পাঠকের প্রশ্ন: আইন
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: আমরা দুই বোন। আমাদের কোনো ভাই নেই। চাচারা বাবাকে বলেছিলেন যে মেয়ে থাকলে সম্পত্তি আলাদা করা যাবে না। আমি বাবাকে বলেছি, জমি আলাদা করতে আইনের আশ্রয় নেন। কিন্তু বাবা নেননি, নেবেও না। আমাদের বলে দিয়েছেন যে তাঁর ভাইদের বিরুদ্ধে কিছু কাউকে বলবেন না। এক চাচা বাবার কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা ধার নিয়ে এখন কিছু টাকা ফেরত দিয়ে বাকি টাকাও আর দিতে চান না। বাবার ছোট দুই ভাই বাবার জমির দলিল ব্যাংকে রেখে ঋণ নিয়ে গ্রামে দোতলা বাড়ি করেছেন। এখন বাবাকে দলিলও দিচ্ছেন না।
এসব কি সত্যিই এভাবে চলবে?আমরা দুই মেয়ে হওয়ার কারণে বাবা কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পান না। সত্যিই কি মেয়ে হওয়ার কারণে নিজেদের প্রাপ্যটুকুও পাব না?চাচারা বাবাকে প্রাপ্য টাকা, জমির দলিল দিচ্ছেন না। এসব ন্যায্য অধিকার পাওয়ার জন্য কীভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার চাচারা যা বলেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। শুধু কন্যাসন্তান থাকলে বাবার মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে তাঁর ভাইরা সম্পত্তির একটি অংশ পাবেন। তবে কেউ যদি তাঁর সব সম্পত্তি জীবিত অবস্থায় মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে তা হেবা দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে হস্তান্তর করে দিতে হবে। দান করে দিলে ওই সম্পত্তি জীবিত অবস্থায় হস্তান্তর করতে হবে।
আইন অনুযায়ী হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্ত–সম্পর্কিত আত্মীয় মধ্যে হেবা দলিলে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এ বিষয়ে একজন ভালো আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করবেন।
মুসলিম আইনে কারও কাছ থেকে প্রতিদান বা বিনিময় ছাড়া কোনো কিছু নিঃশর্তে গ্রহণ করাকে হেবা বলা হয়ে থাকে। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ (টিপিঅ্যাক্ট)–এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তিদাতা কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোনো ব্যক্তি ওই সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাকে দান বলা হয়। দান বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে নিচের তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়।
১. দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা প্রদান।
২. গ্রহীতার পক্ষ থেকে দান গ্রহণ করা বা স্বীকার করা।
৩. দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির দখল প্রদান।
হেবা করার পদ্ধতি শুধু মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে দানের ক্ষেত্রেও দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ সম্মতি থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে আপনার বাবার সম্মতি ছাড়া হেবা করা যাবে না।
২০০৫ সালে আগস্ট মাস থেকে হেবা করা সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদি জীবিত থাকা অবস্থায় আপনার বাবা মেয়েদের বা মেয়ের নামে এ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে চান, তাহলে তিনি হেবা দলিল সম্পাদন এবং রেজিস্ট্রি করে তা করতে পারেন। এবং অন্য উত্তরাধিকারেরা এ বিষয়ে কোনো আপত্তি করতে পারবেন না।
আর টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার জন্য ফৌজদারি ও দেওয়ানি—এ দুই ধরনের আইনেই পাওনা টাকা আদায়ের বেশ কিছু প্রতিকারের কথা বলা আছে। পাওনা টাকা ফেরত না দিলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় আদালতেই যেতে পারবেন। দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হলে মানি মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে দাবি করা টাকার অনুপাতে কোর্ট ফি দাখিল করতে হয়। ফৌজদারি আদালতের আশ্রয় নিতে হলে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনে সিআর (নালিশি) মামলা করা যায়। এ ছাড়া থানায় এজাহার হিসেবেও মামলা করার সুযোগ রয়েছে।
ঘোষণা
পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর
জীবনযাপনে নানা বিষয়ে নানা রকম প্রশ্ন জাগে মনে। অনেক সমস্যাও তৈরি হয়, যা সবার কাছে বলা যায় না। স্বাস্থ্য, মন, সম্পর্ক, সন্তান পালন, খাদ্যাভ্যাস, ডায়েট, আইন–অধিকার—এসব বিষয়ে যেকোনো প্রশ্ন পাঠাতে পারেন প্র অধুনার কাছে। ‘পাঠকের প্রশ্ন’ বিভাগে আপনার প্রশ্নের উত্তর বা সমস্যার সমাধান দেবেন খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞরা।
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: adhuna@prothomalo.com (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা: প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন
২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫। (খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA