পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে করণীয়
পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে নিয়মিত তাজা ও অর্গানিক শাকসবজি–ফল খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
দেশ–বিদেশে পাকস্থলীর ক্যানসারের রোগী ক্রমে বাড়ছে। ক্যানসারজনিত মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ এখন পাকস্থলীর ক্যানসার। নারীদের তুলনায় পুরুষরাই এ ক্যানসারে বেশি ভোগেন। যদিও বয়স্ক ব্যক্তিদের পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার তুলনামূলক বেশি। তবে বাংলাদেশে অল্প বয়সীদের মধ্যেও পাকস্থলীর ক্যানসারের রোগী দেখা যায়। আসুন, পাকস্থলীর ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং তা প্রতিরোধের উপায়গুলো জেনে নিই:
যেসব কারণে হয়
পাকস্থলীর ক্যানসারে রোগীর পারিবারিক ইতিহাস জানা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিক আলসার ও পাকস্থলীতে হ্যালিকোব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এ ক্যানসারের অন্যতম কারণ। অতি লবণাক্ত বা সল্টেড খাবার, সামুদ্রিক মাছ ও শুঁটকি বেশি খাওয়া এ ক্যানসারের কারণ হতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খাওয়া পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। স্থূলতা, শারীরিক পরিশ্রম কম করা, রবারের কারখানা ও কয়লাখনিতে দীর্ঘদিন কাজ করলে এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
যেভাবে বুঝবেন
পাকস্থলীর ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হঠাৎ করে পেটের উপরিভাগে ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া, পেট ফাঁপা, ওজন হ্রাস, ক্ষুধামন্দা, বমিভাব বা বমি হওয়া, খাবার ওপরে উঠে আসা, মুখে লালা জমা প্রভৃতি। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর শরীরে তেমন কোনো লক্ষণ না–ও থাকতে পারে। অনেক সময় আলসারের সঙ্গে ক্যানসারজনিত ব্যথার পার্থক্য করা যায় না। এ ছাড়া পাকস্থলীর ক্যানসারের রোগীর পেটে চাকা অনুভব করা, পেটে পানি আসা, পেট ফুলে যাওয়া, জন্ডিস, রক্তবমি হতে পারে।
যা করবেন
সন্দেহ হলে কিংবা উপসর্গ দেখা দিলে একমাত্র এন্ডোসকপি পরীক্ষার মাধ্যমে পাকস্থলীর ক্যানসার সঠিকভাবে নির্ণয় করা যায়। এ ছাড়া কতটুকু ছড়িয়েছে বা স্টেজ নির্ণয়ের জন্য সিটি স্ক্যান ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষা করাতে হয়। সার্জারি এ রোগের প্রধান চিকিৎসা। অনেক সময় রোগীকে কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়।
প্রতিরোধের উপায়
পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা জরুরি। নিয়মিত তাজা ও অর্গানিক শাকসবজি–ফল খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। ফসলে অতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার কমাতে হবে। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করলে পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটা কমবে। দীর্ঘদিন পেটের কোনো সমস্যা পুষে রাখা উচিত নয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অধ্যাপক ডা. মো. সেতাবুর রহমান, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা