মাইগ্রেনে করণীয়

মাইগ্রেন সচেতনতা সপ্তাহ ২০২১ উপলক্ষে এসকেএফ আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’র পঞ্চম পর্বের বিষয় ছিল মাইগ্রেনের চিকিৎসা ও তার প্রতিকার। এদিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাঈম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরী।

সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাঈম

মাথাব্যথার রকমফের

চিকিৎসক আবু নাঈম জানান, চোখের ওপর থেকে ঘাড়ের নিচ পর্যন্ত পুরো অংশই মাথা। আর মাথা থাকলে মাথাব্যথা হবেই। তবে কখনো কখনো এই মাথাব্যথা থেকে চোখ, কান ও সাইনাসের সমস্যা হতে পারে। প্রাথমিক পর্যায়ের মাথাব্যথায় কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। আর ৯৫ শতাংশ মাথাব্যথাই এ ধরনের মাথাব্যথা। আর ২–৫ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মাথাব্যথার সঙ্গে চোখ, কান ও নাক জড়িয়ে আছে। এসব মাথাব্যথার ৭০ শতাংশ আবার টেনশন থেকে উদ্ভূত। এগুলোকে বলে টেনশন হেডেক। আর বাকি ৩০ শতাংশ হলো মাইগ্রেন হেডেক।

কীভাবে বুঝব কোন ধরনের মাথাব্যথা

টেনশন হেডেকটা ক্রনিক, ক্রমাগত মাথাব্যথা হতেই থাকে। অন্যদিকে মাইগ্রেনের ব্যথা থেমে থেমে ওঠে। সপ্তাহে দুদিন, তিন দিন; মাসে দুদিন, তিন দিন। এমনকি বছরে একবারও হতে পারে। অন্যদিকে টেনশন হেডেক আবার সন্ধ্যা থেকে বাড়া শুরু করে। মাইগ্রেনের ব্যথায় মনে হবে, মাথার ভেতরে কেউ কিছু দিয়ে আঘাত করছে। পালসের সঙ্গে এ মাথাব্যথা ছন্দ মিলিয়েও উঠতে পারে। অন্যদিকে টেনশন হেডেক তীব্র হয়। মাথা ঘুরতে পারে, ঝিমুনি আসতে পারে। বমি বমি ভাব হতে পারে। আলোকসংবেদনশীলতা তৈরি হয়। কথা বলতেও অসুবিধা হতে পারে।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাঈম

কাদের মাইগ্রেন হতে পারে

যেকোনো মানুষের মাইগ্রেন হতে পারে। অন্যান্য মাথাব্যথার মতো নারীদের মাইগ্রেন বেশি হয়। ১৬ বছর থেকে শুরু করে ৪৫ বছর পর্যন্ত এ মাথাব্যথা হতে পারে। এর আগে–পরেও হতে পারে। তবে তার আশঙ্কা কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা–বাবার ছিল। সেখান থেকে হতে পারে।

মাইগ্রেনের কারণে কি জটিল কোনো সমস্যা হতে পারে

না, এতে টেনশনের কিছু নেই। সেকেন্ডারি মাথাব্যথা হলে একটু চিন্তার ব্যাপার আছে। তবে প্রাথমিক ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেননা, মাথা থেকে সৃষ্ট মাথাব্যথা মাথার কোনো ক্ষতি করে না। চোখ, নাক ও কান থেকে সৃষ্ট মাথাব্যথা আবার একটু সেনসিটিভ। আগে ধারণা করা হতো, মাইগ্রেনের সঙ্গে স্ট্রোকের গভীর সম্পর্ক আছে। কিন্তু গবেষণা থেকে এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।

মাইগ্রেনের চিকিৎসা করলে সেরে যায়। তবে অনেক সময় সারেও না। দীর্ঘ সময় ওষুধ খেতে হয়। মাইগ্রেনে চোখের পেছন দিকে ব্যথা করে। অনেকে আবার চোখের চিকিৎসকের কাছে যান। চশমা পরেন। তাতে উপশম হয়, কিন্তু পুরোপুরি সেরে যায় না। আবার অনেকে সাইনাসের ট্রিটমেন্ট করান। তাতেও মাইগ্রেন সেরে যাওয়ার কথা নয়।

মাইগ্রেনের চিকিৎসা

ডায়গনোসিস করাতে হবে। তা ছাড়া পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, সব লক্ষণ মিলে গেলে আমরা সাধারণ কিছু ওষুধ দিই। মনে রাখতে হবে, মাসে যদি দু–তিনবার এ রকম মারাত্মক তীব্র মাথাব্যথা হয়, তাহলে অন্য ধরনের ওষুধ দিই। ব্যথার শুরুতেই ওষুধ খেলে অত ব্যথা হয় না।

নারীরা কীভাবে মাইগ্রেনকে ম্যানেজ করবে

প্রেগনেন্সিতে মাইগ্রেন খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আবার আমরা মাইগ্রেনে সাধারণত যে ধরনের ওষুধ দিই, সেগুলো প্রেগনেন্সিতে দেওয়া যায় না। এখানে একটা মজার ব্যাপার আছে। যাঁদের আগে থেকেই জেনুইন মাইগ্রেন থাকে, প্রেগনেন্সিতে ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে তা সেরে যায়। আর যাঁদের মাইগ্রেনের ইতিহাস নেই, তাঁদের ১৬ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সিতে মাইগ্রেন হয়। আবার সন্তান জন্মের পর সেরেও যায়।

যার ঘন ঘন মাইগ্রেন অ্যাটাক হয়, তার যদি টেনশন হেডেক হয়, তখন?

একজন মানুষের এই দুই ধরনের মাথাব্যথাই হতে পারে। তখন যে ওষুধগুলো দুই ধরনের হেডেকেই কাজ করে, সেগুলো দিই। মাইগ্রেন হেডেক রোগীরা স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। যেমন স্কুল, কলেজ কিংবা অফিসে যাওয়া, পড়াশুনা করা—এগুলো করতে পারে না। ক্রনিক মাইগ্রেনে আমরা উচ্চমাত্রার ওষুধ দিই।

শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে মাইগ্রেনের সম্পর্ক

টেনশনে থাকলে, ঘুম কম হলে, একবেলা না খেলে, হঠাৎ বেশি শারীরিক পরিশ্রম করলে মাইগ্রেন অ্যাটাক হতে পারে। মাইগ্রেনমুক্ত জীবনযাপনের জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা জরুরি। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, হাঁটা, ব্যায়াম করা উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নেই।

মাইগ্রেন ব্রেনের রোগ। ব্রেনের কোনো ক্ষতি করে না। চিকিৎসা করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঠিক হয়ে যায়। তবে ঠিক না–ও হতে পারে। ঠিক না হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। ঠিকমতো ঘুমান, চাপমুক্ত জীবনযাপন করুন। ঠিকমতো খান। প্রচুর পানি পান করুন। আর একটু শারীরিক ব্যায়াম করে নিজেকে ফিট রাখুন। মাইগ্রেন কোনো বড় সমস্যা নয়।