মাথাব্যথা নিয়ে কিছু কথা

জুন মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা সচেতনতা মাস। এ উপলক্ষে টাফনিলের সহযোগিতায় আয়োজিত হলো বিশেষ অনুষ্ঠান ‘মাথা নিয়ে মাথাব্যথা’। আয়োজনের প্রথম পর্বের বিষয় ‘মাথা নিয়ে যত ব্যথা’। সুষ্মিতা শ্রুতি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাঈম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক মনজুর। অনুষ্ঠানটি ৯ জুন প্রথম আলো ও এসকেএফের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

জুন মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা সচেতনতা মাস
ছবি: সংগৃহীত

শুরুতেই ডা. আবু নাঈম মাথাব্যথা কী ও তার ধরন নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘নানা কারণেই আমাদের মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এটি দুরকমেরÑ প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি পর্যায়ে মাথার নিজস্ব রোগের কারণে মাথাব্যথা হয়ে থাকে। এখানে দুধরনের মাথাব্যথা বেশি দেখা যায়। টেনশনজনিত ও মাইগ্রেন। প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ টেনশনজনিত মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষের মাইগ্রেনের ব্যথা হয়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের কোনো সমস্যা হলে সেকেন্ডারি পর্যায়ের মাথাব্যথা হয়। যেমন অনেকের চোখে ব্যথা হলে মাথাব্যথা হয়। আবার নাক, কান, গলা বা দাঁতের ইনফেকশনের জন্যও মাথাব্যথা হতে পারে।’

ডা. আবু নাঈম আরও বলেন, ‘টেনশনজনিত মাথাব্যথার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে স্ট্রেস। এ ছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে, অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম, ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইমের জন্য মাংসপেশির চাপ সৃষ্টি ইত্যাদি। মাইগ্রেনের ব্যথার কিছু ট্রিগার রয়েছে। যেমন বেশিক্ষণ ভ্রমণ করা, বেশি রোদে বা ঠান্ডার মধ্যে থাকলে বা পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর সংবেদনশীলতা থাকলে মাইগ্রেন হতে পারে।’

সুষ্মিতা শ্রুতি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হসপিটালের নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবু নাঈম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক মনজুর
ছবি: সংগৃহীত

তারিক মনজুর কথা বলেন শিক্ষার্থীদের মাথাব্যথা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া-আসা শিক্ষার্থীদের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। আবার পড়াশোনার চাপও রয়েছে। ক্লাসে বা পরীক্ষার হলে দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থায় বসে থাকার জন্য মাথাব্যথা হয়। এই সবকিছু নিয়ে আমাদের সবারই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের মাথাব্যথার প্রতিকার বিষয়ে ডা. আবু নাইম বলেন, ‘প্রথম থেকে দশম শ্রেণি, অন্যদিকে কলেজ পর্যন্ত আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের অনেক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। স্কুল শেষে বাসায় এসে পড়াশোনা, আবার কোচিং করা— চাপ দিয়ে বাবা-মায়েরা তাদের থেকে ভালো ফল আদায় করতে চান। এভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ই একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার ভেতর পড়েন। সমগ্র ব্যবস্থাটা ঠিক না করলে, মাথাব্যথা কমানো নিয়ে আলাদাভাবে শিক্ষার্থীকে উপদেশ দিয়ে কোনো লাভ নেই।’  

একই প্রসঙ্গে তারিক মনজুর বলেন, ‘স্কুল-কলেজের “ভালো ফলের চাপ” শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সঙ্গে নিয়ে আসে। এ চাপ থেকে তারা কখনোই বের হতে পারে না। পরবর্তী কর্মজীবনেও নানা রকমের দুশ্চিন্তা তাদের পীড়া দিতে থাকে। তবে কিছুদিন আগে আমাদের নতুন যে কারিকুলাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে শিক্ষার্থীদের হোমওয়ার্ক বলতে কিছু থাকবে না, নাম্বারভিত্তিক পড়াশোনা হবে না। শিক্ষার্থীরা শুধু যোগ্যতার ভিত্তিতেই পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হলে তাঁরা শিক্ষকের কাছে যেতে পারেন। তাঁদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। আবার অনেক কর্মকাণ্ডের সুযোগ রয়েছে, যেগুলোর মধ্য দিয়ে তাঁরা নিজেদের উজ্জীবিত করতে পারেন।’
মাথাব্যথার কিছু রেডফ্ল্যাগ চিহ্ন আছে। যেমন ঘুম থেকে উঠে মাথাব্যথা, ব্যথার সঙ্গে বমি বা খিঁচুনি ইত্যাদি। এগুলো না থাকলে ধরে নিতে হবে প্রাথমিক পর্যায়ের মাথাব্যথা। স্ট্রেসজনিত মাথাব্যথা হলে যে কারণে দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ হয়, সেগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। ঠিকমতো ঘুমাতে ও খেতে হবে। ব্যায়াম করতে হবে। প্রয়োজনে মেডিটেশন করা যেতে পারে।

সুষ্মিতা শ্রুতি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মাথাব্যথা নিয়ে কথা বলেছেন ডা. আবু নাঈম ও অধ্যাপক তারিক মনজুর
ছবি: সংগৃহীত

মাথাব্যথার  ওষুধ দুরকমের: দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি। দীর্ঘমেয়াদি ওষুধগুলো সাধারণত ব্যথা না হলেও খেতে হয়। যাদের সপ্তাহে দুবারের বেশি মাইগ্রেন অ্যাটাক হয়, তাদের এ ধরনের ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়। এতে মাথাব্যথা হওয়ার হার কমে আসে। আর স্বল্পমেয়াদি ওষুধগুলো কেবল ব্যথা শুরু হলেই সেবন করতে হয়।