নীল আলোয় সর্বনাশ

ডেস্কটপ এবং মোবাইল ফোন বিচ্ছুরিত নীল আলো ত্বকের ক্ষতি করেছবি: প্রথম আলো

মাত্র কয়েক মাসে পৃথিবীটা কেমন হুট করে বদলে গেল! পরিবর্তিত দুনিয়ায় বদলে গেছে আমাদের জীবনধারা। আর একেই বলা হচ্ছে নয়া স্বাভাবিক। করোনা নামের জুজু থেকে বাঁচতে এখন কমবেশি সবাই আমরা যথাসম্ভব ঘরে থাকতে চাইছি। জীবনের নতুন মন্ত্র এখন ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। যদিও এরই মধ্যে খুলেছে অফিস-আদালত। তবু সুরক্ষার কথা চিন্তা করে এখনো অনেকেই থাকছেন ঘরবন্দী। সেই সঙ্গে পুরোদমে চলছে অনলাইন ক্লাস।

ছবি: প্রথম আলো
ক্ষতির দিক বিবেচনা করলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ও ডিজিটাল ডিভাইসের নীল রশ্মি প্রায় একই কাজ করে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০ মিনিট ভরদুপুরের চড়া রোদে থাকা আর আট ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা সমান।

সামাজিক দূরত্বের এই সময়ে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভরসা এখন অডিও-ভিডিও কল। মোটকথা, ঘরবন্দী জীবন আমাদের স্ক্রিন টাইম বাড়িয়ে দিয়েছে। দীর্ঘসময় ডিজিটাল ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকার জন্য চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অনেকেই জানি না যে টিভি, কম্পিউটার আর মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ব্লু রে বা নীল রশ্মি আমাদের ত্বকে কতটা বিরূআমরা অনেকেই মনে করছি যে ঘরে থাকার জন্য বাইরের দূষণ বা সূর্যের আলো থেকে ত্বক বেঁচে আছে। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও টের পাচ্ছি না আমাদের হাতে কাছে থাকা মুঠোফোন, কাজ বা ক্লাসের জন্য ব্যবহার করা ল্যাপটপের নীল আলো ত্বকের কেমন বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।

ছবি: প্রথম আলো

ক্ষতির দিক বিবেচনা করলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি ও ডিজিটাল ডিভাইসের নীল রশ্মি প্রায় একই কাজ করে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০ মিনিট ভরদুপুরের চড়া রোদে থাকা আর আট ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা সমান। নীল রশ্মির জন্য হতে পারে হাইপারপিগমেন্টেশন, ইনফ্ল্যামেশন। সেই সঙ্গে ত্বকে খুব সহজেই পড়তে পারে বয়সের ছাপ। কারণ, কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যবিশিষ্ট উচ্চশক্তিসম্পন্ন নীল রশ্মি সূর্য থেকে নির্গত ইউভিএ রশ্মির চেয়ে দ্রুত ত্বকের উপরিভাগ দুর্বল করে কোলাজেনের গঠন ভেঙে ফেলে। ফল, অল্প বয়সে ত্বকে বলিরেখার আবির্ভাব। আবার অনিদ্রার জন্যও কিন্তু সমানভাবে দায়ী এই রশ্মি। ঘুম কম হওয়ার জন্য ত্বকের লাবণ্য কমে, বাড়ে ব্রণ আর চোখের কোণের কালচে ছোপ।প প্রভাব ফেলতে পারে।

এখন তো আমরা চাইলেই কেউ ত্বকের খাতিরে হঠাৎ করে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে ফেলতে পারব না। তবে নীল আলোজনিত ক্ষতি থেকে ত্বককে বাঁচাতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি সহজেই। এ জন্য প্রথমেই আমাদের নজর দিতে হবে ড্রেসিং টেবিলে ছুটিতে থাকা সানস্ক্রিনের দিকে। সবাই ভাবি যে সানস্ক্রিন কেবল বাইরে বের হলেই লাগাতে হয়। ধারণাটি একদম ভুল।

ছবি: প্রথম আলো

শুধু বাইরে গেলেই নয়, সবার উচিত ঘরে থাকলেও দিনের বেলা নিয়ম করে তিন ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। কারণ, ইউভি রশ্মি আছে সবখানেই। আর এটিই ডিভাইসের নীল রশ্মি থেকেও আপনার ত্বককে বাঁচাতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সানস্ক্রিনে জিঙ্ক অক্সাইড আর টাইটেনিয়াম অক্সাইড থাকে। কারণ, এই দুটি উপাদান ত্বকে নীল রশ্মির আক্রমণ ঠেকাতে অধিক কার্যকর। পাশাপাশি ব্যবহার করতে হবে ভালো মানের অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার।

বর্তমানে বাজারে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ব্যবহারের জন্য ব্লু লাইট প্রটেক্টর শিল্ড কিনতে পাওয়া যায়। এটি ব্যবহার করলে নীল আলোর বিচ্ছুরণ অনেকাংশে কমানো যায়। আর চোখের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করতে পারেন ব্লু লাইট প্রটেক্টর গ্লাস বা সাধারণ রোদচশমা।

স্মার্টফোনে নাইট টাইম মোড অপশন আছে। এটি নীলচে আলোর পরিবর্তে হলদে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। নীল আলোর উগ্রতা থেকে বাঁচতে নাইট টাইম মোড ব্যবহার করুন।

এখন বেশির ভাগ স্মার্টফোনে নাইট টাইম মোড অপশন আছে। এটি নীলচে আলোর পরিবর্তে হলদে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। নীল আলোর উগ্রতা থেকে বাঁচতে নাইট টাইম মোড ব্যবহার করুন। আর ল্যাপটপ বা মোবাইল ব্যবহার করার সময় একটি ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখুন। পারলে টানা কাজ না করে ২০ মিনিট বা ৩০ মিনিট পরপর ৫ মিনিটের জন্য বিশ্রাম নিন। নীল আলো কিন্তু শরীরকে শুষ্ক করে দেয়। তাই প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করুন। আর সেই সঙ্গে খাদ্যতালিকায় রাখুন অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি।