বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো

প্রতীকী ছবি
ছবি: খালেদ সরকার

বাংলাদেশে শিশুদের পুষ্টিবিধানে হয়তো বলা হয় দুই বছর বয়সে তাদের গরুর দুধ দেওয়া যাবে। হয়তো এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংকে মাথায় রেখে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে সত্যি হলো ১২ মাস পুরো হলেই, মানে এক বছরে পড়লেই ফুলক্রিম গরুর দুধ বাচ্চাদের দেওয়া যাবে। এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংয়ে বাচ্চারা সব ভিটামিন পায় না। বিশেষ করে ভিটামিন ডি। এর জন্য ব্রেস্টফিড বাচ্চাদের ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট দেওয়া লাগে।

চার মাস বয়স থেকে উইনিং শুরু করা যায়। ছয় মাসে অবশ্যই রেগুলার পিউরি দেওয়া উচিত। এ সময়ে হয়তো ততটা দুধ খাবে না, সেটা স্বাভাবিক। আবার ফল দিয়ে শুরু করলে সবজি খেতে চাইবে না। এদিকে গাজর কিন্তু নয় মাসের আগে দেওয়া যাবে না। ভাত, মুরগি, মাছ, ডাল, সবজির খিচুড়ি চার মাস বয়স থেকে পিউরি করে দেওয়া যেতে পারে।

এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং যাঁরা করতে চান, ভালো। ফর্মুলা মিল্কে বাচ্চাদের দরকারি সবকিছু মিক্স করা থাকে, তাই মন খারাপের কিছু নেই যদি পর্যাপ্ত বুকের দুধ বাচ্চারা না পায়। এমনি কোনো মায়ের বুকের দুধ পর্যাপ্ত না থাকলে তাঁকে দোষারোপের যেমন কিছু নেই, তেমনি ওই মায়েরও মন খারাপেরও কিছু নেই।

প্রতীকী ছবি
ছবি: স্পেন্সার সেলোভার, পেকজেলসডটকম

বাচ্চাদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর খেতে দিতে হবে। এমনকি রাতেও। বিশেষ করে প্রথম ১২ মাস। না হলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অনেক নবজাতক আবার বেশি বেশি থেকে চায়। তবে যখনই খাবার দেওয়া হোক না কেন, মাঝে অন্তত এক ঘণ্টার ব্যবধান থাকতে হবে।

বড় হতে থাকলে খাওয়া কমে যায়। তাই জোর করা উচিত হবে না। যদি মনে হয় কম খাচ্ছে, তাহলে সময় ধরে খাওয়াতে হবে। যেমন নাশতা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার—এভাবে। আর এই তিনবারের মধ্যে দুবার আরও খাবার দিতে হবে। তবে ভাজা, মিষ্টিজাতীয় খাবার দেওয়া যাবে না; এসব খাবার খিদে কমায়। উইন করার সময় দু-তিন দিন পরপর নতুন কিছু যোগ করতে হবে। নয়তো বোঝা যাবে না কোনো খাবারে অ্যালার্জি আছে কি না।

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বাচ্চারা খিটখিটে আচরণ করে। তাদের রাত আটটা থেকে নয়টার মধ্যে ঘুম পাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ, ওদের ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। আর নবজাতকেরা দিনে ২০ থেকে ২১ ঘণ্টাই ঘুমায়। বাচ্চা হলে নাওয়া-খাওয়ার সময় পাওয়া যায় না, তাই বাচ্চার ঘুমের সঙ্গে মাকেও ঘুমিয়ে নিতে হবে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ফলের রস দেওয়া যাবে না। যদি দিতেই হয়, তাহলে বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আট আউন্সের বেশি নয়। চার থেকে ছয় মাস পর্যন্ত পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। বরং দুধ থেকেই তা পেয়ে যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে।

ছোট বাচ্চাদের বার্প করানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর পরই এটা করতে হবে। ব্যায়ামও কোলিক বেবিদের খুব দরকারি।

প্রতীকী ছবি
ছবি: পোলিনা তানতিলোভিচ, পেকজেলসডটকম

নিজের খাওয়া ও ঘুমের দিকেও নজর দিতে হবে এ সময়। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ডিম, মাছ, মুরগির মাংস যেমন খেতে হবে, তেমনি প্রচুর সবজি ও পানি খেতে হবে। বাচ্চা নিয়ে পারলে হাঁটতে যাবেন, দুবেলা ৩০ মিনিট করে। এটি দুজনের জন্যই রিলাক্সিং।

যাঁরা পুরোপুরি বুকের দুধ খাওয়াতে পারছেন, তাঁরা তো ভাগ্যবান। তাই যত দিন পারে চালিয়ে যান। তবে যাঁরা পারছেন না, তাঁদের জানিয়ে রাখি, ফর্মুলা মিল্কে বাচ্চাদের ক্ষতি নেই। ফলে বিকল্প হিসেবে এই দুধ দেওয়া লজ্জার কিছু নেই। বরং সবার আগে বাচ্চার পুষ্টি নিশ্চিত করাটাই জরুরি। আর এই ফর্মুলা বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবেই দেওয়া। এগুলো কেবলই কৌটার দুধ নয়।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্রে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান হিসেবে কর্মরত, সাবেক রেসিডেন্ট, ইমোরি ইউনিভার্সিটি, আটলান্টা, জর্জিয়া এবং প্রাক্তন ছাত্র, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ