নবজাতকের হাইপোগ্লাইসেমিয়া

প্রতীকী ছবি

জীবনের প্রথম দিনগুলোয় কোনো শিশুর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে খিঁচুনি, মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ তার যেকোনো ধরনের স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে।

মানুষের শরীরের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ একটা নির্দিষ্ট মাত্রার নিচে নেমে গেলে তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে। যাঁরা বয়স্ক আর ডায়াবেটিসের রোগী, তাঁরা এই রোগের সঙ্গে পরিচিত। নবজাতকেরাও হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। নবজাতকের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৪৭ মিলিগ্রামের (২ দশমিক ৬ মিলিমোল/লিটার) নিচে নেমে যায়, তখন তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলে চিহ্নিত করা হয়।

আমাদের শরীরের শক্তির তাৎক্ষণিক উৎস হলো গ্লুকোজ। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর, বিশেষ করে মস্তিষ্কের কার্যক্রম সঠিকভাবে চলমান রাখতে গ্লুকোজের ওপরই নির্ভর করতে হয়। জীবনের প্রথম দিনগুলোয় কোনো শিশুর হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে খিঁচুনি, মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ তার যেকোনো ধরনের স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে।

যেসব নবজাতক হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে

  • যেসব শিশুর মা গর্ভকালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন এবং তা নিয়ন্ত্রণে ছিল না।

  • যারা অল্প ওজন নিয়ে জন্মেছে।

  • নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যাদের জন্ম হয়েছে।

  • কোনো কারণে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমে গেলে।

  • কোনো অসুস্থতার কারণে প্রাথমিক অবস্থায় নবজাতককে মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা হলে।

  • নবজাতক ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসে সংক্রমিত হলে।

  • নবজাতকের শ্বাসকষ্ট থাকলে বা কোনো কারণে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকলে।

  • নবজাতকের শরীরে কিছু কিছু হরমোনের ঘাটতি বা জন্মগত ত্রুটি থাকলেও সে হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় ভুগতে পারে।

লক্ষণ

  • নবজাতক বা শিশুর অবিরাম কান্না

  • হাত-পা কাঁপা

  • শিশুর ক্লান্তি, ঝিমুনি, দুধ পান করতে না পারা, প্রাণচাঞ্চল্য কম

  • অনেক ঘামা, শরীর ভেজা থাকা, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া

  • সারা শরীরে বা এক পাশে, হাতে-পায়ে-মুখে বা যেকোনো জায়গায় খিঁচুনি

  • পলকহীন তাকিয়ে থাকা, চোখের মণি ঘোরানো, শরীর নীল হয়ে যাওয়া

  • শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন বা অস্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস

  • শরীর ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া

করণীয়

ওপরের লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলেই শিশুকে হাসপাতালে নিতে হবে। শিশুর পায়ের গোড়ালিতে প্রিক করে এক ফোঁটা রক্তে গ্লুকোমিটার দিয়ে গ্লুকোজের মাত্রা সহজেই মাপা যায়। গ্লুকোজ প্রতি লিটারে ২ দশমিক ৬ মিলিমোলের কম হলে দ্রুত গ্লুকোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা : বিভাগীয় প্রধান, শিশুরোগ বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা