মাইগ্রেন অ্যাটাক নারীদের বেশি হয়

মাথাব্যথা খুব সাধারণ একটি রোগ। প্রায় সবাই কোনো না কোনো সময় এ রোগে ভোগে। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। এর কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো— মাইগ্রেন সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠান এসকেএফ নিবেদিত ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’র তৃতীয় পর্বে সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালের ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি ৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো ও এসকেএফের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী।

সবারই মাথাব্যথার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কারও বেশি, কারও কম। দৈনন্দিন জীবনে মাথাব্যথা বেশি হয় কাজের চাপ, হতাশা, উদ্বেগ ও পরিবেশের প্রভাবে। এগুলো টেনশন–টাইপ মাথাব্যথা। অনেকের আবার মাইগ্রেনের সমস্যা থাকে। এই ব্যথা সচরাচর হয় না। ১৫ দিনে বা মাসে একবার হয়। ব্যথা ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। যাদের এ সমস্যা থাকে তাদের প্রখর রোদ, আগুনের তাপ, আলো, শব্দ, বেশি কথা বললে মাইগ্রেন অ্যাটাক হয়। ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘যাদের মাইগ্রেন আছে, তাদের আমরা বাইরে কালো চশমা পরে যেতে বলি। এ ছাড়া আগুন থেকে দূরে থাকলে, বেশি ঘুমালে, টেনশন কম করলে এর অ্যাটাক থেকে বেঁচে থাকা যায়।’

টেনশন–টাইপ মাথাব্যথা আর মাইগ্রেনের ব্যথার মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। মাসল কনট্রাকশন বা টেনশন–টাইপ মাথাব্যথার ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন মানুষের এটি প্রতিদিনই হতে পারে। অতিরিক্ত কাজের চাপ, মানসিক চাপ, হতাশা, উদ্বেগ, ঘুমের অভাব—এসবের জন্য এ ব্যথা হয়। ব্যথা সকাল থেকে অল্প হয়ে বিকেলে অনেক বেশি আকারে দেখা দেয়। আর মাইগ্রেন অ্যাটাক নারীদের বেশি হয়। ছেলেদের কম হয়। এই ব্যথা এপিসোডিক। মানে, মাঝেমধ্যে হয়। মাইগ্রেন অ্যাটাকের ব্যথা অত্যন্ত তীব্র আকারে প্রকাশ পায়। ব্যথার সঙ্গে কখনো কখনো বমিও হয়। অনেকে চোখে ঝাপসা দেখে। আবার অনেকে ব্যথা হওয়ার আগে বুঝতে পারে যে তার একটু পরে ব্যথা হতে পারে। সে সময় তাদের বুকের ভেতর অস্থিরতা অনুভব হয়, চোখে আলোর ঝলকানি দেখা যায়, ঝাপসা দেখে। অ্যাটাকের আগের এই অবস্থাকে মেডিকেলে ভাষায় ‘অরা’ বলে। টেনশন–টাইপ মাথাব্যথায় অরা হয় না। আর মাইগ্রেনের ব্যথা একটি নির্দিষ্ট বয়সের (৫০ বা ৬০ বছর) পর আর হয় না। টেনশন–টাইপ মাথাব্যথার ক্ষেত্রে এমন হয় না। আর কিছু ক্ষেত্রে মাইগ্রেন বংশগত।

অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী।

ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশনের সঙ্গে মাথাব্যথার সম্পর্ক রয়েছে। যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সুগার বেড়ে বা কমে গেলে মাথাব্যথা হতে পারে। প্রেশার বেড়ে গেলেও মাথাব্যথা হয়। তবে এই মাথাব্যথা মাইগ্রেনের একটি উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পায়। আবার উচ্চ রক্তচাপের কারণে অনেকের স্ট্রোক হয়ে যায়। সে কারণে মাথাব্যথা হয়। তবে এই মাথাব্যথার সঙ্গে মাইগ্রেন বা টেনশন–টাইপ ব্যথার কোনো সম্পর্ক নেই, এমনটাই জানালেন ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী।

মাথাব্যথা কী কারণে হচ্ছে, এটি নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা করতে হয়। মাইগ্রেন বা টেনশনের কারণে মাথাব্যথা ক্লিনিক্যালি রোগীর ইতিহাস জেনে শনাক্ত করা হয়। কিছু কিছু সেকেন্ডারি মাথাব্যথা আছে, যা মাইগ্রেনের উপসর্গের সঙ্গে একটু মিলে যায়। সে ক্ষেত্রে ব্রেনের সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে মাথাব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করতে হয়। এ ছাড়া কিছু রুটিন ব্লাড টেস্টও করতে হতে পারে।

অনুষ্ঠানে নারীদের মাথাব্যথা নিয়ে আলোচনা করা হয়। ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, অন্যদের তুলনায় নারীদের টেনশন এবং মাইগ্রেনের মাথাব্যথার প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের। কারণ, তাঁদের সংসার সামলানোর পাশাপাশি অফিসের কাজও করতে হয়। সব জায়গায় একটা চাপের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। যেসব নারীর এমন সমস্যা আছে, তাঁদের উচিত ডিসিপ্লিনের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করা। কাজের সময় ভাগ করে নেওয়া, ফাঁকে যথেষ্ট বিশ্রাম এবং ভালো ঘুম, পরিমিত আহার ইত্যাদি। মাইগ্রেন থাকলে, যে কারণে অ্যাটাক হয়, সেই জিনিস বা কাজ এড়িয়ে চলা।

ব্যায়ামের মাধ্যমে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন অ্যাটাক প্রতিরোধ করা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সে রকম কোনো নির্দিষ্ট ব্যায়াম নেই, যার মাধ্যমে এগুলো প্রতিরোধ বা প্রতিকার সম্ভব। কিন্তু আমরা রোগীদের সকাল কিংবা রাতে আধা ঘণ্টা হাঁটার পরামর্শ দিই। খোলা জায়গায় হাঁটলে বাতাসে মন ফ্রেশ হয়, মাথা রিল্যাক্স হয়। ঠিক একই কারণে মেডিটেশন করার কথাও বলি আমরা। এসবের সঙ্গে ফ্রি–হ্যান্ড ব্যায়াম বা যোগাসন করলে অনেক ক্ষেত্রে মাথাব্যথার অ্যাটাক কমে আসে।’