পিরিয়ডে ১টি ন্যাপকিনে ১২ ঘণ্টার ননস্টপ প্রটেকশন

পিরিয়ড নিয়ে সমাজে এখনো অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। আছে নানা কুসংস্কারও। অনেকেই পিরিয়ড নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে আগ্রহী হন না। নিজেরাই ধারণা করে নেন কোনটি ঠিক আর কোনটি ভুল।

নারীদের পিরিয়ডের সময় কতক্ষণ পরপর স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলানো উচিত, এ নিয়েও রয়েছে নানা মুনির নানা মত! অনেকেরই ধারণা, এর ওপর নির্ভর করে মেয়েদের কোনো গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যা আছে কি না, অথবা জরায়ুতে কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে কি না। অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ ধরনের ধারণার পেছনে আদৌ কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায়নি, নেই কোনো প্রমাণও।

কিছু স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্র্যান্ড দাবি করে থাকে, ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পরপর স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তন করা স্বাস্থ্যসম্মত। অল্প সময়ের মধ্যে পরিবর্তন করা গেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, নারীদের দিনের অর্ধেক সময় ঘরের বাইরে কাটাতে হয়। তাঁদের স্কুল, কলেজ, অফিসসহ নানা রকম কাজে ফিল্ডওয়ার্কে যেতে হচ্ছে, লম্বা সময়ের ভ্রমণে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া নারীদের জন্য পাবলিক টয়লেটের খুব ভালো ব্যবস্থাও নেই। তাই ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পরপর ন্যাপকিন বদলানোও সব সময় সম্ভব হয় না। ব্যাপারটা সহজও নয়। এ কারণে সাধারণত ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন পরে থাকতে হয়।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, কত ঘণ্টা পর ন্যাপকিন বদলাবেন, সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে একেকজনের পিরিয়ডের ফ্লোর ওপর। কারও প্রথম কয়েক দিন হেভি ফ্লো থাকে, কারও থাকে রেগুলার ফ্লো। অনেক হেভি ফ্লোতে ৪ থেকে ৫টি প্যাডও লেগে যেতে পারে। আবার রেগুলার ফ্লোতে সাধারণত ২ থেকে ৩টি প্যাডেও হয়ে যায়। এমনকি এটি ন্যাপকিন অ্যাবজর্বশন টেকনোলজির ওপরও নির্ভর করে। ন্যাপকিনের ভালো অ্যাবজর্বশন পাওয়ার থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে ন্যাপকিন বদলানোর দরকার নেই। নারীদের কোনো ধরনের গাইনোকোলজিক্যাল সমস্যার সঙ্গে বেশিক্ষণ ধরে ন্যাপকিন পরে থাকার কোনো সম্পর্ক নেই বা ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন হতে পারে, এই কথারও কোনো ভিত্তি নেই।

সম্প্রতি স্যানিটারি ন্যাপকিনের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ড সেনোরার নতুন ওয়েটলক টেকনোলজির সঙ্গে নতুন প্যাক বাজারে আসে। এটি আরও উন্নত, আরও অ্যাডভান্সড টেকনোলজি, যেটি খুব দ্রুত লিকুইড অ্যাবজর্ব করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সাররা এই প্রোডাক্টের রিভিউ দিয়েছেন। একই সঙ্গে এর ওয়েটলক টেকনোলজি পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন। যেহেতু এটি দ্রুত শোষণক্ষম, এর অ্যাডভান্সড ওয়েটলক টেকনোলজি আছে, তাই এটি সহজেই ১২ ঘণ্টার প্রটেকশন নিশ্চিত করতে পারে। একজন নারীর মাসের পিরিয়ড সাইকেলে ৮০ মিলি পর্যন্ত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে, যা সেনোরা কনফিডেন্সের একটি ন্যাপকিন শোষণ করার ক্ষমতা রাখে। তাই একটি সেনোরা কনফিডেন্স স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজেই ১২ ঘণ্টার প্রটেকশন দিতে পারে। এতে স্বাস্থ্যের কোনো ঝুঁকিও নেই।

ন্যাপকিন বদলানোর বিষয় নিয়ে কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলা হয়। একটি নামকরা পত্রিকার সাংবাদিক জারিয়া বলেন, ‘আমি নিজের সুবিধার ওপর চিন্তা করেই ন্যাপকিন বদলাই। যখনই ন্যাপকিনে ভেজাভাব চলে আসে, লিকেজ বা অস্বস্তি অনুভূতি হয়, তখন ন্যাপকিন বদলে ফেলি। আর রিপোর্টিংয়ের জন্য আমাকে প্রায়ই বাইরে থাকতে হয়। তখন বারবার ন্যাপকিন বদলানো সম্ভব হয় না।’

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রিয়া জানান, ‘ন্যাপকিন ভালো কোয়ালিটির হলে, অ্যাবজর্বশন পাওয়ার ভালো হলে, ড্রাইনেস নিশ্চিত করলে দেখা যায় দিনে দুইবার ন্যাপকিন পরিবর্তন করলেই হয়ে যায়।’

আরেকজন হোমমেকার সিনথিয়া জানান, ‘লম্বা জার্নিতে থাকলে দীর্ঘ সময়ের জন্য ন্যাপকিন পরে থাকতে হয়। তবে আমি যখনই সুযোগ পাই, ন্যাপকিন বদলিয়ে ফেলি। এতে আসলে আমার তেমন কোনো সমস্যা হয় না।’

সবার মতামত শুনে আমরা বুঝতে পারি, একটি ন্যাপকিনে ১২ ঘণ্টার ননস্টপ প্রটেকশনে তাঁদের কোনো সমস্যা নেই; বরং উপকারই হবে।

পৃথিবী বা সভ্যতা যতই এগিয়ে যাক, পিরিয়ড নিয়ে মানুষের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণাগুলো এখনো যেন আগের মতোই আছে। তা ছাড়া এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের নির্ভরযোগ্য মতামতও সব সময় সবখানে পাওয়া যায় না। তাই ব্র্যান্ডগুলো পিরিয়ডের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামনে তুলে ধরতে চায়, যাতে মানুষ সঠিক তথ্যটাই জানতে পারে, দূর হয় প্রচলিত ভুল ধারণা ও কুসংস্কার।