কারণে যদি শরীরের কোনো স্থানে স্নায়ুর সংবেদনশীলতা কমে যায় বা আগে থেকেই রক্তনালিতে রক্ত চলাচল কম থাকে, তবে সেখানে বরফ ম্যাসাজ করবেন না।
মেরুদণ্ডের হাড়যুক্ত স্থানে সরাসরি বরফ মালিশ করবেন না।
যাঁদের কোনো খোলা আঘাত বা ব্লিস্টার ত্বক রয়েছে, সেখানে কোনো ঠান্ডা সেঁক দেবেন না।
যাঁদের ঠান্ডার প্রতি সংবেদনশীলতা বেশি, তাঁরা ঠান্ডা সেঁক দেবেন না।
যাঁদের রক্ত সঞ্চালনজনিত সমস্যা রয়েছে, তাঁরাও ঠান্ডা সেঁক দেবেন না।