মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্যথা হলে চিকিৎসার পরামর্শ

দুঃখজনক হলেও সত্য, এ দেশে নারীস্বাস্থ্য একটি অত্যন্ত উপেক্ষিত বিষয়। বিশেষত নারীস্বাস্থ্যের সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি দেখা যায়। এ নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের রয়েছে অত্যন্ত অপ্রতুল জ্ঞান ও নানাবিধ ভুল ধারণা।

৮ মার্চ ‘নারী দিবসকে’ সামনে রেখে প্রথম আলোর আয়োজনে ২ মার্চ শুরু হয়েছে ‘নারীস্বাস্থ্য ও মাথাব্যথা’বিষয়ক ধারাবাহিক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা। গতকাল বুধবার প্রথম পর্বে ‘পিরিয়ডকালীন মাথাব্যথা’ নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে আলোচক হিসেবে যোগ দিয়ে জেড এইচ শিকদার ওমেনস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ জিন্নাত আরা নাসরিন এসব কথা বলেন।

এসকেএফ নিবেদিত এ অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন সুস্মিতা শ্রুতি চৌধুরী।
নারীদের প্রকৃতপক্ষে কী কী কারণে মাথাব্যথা হয় এবং এই মাথাব্যথার প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শেখ জিন্নাত আরা নাসরিন বলেন, বিভিন্ন কারণে নারীদের মাথাব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে মানসিক চাপ, অনিদ্রা, চোখের সমস্যা, দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার ও মুঠোফোন ব্যবহার করা, রোদ বা চুলার তাপ, এলার্জিসহ নানাবিধ কারণ রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, যেকোনো সংক্রমণ এবং অত্যন্ত বিরল ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের টিউমার, সেখানকার কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধিজনিত সমস্যায় মাথাব্যথা হতে পারে। তবে নারীদের মাসিক চলাকালে অনেকেই মাথাব্যথায় ভোগেন এবং যাঁদের আগে থেকেই মাইগ্রেনসহ অন্য ধরনের ক্রনিক মাথাব্যথার ইতিহাস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও অনেকটা বেড়ে যায়।

বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীদের এক বিরাট অংশ মাসিককালীন মাথাব্যথায় খুবই কষ্ট পান উল্লেখ করে এই চিকিৎসক বলেন, হরমোনের ভারসাম্য কমবেশি হওয়ার কারণেই এই মাথাব্যথা হয় এবং সাধারণত কোনো গুরুতর সমস্যা থাকে না। মাসিক শেষ হয়ে গেলেই এই ব্যথা উপশম হয়। এমন মাথাব্যথায় টাফনিলের মতো নন-স্টেরয়েড প্রদাহরোধী ওষুধ খুবই কার্যকর বলে জানান তিনি। তবে ব্যথা খুব বেশি হলে এবং অন্য সময়েও মাথাব্যথা থাকলে তিনি যথোপযুক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী।

মাসিকের সময় মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে ডিসমেনোরিয়া বা পেটব্যথা হয়, তা নিয়েও আলোচনা করেন অধ্যাপক ডা. শেখ জিন্নাত আরা নাসরিন। তিনি বলেন, কিশোরী ও তরুণীদের ক্ষেত্রে এই পেটব্যথা সাধারণভাবে প্রায়ই দেখা যায় এবং তবে এ ধরনের ব্যথায় তেমন কোনো ক্ষতিকর কারণ থাকে না। মাসিকজনিত প্রদাহ ও পেশি সংকোচন বা কনট্রাকশনের জন্যই সাধারণত এই প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়া হয়। এই ব্যথার জন্যও টাফনিল অত্যন্ত উপযোগী। আর এ ধরনের ওষুধ বাজারে আনার জন্য তিনি এসকেএফকে ধন্যবাদ জানান। তবে অতিরিক্ত ব্যথা হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে বলে মনে করে তিনি।

৩৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সের নারীদের জন্য মাসিকের সময় অতিরিক্ত পেটব্যথা খুবই গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেকোনো সংক্রমণ, সিস্ট, পলিপ, বিভিন্ন গাইনোকলজিক্যাল সমস্যা, এমনকি টিউমার বা ক্যানসারের কারণে এমন অসহ্য ব্যথা হতে পারে, যা সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধে কমে না।

এক প্রশ্নের জবাবে জীবনযাপনের সঠিক পদ্ধতি মেনে চলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন এই বিষেশজ্ঞ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম, ইতিবাচক মনোভাব এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে মেশার মতো বিষয়গুলোর ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এ জন্য খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত ব্যায়াম করার তাগিদ দিয়ে ডা. শেখ জিন্নাত আরা বলেন, কেবল যাঁদের ওজন বেশি তাঁরাই নন, সবার জন্যই নিয়মিত ব্যায়াম সমান গুরুত্বপূর্ণ।

আলোচনার শেষ ভাগে পিরিয়ড নিয়ে সমাজে নানা প্রচলিত কুসংস্কার ও ভুল ধারণা–সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে ডা. শেখ জিন্নাত আরা নাসরিন বলেন, মাসিক চলাকালে কিশোরী, তরুণীসহ সব নারী সব ধরনের কাজ করতে পারবেন। সাধারণ অবস্থায় এতে কোনোই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে এ সময় রক্তক্ষরণ হয়। ফলে সবারই এই কয় দিন সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।