ব্যথা ও বন্ধ্যাত্বের কিছু গল্প এবং নারীর এন্ডোমেট্রিওসিস

মার্চ ছিল এন্ডোমেট্রিওসিস সচেতনতার মাস। বিশ্বের ১৯ কোটি নারী এ রোগে ভুগছেন। এ লেখায় জেনে নিন বিস্তারিত

আলেয়া বেগমের বয়স ২৯ বছর। পাঁচ বছর ধরে বিবাহিত। বিয়ের পর থেকেই সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিশোরী বয়স থেকেই তাঁর মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা হতো। সে জন্য অনেক চিকিৎসক দেখিয়েছেন এবং ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে প্রশমন করে রেখেছেন। আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে শুরুতে সিস্ট ধরা পড়েনি। দুই বছর আগে ধরা পড়ে। সেটা অস্ত্রোপচার করা হলেও সন্তান হয়নি। আবার আগের মতো সিস্ট হয়েছে এবং উপসর্গও দেখা দিয়েছে। আলেয়ার প্রশ্ন, তাঁর কি সন্তান হবে না?

সমাধান: এ মুহূর্তে চিকিৎসা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর। তার মধ্যে বিশেষ বিবেচনার বিষয় হলো এএমএইচ। এএমএইচ পরীক্ষা দ্বারা ডিম্বাশয়ে কী পরিমাণ ডিম্বাণু থাকে, তার একটি ধারণা পাওয়া যায়। যদি সিস্ট বড় হয়, তাহলে আবার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অপারেশন করা উচিত হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে কী পরিমাণ এএমএইচ আছে তার ওপরে। এএমএইচ কম থাকলে দ্বিতীয়বার অপারেশন করা ঝুঁকিপূর্ণ।

এএমএইচ ভালো থাকলে আবার অপারেশন করা যেতে পারে। তারপর টিউব এবং ভেতরের অবস্থা ভালো থাকলে আইইউআই করা যেতে পারে। তাতেও সন্তান ধারণ না করলে আইভিএফ বা টেস্টটিউব চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে সব রোগীর জন্য একই সূত্র খাটে না।

এএমএইচ কম থাকলে অপারেশন না করাই ভালো। বিশেষ করে একের নিচে হলে অবশ্যই অপারেশন বর্জন করা বাঞ্ছনীয়। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে জিএনআরএইচ অ্যানালগ ব্যবহার করে সিস্ট ও ব্যথা কমিয়ে তারপর আইভিএফ করা বাঞ্ছনীয়।

দুই

মিসেস শাহানার বয়স ৩৮ বছর। তাঁর তিনটি সন্তান আছে। মাসিকের সময় প্রচণ্ড ব্যথা, স্বামীসহবাসে ব্যথা এবং মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত যায়। আলট্রাসনোগ্রামে দেখা গেল দুই ডিম্বাশয়ে সিস্ট আছে। ভ্যাজাইনাল এক্সাম করে দেখা গেল জরায়ু শক্ত হয়ে লেগে আছে, নড়ানো যাচ্ছে না এবং তলপেটের দুই দিকে চাকা পাওয়া যাচ্ছে।

সমাধান: যেহেতু এন্ডোমেট্রিওসিস একটি রিকারেন্ট ডিজিজ মানে একবার সিস্ট ফেলে দিলে আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে, মিসেস শাহানার আর সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা নেই, সিস্টগুলো বড় বড় এবং তার উপসর্গ আছে, সে কারণে সমাধান হিসেবে জরায়ু এবং দুই ডিম্বাশয় ফেলে দেওয়া উপযুক্ত চিকিৎসা।

জরায়ু শক্ত হয়ে আশপাশের এবং পেছনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গে লেগে আছে। লিগামেন্ট এবং অন্যান্য টিস্যুও অস্বাভাবিক হয়ে আছে। এগুলো না ফেলা হলে উপসর্গ যাবে না। সব উপসর্গ থেকে উপশম হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, যদি জরায়ু ডিম্বাশয় ফেলে দেওয়া হয়।

এখানে সিস্টগুলো যদি আরও ছোট বা ৫ সেমির কম থাকত, সে ক্ষেত্রে রোগী অপারেশন না চাইলে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি বা ডাইনোজেস্ট–জাতীয় ওষুধ খেতে পারে অথবা এলএনজি ইন্ট্রাইউটেরাইন ডিভাইস ব্যবহার করতে পারে।

তিন

নাইমার বয়স ১৬ বছর, প্রথম মাসিক হয়েছে চার বছর আগে। প্রথম থেকেই মাসিকের সময় তার প্রচণ্ড ব্যথা হয়। আলট্রাসনোগ্রাম করে দুই ওভারিতে চকলেট সিস্ট পাওয়া গেল। তার জন্য কী চিকিৎসা দেওয়া যায়?

সমাধান: যেহেতু সিস্টগুলো বড়, তার অপারেশন দরকার। তবে দক্ষ সার্জন দ্বারা করাতে হবে, যাতে তার ওভারির কোনো ক্ষতি না হয়। অপারেশনের পরে মাসিক বন্ধ করে রাখতে হবে। এ মাসিক বন্ধ করে রাখা এন্ডোমেট্রিওসিসের একমাত্র উত্তম চিকিৎসা। মাসিক বন্ধ রাখার নানা রকম ব্যবস্থা আছে। মাসিকের রক্ত কোনো দূষিত রক্ত নয়। শরীরের স্বাভাবিক রক্তই মাসিকের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তাই মাসিক আটকে রাখলে কোনো সমস্যা হয় না। এ জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি খাওয়া যায়। এ ছাড়া মুখে খাবার প্রজেস্টারন ট্যাবলেট আছে, যেটা দীর্ঘদিন খাওয়া যেতে পারে।

চার

মিসেস বনানীর বয়স ৩৪ বছর। বিয়ের পরপরই চকোলেট সিস্টের জন্য তাঁর অপারেশন হয়। তারপরে তাঁর স্বামী বিদেশ চলে যান। পাঁচ বছর পরে দেশে আসার পর সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করলে ডাক্তারের কাছে যান এবং আবারও সিস্ট পাওয়া যায়। ডাক্তার আবার তাঁকে অপারেশনের জন্য বললেন। কিন্তু একজন ফার্টিলিটি স্পেশালিস্ট পরীক্ষা করে দেখলেন যে তাঁর এএমএইচ খুবই কম। কী করা উচিত?

সমাধান: এন্ডোমেট্রিওসিসের বেলায় রোগীদের চেয়ে চিকিৎসকের সচেতনতা বেশি দরকার। বনানীর স্বামী যখন বিদেশে ছিলেন, ওই সময়টাতে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি বা যেকোনো প্রজেস্টারন দিয়ে তাঁর মাসিক বন্ধ করে রাখলে ভালো হতো। এখানে জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য নয়, সিস্টের প্রতিরোধ করার জন্য দেওয়া হচ্ছে। এসব ওষুধ চলতে থাকলে এবং উপযুক্ত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকলে আবার সিস্ট হতো না।

তার এএমএইচ ভালো থাকলে অপারেশন করা যেত এবং সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চা নেওয়ার জন্য সব ধরনের চিকিৎসা চালানো যেত। যেহেতু এএমএইচ খুব কম, তাই অপারেশন না করে টেস্টটিউব চিকিৎসায় গেলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

পাঁচ

মিস নায়লার বয়স ২৫ বছর, অবিবাহিত। তাঁর মাসিকে প্রচণ্ড ব্যথা। আলট্রাসনোগ্রাম করে দুই ওভারিতে চকলেট সিস্ট ধরা পড়ল। দুটো সিস্টই বড় বড় এবং সে জন্য অপারেশন বাঞ্ছনীয়। চিকিৎসক অপারেশনের আগে এএমএইচ করতে দিলেন। কারণ এই সিস্টগুলো এএমএইচ কমিয়ে দেয় এবং অপারেশনের পর আরও কমে যায়। তাই আগে এটি দেখা নেওয়া উচিত। দেখা গেল তার এএমএইচ খুবই কম। এএমএইচ ক্রমান্বয়ে আরও কমে যেতে পারে শুনে নায়লা চিন্তিত হয়ে পড়ল। সে জানতে চাইল এ কমে যাওয়াকে থামিয়ে রাখা যাবে কি না?

সমাধান: কমে যাওয়া থামিয়ে রাখা যায় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণু কমতে থাকে এবং এএমএইচ কমতে থাকে। তবে এ রোগ যাতে বাড়তে না পারে, সে জন্য অপারেশনের পরে যেকোনো একটা ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। তবে নায়লা চাইলে তাঁর ডিম্বাণু সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। যখন তাঁর বিয়ে হবে এবং বাচ্চা নিতে চাইবেন, তখন এ সংরক্ষিত ডিম্বাণু ব্যবহার করতে পারবে। ডিম্বাণু সংরক্ষণ করার জন্য টেস্টটিউব পদ্ধতি প্রয়োজন।

ছয়

ফরিদার বিয়ে হয়েছে দুই মাস। তাঁর বয়স ২২ বছর। দুই বছর আগে তাঁর এক ওভারিতে ১০x৯ সেমি সাইজের একটি সিস্ট ছিল এবং প্রচণ্ড এডহেশন (একটির সঙ্গে অন্যটি লেগে থাকা) ছিল। অপারেশন করে এডহেশন সরিয়ে সিস্ট ফেলে দেওয়া হলো। সব অঙ্গের অবস্থান আগের মতো করে দেওয়া হলো। অপারেশন শেষে তাঁকে ডাইনোজেস্ট ট্যাবলেটটি চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো। এ অপারেশনে এএমএইচ কমে যায়, তা তিনি জানতেন। বিয়ের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি পরীক্ষা করে দেখেন এএমএইচ বেশ কমে গেছে। পড়াশোনা করছেন বলে এখনই তিনি বাচ্চা নিতে চান না। দেরি করে বাচ্চা নিলে কি অসুবিধা হবে?

সমাধান: যত দিন যাবে, তত বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকবে। তদুপরি এএমএইচ কম। তাই দেরি করলে পরে ডিম্বাণু না–ও থাকতে পারে। তাই এখনই তাঁর ভ্রূণ তৈরি করে সংরক্ষণ (ফ্রিজিং) করে রাখা উচিত। যখন তিনি বাচ্চা নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন, তখন এ সংরক্ষিত ভ্রূণ (ফ্রোজেন এম্ব্রায়ও) ব্যবহার করবেন। ভ্রূণ টেস্টটিউব পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়।

সাত

নাঈমার বয়স ৩৮ বছর। দুটো বাচ্চার মা। তাঁর মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা হয় যা কোনো পেইন কিলারেও সারে না। চিকিৎসক পরীক্ষা এবং আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখলেন যে তাঁর জরায়ুতে অ্যাডেনোমায়োসিস নামের একধরনের টিউমার আছে। যা পুরো জরায়ুতে বিস্তৃত। সে জন্য জরায়ুর আকারও বড় হয়ে গেছে। তাঁর জন্য কী চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে?

সমাধান: এখানে জরায়ু ফেলে দেওয়াই একমাত্র উত্তম চিকিৎসা। বাচ্চা ধারণ ছাড়া জরায়ুর আর কোনো কাজ নেই। যেহেতু দুটো বাচ্চা আছে এবং বয়সও বেশি, আর বাচ্চা নেওয়ার কোনো সময় বা ইচ্ছা কোনোটাই নেই, তাই ফেলে দেওয়াই উত্তম পন্থা। যদি ফেলে না দিতে চান, তবে মাসিক বন্ধ করার জন্য ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। এন্ডোমেট্রিওসিসে যেসব ওষুধ দেওয়া হয়, সেই একই ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে তাঁদের জন্য এলএনজি ইন্ট্রাইউটেরিয়ান ডিভাইস যেটা কপার টি–র মতো জরায়ুতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় সেটা সর্বোত্তম।

এতক্ষণ যে নারীদের গল্প বলা হলো, তাঁরা এন্ডোমেট্রিওসিস বা অ্যাডেনোমায়োসিস নামের সমস্যায় আক্রান্ত, যা তাঁদের জীবনে বহুমুখী প্রভাব ফেলেছে। বিশ্বের ১৯ কোটি নারী এ রোগে ভুগছেন। এ সমস্যা কিশোরী বয়স থেকে শুরু করে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পর্যন্ত হতে পারে। তবে প্রজনন বয়সেই বেশি হয়ে থাকে।

প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে একজন এন্ডোমেট্রিওসিসের রোগী থাকেন। এর মধ্যে অর্ধেকই পরে বন্ধ্যাত্বে ভোগেন। এখানে জরায়ুর বাইরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে তলপেটের ভেতরে এবং ডিম্বাশয়ে জরায়ুর ভেতরের আবরণী যাকে বলে এন্ডোমেট্রিয়াম সে রকম কোষকলা তৈরি হয়। প্রতি মাসে স্বাভাবিক মাসিকের সঙ্গে ওই সব অস্বাভাবিক জায়গায় মাসিকের মতোই রক্তক্ষরণ হয়। ফলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। ডিম্বাশয়ে রক্ত জমা হতে হতে এটি সিস্ট হয়, যাকে চকলেট সিস্ট বলে। পুরোনো জমে থাকা রক্ত রং বদলে চকলেটের মতো রং ধারণ করে বলে চকলেট সিস্ট বলে। এটি জরায়ুর মাংসপেশিতেও হতে পারে। তখন একধরনের টিউমারের মতো মনে হয়। এটিকে অ্যাডেনোমায়োসিস বলে।

উপসর্গগুলো কেমন? মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা, মাসিকে অধিক রক্তক্ষরণ, সহবাসে ব্যথা, মলত্যাগের সময় ব্যথা, সন্তানধারণে অক্ষমতা।

এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসার মধ্যে ওষুধ এবং সার্জারি দুটোরই সমান গুরুত্ব রয়েছে। যাঁদের ফ্যামিলি কমপ্লিট বা আর সন্তানের দরকার নেই, তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া সহজ। সমস্যা হয় কিশোরী এবং প্রাপ্তবয়স্ক যাঁদের সন্তান হয়নি, তাঁদের নিয়ে। এ রোগ শুধু বন্ধ্যা করে না, প্রজনন সময়কালও কমিয়ে দেয়। যার জন্য রোগটি নিজে যেমন দায়ী, তেমনি এর সার্জারিও। আবার সার্জারি করলেই সম্পূর্ণ সারবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। অর্থাৎ অস্ত্রোপচার করে সিস্ট ফেলে দিলেও কয়েক মাস পর আবার হতে পারে। তাই তার আবার অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু বারবার অস্ত্রোচার করা হলে পরবর্তী সময়ে সন্তানধারণের সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়।

অভিভাবকেরা সচেতন থাকুন

১. আপনার স্কুলপড়ুয়া মেয়ের মাসিকের সময় ব্যথা হলে অবশ্যই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।

২. স্কুলে শিক্ষককে জানান, এটি স্বাভাবিক মাসিক নয়। এটি অসুস্থতা। স্কুলশিক্ষককেও এ ব্যাপারে সচেতন হয়ে সাহায্য করতে হবে।

৩. চিকিৎসার স্বার্থে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি চিকিৎসক দিতে পারেন। এতে ভয়ের কিছু নেই।

৪. মাসিক বন্ধ করে রাখলে সমস্যা আর বাড়তে পারে না। মাসিক না হলে শারীরিক কোনো অসুবিধা হয় না। তাই যত দিন চিকিৎসক ওষুধ দেবেন, তত দিন তা চালিয়ে যাবেন।

বিবাহিতদের জন্য সচেতনতা

১. এন্ডোমেট্রিওসিস ডায়াগনোসিস হলে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না নেওয়াই ভালো। যদি নিতান্তই প্রয়োজন হয়, তাহলে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য বড়ি খাওয়া উত্তম।

২. সম্ভব হলে ৩০ আর তা না হলে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে সন্তান নেওয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন।

চিকিৎসকের জন্য সচেতনতা

১. কিশোরীদের মাসিকের ব্যথা গুরুত্বের সঙ্গে দেখুন। পারিবারিক ইতিহাস জানুন—মা, খালা, বোনদের রোগটি আছে কি না। যদি থেকে থাকে, তাহলে রোগীকে অবশ্যই একজন এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসা দিন। থেরাপিউটিক ট্রায়াল অনেক সময় ডায়াগনোসিসে সহায়তা করে। কোনো সিস্ট আছে কি না, তা ডায়াগনোসিস করার জন্য নিয়মিত চার বা ছয় মাস অন্তর আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে ফলোআপ করা যেতে পারে।

২. যদি সিস্ট থাকে, তাহলে দীর্ঘদিনের জন্য মাসিক বন্ধ করে রাখতে হবে। ডাইনোজেস্ট ওষুধ একটানা পাঁচ বছর পর্যন্ত দেওয়া যেতে পারে।

৩. কিশোরীদের সার্জারি পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। নিতান্তই প্রয়োজন হলে (সিস্ট অনেক বড় হলে) ল্যাপারোস্কোপিক সিস্ট এসপিরেশন এবং ফালগ্রেশন অথবা মডিফাইড সিস্টেকটোমি করে একটানা সাপ্রেসিভ থেরাপি দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

৪. যাঁরা সন্তান চান, তাঁদের জন্য সার্জারি উপযোগী। এডহেশন রিলিজ করে, টিউবোওভারিয়ান রিলেশন ঠিক করে, সিস্ট সরিয়ে ফেললে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। সার্জারির আগে অবশ্যই ওভারিয়ান রিজার্ভ চেক করুন। রিজার্ভ খুব কম হলে অস্ত্রোপচারের সিদ্বান্ত পরিবর্তন হতে পারে।

৫. পুনরাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনে সাপ্রেসিভ থেরাপি দিতে হবে।

৬. দ্বিতীয়বার সার্জারি বর্জন করা বাঞ্ছনীয়। দ্বিতীয়বার সার্জারি ওভারিয়ান ফেইলিউর করতে পারে। ওভারিয়ান রিজার্ভ খুব ভালো থাকলে করা যেতে পারে। তবে সাধারণত খুব ভালো থাকে না। এদের জন্য আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) উপযোগী।

৭. কোনো কারণে কেউ সন্তান দেরি করে নিতে চাইলে ডিম্বাণু, ওভারিয়ান টিস্যু বা এমব্রায়ো যার জন্য যেটা উপযোগী ফ্রিজ করে রাখা যেতে পারে।

৮. অনেক জটিল অবস্থা হলে যিনি আর সন্তান নেবেন না তাঁর ডেফিনিটিভ সার্জারি, যাঁর সন্তান নেই তাঁর জন্য আইভিএফ এবং অবিবাহিতদের জন্য সাপ্রেসিভ থেরাপি।

অধ্যাপক রাশিদা বেগম: চিফ কনসালট্যান্টইনফার্টিলিটি কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার লিমিটেড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা