পাঠকের প্রশ্ন
ডিভোর্স দিলে নারী নির্যাতনের মামলা করবে
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: ৬ মাস হলো বিয়ে করেছি। দুই পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে মেয়ে তার বাপের বাড়িতে আছে। আমার বাসায় এখনো একবারও আসেনি। এক বছর পর নিয়ে আসার কথা রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে মেয়ে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। আমাকে অবহেলা করে। যেকোনো বিষয়ে প্রচণ্ড জেদ করে। আমার এসব ভালো লাগে না। সেটা তাকে (স্ত্রীকে) ভালোভাবে বুঝিয়েও বলেছি, কিন্তু সে শোনে না। শ্বশুরবাড়িতে অভিভাবকদের জানালে তাঁরাও মেয়ের পক্ষ নিতেন। তাঁরা বলতেন ‘মেয়েকে কিছু বলবা না।’ মেয়েটির সঙ্গে কথা বলেও শান্তি পেতাম না। তাই পরে বলে দিই যে আমি ডিভোর্স চাই। ডিভোর্সের কথা শুনে ওর পরিবার থেকে সুর পাল্টে যায়, বলে, মেয়ে ভালো হয়ে যাবে। মেয়েটি নিজেও ক্ষমা চাইতে থাকে। কিন্তু আমার মন ভেঙে গেছে। একপর্যায়ে ওরা হুমকি দেয় যে ডিভোর্স দিলে নারী নির্যাতনের মামলা করে দেবে। আমার পরিবারও তাই আমাকে বলে ডিভোর্স না দিতে। আমার বিয়ের কাগজপত্র মেয়ের বাড়িতে। আমি চাইলেও দেয় না। সবার অনুরোধে এখন আমি কথা বলতে রাজি হয়েছি, তবে মেয়েটিকে আমার ভালো লাগে না। বুঝতে পারছি, ওর সঙ্গে সংসারজীবনে কখনো সুখী হতে পারব না। তাহলে এখন আমার করণীয় কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনি প্রথমে আপনার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যাটির সমাধান করার চেষ্টা করুন। আলোচনার মাধ্যমে যদি সমস্যার সমাধান না হয় এবং আপনি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন, সে ক্ষেত্রে একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন। আপনার স্ত্রী যদি বিবাহবিচ্ছেদে রাজি না থাকেন, সে ক্ষেত্রে আইনগতভাবে আপনার তরফ থেকে তালাক দিতে কোনো বাধা নেই।
আপনি জানিয়েছেন, ডিভোর্সের কথা শুনে আপনার স্ত্রী আপনার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত)-এর ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কারও ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনের অন্য কোনো ধারার অধীন মামলা বা অভিযোগ করার জন্য ন্যায্য বা আইনানুগ কারণ নেই জেনেও মামলা বা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তি সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
তা ছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধি ২৫০ ধারায় মিথ্যা মামলার শাস্তির বিধান রয়েছে। ২৫০ ধারায় বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেট যদি আসামিকে খালাস দেওয়ার সময় প্রমাণ পান যে মামলাটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক, তাহলে বাদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশসহ ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। দণ্ডবিধির ১৯১ ধারা থেকে ১৯৬ ধারা পর্যন্ত মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মিথ্যা সাক্ষ্য সৃষ্টি এবং মিথ্যা সাক্ষ্যদানের শাস্তি সম্পর্কে বলা আছে।
যেহেতু আপনার স্ত্রী আপনাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, সে ক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে নিকটস্থ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা।
আপনি জানিয়েছেন, বিয়ের কাগজপত্র আপনার কাছে নেই। যেই কাজি অফিসের অধীনে আপনার বিয়ে হয়েছে, সেখান থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে কাবিননামা তুলতে পারবেন। এরপর আইন-নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আপনার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতে পারবেন।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ই-মেইল: adhuna@prothomalo.com, ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA খামের ওপর ও ই-মেইলের subject–এ লিখুন ‘মনের বাক্স’