ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্যবিধি মানুন

দীর্ঘদিন পর পর্যটনস্থান ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। প্রকৃতির এমন দৃশ্য দেখতে যাওয়ার সময়ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। শহীদ সিরাজ লেক, তাহিরপুর, সুনামগঞ্জছবি: সজীব মিয়া

করোনা সংক্রমণের উচ্চ হারের ফলে দেশজুড়ে ঘোষণা করা হয়েছিল বিধিনিষেধ। আরোপ করা হয়েছিল ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। এ কারণে অনেকটা সময় মানুষ পরিবার-পরিজন, স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে যাননি। তবে করোনা সংক্রমণের হার কমতে থাকায়, দীর্ঘ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। দেশের পর্যটন স্থান ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। শীতকাল অধিকাংশ মানুষের বেড়ানোর আদর্শ মৌসুম হলেও এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। ঘরবন্দী মানুষ বেরিয়ে পড়েছেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো উপচে পড়ছে পর্যটকদের ভিড়ে। কিন্তু বেড়াতে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি কতটা মানা হচ্ছে? দেখা যাচ্ছে, ঘুরতে যাওয়া মানুষদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই বেড়াতে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সতর্কতা সম্পর্কে জানা থাকা দরকার।

মৌসুমি রোগ বাড়ছে

প্রায় এক বছর পর্যটনকেন্দ্রগুলো প্রায় খালি ছিল। বেশির ভাগ মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর ছেড়ে কোথাও যাননি। কাজের কারণে বাড়ি ছাড়লেও গতিবিধি সীমিত রেখেছেন, মাস্ক পরেছেন, বেশি ভিড় দেখলে এড়িয়ে চলেছেন। মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার অভ্যাস, বাইরের খাবারদাবার এড়িয়ে চলার কারণে গত বছর মৌসুমি রোগগুলোও কমে গিয়েছিল। কমেছিল ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার মতো রোগ। কিন্তু এ বছর রোগগুলো আবার বাড়ছে। তার মানে এটি প্রমাণিত যে আমরা চাইলে বা সতর্ক থাকলে মৌসুমি রোগ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারি। করোনাভাইরাসের জন্য যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হয়, তার উপকারিতা মেলে যেকোনো ধরনের জীবাণু রুখতেই। তাই হাইজিন বা স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো মেনে চললে নিজেরই উপকার।

কী করবেন

বেড়াতে যাওয়ার সময় যানবাহনে বা পর্যটনকেন্দ্রে মাস্ক পরে থাকতে হবে। কেবল করোনা নয়, সাধারণ ফ্লুসহ শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ থেকে রক্ষা করবে মাস্ক। এবার গরমের মধ্যেই সমুদ্রসৈকত, পাহাড়, বন, হাওরে ঘোরাঘুরির কারণে ফিরে এসেই ঠান্ডা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ফ্লু–জাতীয় উপসর্গে ভুগছেন অনেকে। মাস্ক পরা থাকলে এসব রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। ঠিক একইভাবে বারবার হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহারের অভ্যাস ফ্লু থেকে তো বাঁচাবেই, ডায়রিয়া ও আমাশয়ের মতো রোগও রুখতে সাহায্য করবে। কারণ, ময়লাযুক্ত হাত থেকেই এসব রোগ ছড়ায়।

খাবারদাবার থেকেও সাবধান থাকুন। একমাত্র খাওয়ার সময়ই মাস্ক খুলতে পারেন, তবে খাওয়া শেষ করে আবার মাস্ক পরে নিন। অবশ্যই ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে খাবার খাবেন। যে রেস্তোরাঁ বা হোটেলে খাচ্ছেন, তার কর্মচারীরা কতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন, মাস্ক পরে খাবার পরিবেশন করছেন কি না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিধি মানছেন কি না লক্ষ করুন। না মানলে সচেতন নাগরিক হিসেবে এটি চাওয়া আপনার অধিকার, কারণ এসব শর্ত সাপেক্ষেই তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে তাঁরা বাধ্য। একই সঙ্গে যাঁরা ভোক্তা, তাঁদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। যদি ভিড় এড়াতে চান, তবে হোটেলে রুম সার্ভিস নিন। হোটেলে যাঁরা রুম সার্ভিস দিতে বা রুম পরিষ্কার করতে ঢুকবেন, তাঁরা যেন মাস্ক পরে ঢোকেন, তা নিশ্চিত করুন। অথবা একটু কম ভিড় হয়, এমন সময় খাবার গ্রহণ করুন। টাকাপয়সা হাত দিয়ে ধরার পর অবশ্যই হাত ধুয়ে ফেলবেন। একই কাজ করবেন সুইচ, লিফটের বোতাম টেপার পর, বাসের হাতল বা সিঁড়ির হাতল স্পর্শ করার পর।

করোনা নিম্নমুখী হলেও ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ঊর্ধ্বমুখী। তাই মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে, বিশেষ করে শিশুদের প্রতি নজর রাখতে হবে। শিশুদের ফুলহাতা পোশাক পরাবেন। হোটেল রুমে মশারি না দিলে মশারোধক স্প্রে করতে বলবেন। মশানিরোধক মলম নিয়ে যাবেন সঙ্গে। পার্বত্য এলাকায় মশা কামড়ালে ম্যালেরিয়াও হতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন।

পর্যটনকেন্দ্রে আনন্দ করার সময় ভিড় যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। বড় দলের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার চেয়ে এ সময় ছোট গ্রুপ বা শুধু নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যাওয়া উচিত। সব সময় নিজের সঙ্গে পানির বোতল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ছোট সাবান, টিস্যু পেপার ইত্যাদি রাখুন। বিশুদ্ধ পানি পান করুন। রেস্তোরাঁয় বাসি খাবার খাবেন না। ফাস্ট ফুড, বার্গার ইত্যাদি খাবারে প্রক্রিয়াজাত ও বাসি উপকরণ ব্যবহার করা হয়, তাই এগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। তবু পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হলে ওরস্যালাইন খান।

করোনা চলে যায়নি

করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী, তাই বলে আবার ঊর্ধ্বমুখী হবে না, তা কি কেউ বলতে পারে? অতিমারি শেষ হয়ে যায়নি। সবাই টিকার আওতায়ও আসেনি। তাই যেখানে যাচ্ছেন, সেখানে সবাই নিরাপদ, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। বিশেষ করে শিশুরা যেহেতু টিকার আওতায় আসেনি, তারা সংক্রমণ ছড়ানোয় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। তাই ছোটদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সে জন্য ছোট ছোট দলে ঘোরাফেরা করুন। দলের কেউ যদি অসুস্থ হন, জ্বরে ভোগেন তবে অবশ্যই নিজ দায়িত্বে নিজেকে আইসোলেট করে ফেলুন। নইলে সবাই বিপদে পড়তে পারে।

করোনার কারণে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে যে চাপ পড়েছিল, তার প্রতিক্রিয়া এখনো আছে। কোথাও ঘুরতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বা বিশেষ করে জ্বর-কাশি হলে আপনাকে হয়তো রেড বা ইয়েলো জোনে চিকিৎসা নিতে হতে পারে বা করোনা টেস্ট দ্রুত করার দরকার হতে পারে। দলচ্যুত বা আলাদা হয়ে পড়তে পারেন বাধ্য হয়েই। চিকিৎসা পেতে দেরি হয়ে যেতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হলো অসুস্থ না হওয়ার চেষ্টা করা—স্বাস্থ্যবিধি মানুন, সুস্থ থাকুন, আনন্দে ভ্রমণ করুন।