ঢ্যাঁড়সের যত গুণ

এখন বর্ষাকাল। বাজারে গেলে নানান রকম শাক আর সবজির ভিড়ে ঢ্যাঁড়স আপনার চোখে পড়বেই। আমাদের অতিপরিচিত সবজিটির ইংরেজি নাম ওকরা হলেও একে অনেকেই লেডিস ফিঙ্গারও বলে থাকেন। মেয়েদের হাতের আঙুলের মতো গঠন বলেই হয়তো এই নাম। ধারণা করা হয়, ঢ্যাঁড়সের আদি উৎস সুদূর আফ্রিকা মহাদেশের ইথিওপিয়ায়। পরে ধীরে ধীরে তা আরব হয়ে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোসহ ইউরোপ এবং অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশসহ অন্যান্য দক্ষিণ এশীয় দেশে ঢ্যাঁড়সকে অনেকে ভেন্ডি বা ভিন্ডি বলেও চেনেন। ঢ্যাঁড়স বা ভেন্ডি যে নামেই ডাকা হোক না কেন, অতি সাধারণ সবজিটি যে অসাধারণ পুষ্টিগুণের আধার, সে কথা আমরা কজন জানি?

ঢ্যাঁড়সে রয়েছে ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান। নিয়মিত ঢ্যাঁড়স খেলে তা নানাভাবে আমাদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।

রক্তে চিনির মাত্রা এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ঢ্যাঁড়সে উপস্থিত ফাইবার বা আঁশ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ ওয়ান, টাইপ টু এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ঢ্যাঁড়স কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

অ্যান্টি–অক্সিড্যান্টে ভরপুর

ঢ্যাঁড়সে রয়েছে পলিফেনলের মতো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, রয়েছে ভিটামিন সি। এগুলো আমাদের কোষের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যালকে প্রতিহত করে। এ ছাড়া এতে রয়েছে লেকটিন নামের প্রোটিন, যা মানবদেহে ক্যানসার সেল বেড়ে উঠতে বাধা দেয়।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়

ঢ্যাঁড়সের ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি–অক্সিড্যান্ট মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এ ছাড়া এতে উপস্থিত বিভিন্ন খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি ও দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

ঢ্যাঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা ভাব বজায় থাকে এবং ক্ষুধা লাগে না। এটি হজমেও দারুণ সহায়ক। তা ছাড়া এতে ক্যালরির পরিমাণ খুবই সামান্য। তাই যাঁরা ওজন কমাতে চাচ্ছেন, তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ঢ্যাঁড়স রাখতে পারেন।

হৃৎপিণ্ড এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

ঢ্যাঁড়সে উপস্থিত পলিফেনল রক্ত জমাট বাঁধা এবং ফ্রি র‍্যাডিক্যাল ড্যামেজ প্রতিহত করে হৃৎপিণ্ডের জটিলতা এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। তা ছাড়া ঢ্যাঁড়সের অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের প্রদাহ কমিয়ে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের বড় শত্রু কোলেস্টেরল। ঢ্যাঁড়সের মিউসিলেজ নামের উপাদানটি হজমের সময় কোলেস্টেরলের সঙ্গে মিশে গিয়ে একে দেহ থেকে বের হয়ে যেতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় উপকারী

ঢ্যাঁড়সে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, যা গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। গর্ভাবস্থায় খাদ্যতালিকায় ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার শিশুর নিউরাল টিউব ডিফেক্টস (এনটিডি) প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। নিউরাল টিউব ডিফেক্টসের ফলে জন্মের সময়ে শিশুর মেরুদণ্ডের সমস্যা বা মস্তিষ্কের জটিলতা দেখা দেয়।

হজমে সাহায্য করে

ঢ্যাঁড়স আঁশ এবং পেকটিনসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হজমে দারুণভাবে সাহায্য করে। হজম ভালো হওয়ায় বিপাকও হয় নির্বিঘ্ন। নিয়মিত ঢ্যাঁড়স খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।

কীভাবে খাবেন?

ঢ্যাঁড়স নানাভাবে খাওয়া যেতে পারে। ভর্তা, ভাজি, ঝোলের তরকারি ইত্যাদি। তবে অল্প তেল এবং অল্প মসলায় রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় কম। ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়েটে ঢ্যাঁড়স অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হলেও যাঁদের ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা আছে, তাঁদের নিয়মিত ঢ্যাঁড়স খাওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে পরিমাণ কতটুকু হবে, তা জেনে নেওয়া ভালো।

ছবি: পেকজেলসডটকম ও উইকিপিডিয়া