নতুন মা, নতুন অভিজ্ঞতা

অধ্যাপক শাহলা খাতুন
অধ্যাপক শাহলা খাতুন

প্রথমবার মা হওয়ার ঘটনা একটি অতুলনীয় অভিজ্ঞতা। বিপদের হাতছানি, প্রসবের ব্যথা ও মাতৃত্বের আনন্দে ভরা। তবে গর্ভাবস্থার পুরোটা সময় একজন নারী ধাপে ধাপে শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপূর্ণ, পরিপক্ব হয়ে ওঠেন। আর এই অভিজ্ঞতা তাঁকে ও তাঁর জীবনকে শেষ অবধি অনেকটাই পাল্টে দেয়। তবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার অনেক আগে থেকেই কিন্তু একজন নারী মা হয়ে উঠতে থাকেন। সে প্রক্রিয়া শুরু হয়, ঠিক যখন তিনি মা হওয়ার পরিকল্পনা করেন, তখন থেকেই। এই মাতৃত্বের পরিকল্পনা, সন্তানলাভের বিভিন্ন ধাপ আর চূড়ান্ত মুহূর্ত—সবকিছুই হওয়া চাই বিজ্ঞানসম্মত, সুন্দর ও যথাসম্ভব জটিলতামুক্ত।
নতুন যুগের মা: আগেকার যুগে একজন নারীর মা হওয়ার সময় পাশে থাকতেন তাঁর মা, শাশুড়ি, খালা-ফুপুসহ মুরব্বিরা। তাঁদের সব উপদেশ বিজ্ঞানসম্মত না হলেও যুগ যুগের অভিজ্ঞতার মিশেল ছিল তাতে। এখনকার চিত্রটা ভিন্ন। বিশেষ করে শহুরে আধুনিক তরুণীকে প্রায়ই এই বিপৎসংকুল সময় পাড়ি দিতে হয় একা। কেউ আবার চাকরিজীবী, সকালে উঠেই নাজুক শরীরটা নিয়ে তাঁকে ছুটতে হয় অফিসে। যেহেতু শহুরে নারীরা সাধারণত একাকী, তাই মা হওয়ার আগেই তাঁদের জেনে নেওয়া উচিত নিজের শরীর, এর পরিবর্তন ও যত্ন-আত্তি বিষয়ে। প্রথমেই বুঝতে হবে, গর্ভাবস্থা কোনো শারীরিক সমস্যা নয়, এটা একজন নারীর জীবনের স্বাভাবিক পর্যায়। এ নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
মা হওয়ার টুকটাক: প্রথম প্রথম সকালে ঘুম থেকে উঠেই বমি আসে, কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। ছোটখাটো কিছু অভ্যাসের পরিবর্তনই এই সমস্যা কমায়। যেমন সকালে দাঁত ব্রাশ না করেই শুকনো কিছু খাবার মুখে দেওয়া, সকালবেলা তেল-মসলাযুক্ত খাবার, ডিম ইত্যাদি এড়িয়ে চলা। তিন মাস পর এটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। গর্ভাবস্থায় পেটে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যাও বাড়ে। এ জন্য বাইরের খাবার ও ভাজা-পোড়া কম, কিন্তু আমিষযুক্ত পুষ্টিকর খাবার বেশি খেতে হবে। অনেকের পা ফুলে যায়, এতেও ভয়ের কিছু নেই। তবে চিকিৎসককে সমস্যাটা জানান, রক্তচাপ বেশি কি না, রক্তশূন্যতা আছে কি না, তিনি দেখে নেবেন। কোমরে ব্যথা, পা কামড়ানো খুবই পরিচিত সমস্যা। এ জন্য দুধ ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে এবং বসা-শোয়ার ভঙ্গি পাল্টাতে হবে। সময়মতো চিকিৎসকের কাছে চেকআপে যাবেন, টিকাগুলো নেবেন।
মা হওয়ার সেরা অভিজ্ঞতা: গর্ভকালে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, প্রস্রাবে সংক্রমণ, রক্তশূন্যতা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। এগুলোর যথাযথ চিকিৎসা নিন। চিকিৎসকের উপদেশ মেনে চলুন। অবসর সময়ে সুন্দর সময় কাটান, বই পড়ে, গান শুনে, প্রার্থনা করে—যাতে মানসিক চাপ কমে। অনেকের মানসিক বিপর্যয় ঘটে, বিষণ্নতা বা ভয় হয়, একা লাগে। এসব উপসর্গকেও হেলা করবেন না।
অধ্যাপক শাহলা খাতুন
জাতীয় অধ্যাপক স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ