বন্যাকবলিত এলাকায় শিশুর ডায়রিয়া হলে

ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ হাওর এলাকা। এই বন্যার কারণে ১৫ লাখের বেশি শিশু পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

পানিবাহিত রোগের মধ্যে অন্যতম প্রধান রোগ হচ্ছে ডায়রিয়া, যা অনেক সময় শিশুমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ডায়রিয়ার উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো বিশুদ্ধ খাবার ও পানির সংকট, পয়ঃনিষ্কাশনের দুরবস্থা, খাবার পানি বিশুদ্ধকারক যেমন, ফিটকিরিসহ অন্যান্য জিনিসের অপ্রতুলতা।

বন্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় অনেক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হলেও স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তাই শিশুদের ডায়রিয়া ও অন্যান্য রোগের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। এই ডায়রিয়ার প্রধান জটিলতা হলো পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন এবং ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স।

পানিশূন্যতার লক্ষণ

  • শিশুর অস্থিরতা বেড়ে যাওয়া বা চাঞ্চল্য কমে যাওয়া।

  • শিশু আগ্রহ নিয়ে পানি পান না করা বা পানি পান করতে না পারা।

  • চোখ অতিরিক্ত দেবে যাওয়া।

  • শিশুর চামড়া টেনে ধরলে ধীরে ধীরে সেটা আগের অবস্থানে ফেরত যাওয়া।

  • করণীয়

  • যেসব শিশু বুকের দুধ খায়, তাদের ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানো। একটু বড় বাচ্চাদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি পান নিশ্চিতকরণ।

  • ডায়রিয়া হলে কোনো ধরনের বাসি খাবার শিশুকে খাওয়ানো যাবে না।

  • প্রতিবার পাতলা পায়খানার পরে শিশুকে সঠিকভাবে মিশ্রিত খাওয়ার স্যালাইন পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে।

  • পানিশূন্যতার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।

  • ডায়রিয়ার সঙ্গে বমি, জ্বর, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, খিঁচুনি, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা পেট ফুলে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রতিরোধ

  • পানি ফুটিয়ে অথবা পানি বিশুদ্ধকারকের সাহায্যে যথাযথভাবে পানির জীবাণুমুক্তকরণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিমিত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত ও অন্যান্য কাজ যেমন, হাত-মুখ ধোয়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে জীবানুমুক্ত পানি।

  • যথাযথ পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

  • ত্রাণবিতরণকারী কর্তৃপক্ষ বা ব্যাক্তিদের খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি নিরাপদ শিশুখাদ্য ও পানি বিশুদ্ধকারকও বিতরণ করতে হবে।

ডা. ফায়েকা হাফিজ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল