বর্ষায় ত্বকের রোগ

বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় ত্বকে ছত্রাক বা ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণ বেশি হয়। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে শরীরের স্বাভাবিক অধিবাসী কিছু জীবাণু শক্তিশালী হয়ে ওঠে, সৃষ্টি করে নানা ত্বকের রোগ।

টিনিয়াসিস বা দাদ

মূলত শরীরের নানা ভাঁজে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস জন্মায়। এটাই দাদ। গলা, মুখ, কুঁচকি, মলদ্বার, বুক ও পিঠে এটি বেশি হয়। প্রচণ্ড চুলকানির পাশাপাশি কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি হয় এতে। অনেক সময় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে এতে পুঁজও হতে পারে। ফাঙ্গাস মুখে, ঠোঁটে, এমনকি মাথার ত্বকেও হতে পারে।

সেবোরিক ডারমাটাইটিস

বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। মাথার ত্বক, ভ্রু, মুখমণ্ডল, নাকের দুই পাশ, বুক ও পিঠের মাঝখানে ছোট ছোট দানার মতো দেখা দেয়; যা অনেকটা তৈলাক্ত ও হলুদাভ। প্রচণ্ড চুলকায়। এ জন্য চুল পড়া বেড়ে যায়, ত্বকে জ্বালাবোধ ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়। মূলত ইস্ট নামে একধরনের ছত্রাক এ জন্য দায়ী।

খোসপাঁচড়া

সারকোপটিস স্ক্যাবি নামের একধরনের পরজীবী ত্বকের বিভিন্ন স্থানে দানা সৃষ্টি করে। এর চুলকানির তীব্রতা ভয়ংকর। এটি এত ছোঁয়াচে যে একজনের হলে পরিবারের সবাই তাতে আক্রান্ত হয়। এ কারণে আক্রান্ত না হলেও পরিবারের সবাইকে একই সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে কিডনি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

ব্রণ

মূলত বয়ঃসন্ধিতে ব্রণ হলেও বর্ষাকালে এটা বয়স্কদেরও হতে দেখা যায়। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, মুখমণ্ডল নিয়মিত পরিষ্কার করেন না, দীর্ঘ সময় ধরে প্রসাধনী ব্যবহার করেন, তাঁদের ব্রণ বেশি হয়। মুখমণ্ডল ছাড়াও বুক ও পিঠের মাঝে, গলায় ও দুই বাহুতে ব্রণ হতে পারে।

খুশকি

একধরনের পরজীবী ছত্রাক এ জন্য দায়ী। মাথার ত্বকে চুলকানির পাশাপাশি কপালে এবং মুখে দাগ ও ক্ষতের সৃষ্টি করে। চুল পড়াও বাড়িয়ে দেয় অস্বাভাবিক হারে। ত্বকে সাদা সাদা গুঁড়োর মতো হতে দেখা যায়।

করণীয়

  • বর্ষাকালে এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

  • প্রতিদিন গোসল করা ও নিয়মিত মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা জরুরি।

  • ব্যক্তিগত ব্যবহারের জিনিসপত্র যেমন চিরুনি, তোয়ালে, সাবান, বিছানা-বালিশ কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করা যাবে না।

  • রাস্তার নোংরা পানি ত্বকে লাগলে বাড়ি ফিরে ধুয়ে ফেলুন।

  • ত্বক শুষ্ক রাখতে চেষ্টা করুন, বিশেষ করে ভাঁজগুলো।

  • ঘেমে গেলে পোশাক পরিবর্তন করুন।

  • ত্বকের ধরন বুঝে শ্যাম্পু, সাবান ব্যবহার করা জরুরি।

  • তৈলাক্ত ত্বকে তেলমুক্ত জেল ক্লিনজার ও তেলমুক্ত ক্লিনজিং টোনার ব্যবহার করা, মিশ্র ত্বকে সব ধরনের ক্লিনজার ও টোনার ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলেও ত্বকের স্বাভাবিকতা ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে সিরামিড ও হায়ালুরনিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

ডা. মো. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল