পাঠকের প্রশ্ন
মেয়েটি আমার জীবন ও ক্যারিয়ার শেষ করে দিয়েছে, বিচার পাব কি?
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার
প্রশ্ন: একটা মেয়ের সঙ্গে আমার সাত বছরের সম্পর্ক ছিল। তাকে আমি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম, এখনো বাসি। মেয়েটির অনেকগুলো বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা ছিল, কিন্তু আমি বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতাম না। কারণ, আমি তাকে অন্ধের মতো ভালোবেসেছি। মেয়েটির সঙ্গে বেশ কয়েকবার আমার শারীরিক সম্পর্কও হয়। মেয়েটি আমাকে অনেকবার নিশ্চয়তা দিয়েছিল, যেকোনো অবস্থাতেই সে আমাকে বিয়ে করবে। আমি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভালো একটা চাকরি করতাম। শুধু তার ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে চাকরি ছেড়ে সরকারি চাকরির চেষ্টা করি। আমি তাকে পাওয়ার জন্য যা বলেছে, করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, মেয়েটি হঠাৎ করে আমাকে কিছু না জানিয়ে নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করে ফেলে। এমনকি বিয়ের পরে একটিবারও ফোন দিয়ে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেনি। এখন আমার প্রশ্ন, মেয়েটি যে আমার জীবন, ক্যারিয়ার, স্বপ্ন সব শেষ করে দিল, এ জন্য কি বিচার চাইতে পারি না?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনাকে যে এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। প্রথমেই আপনার প্রশ্নের উত্তরে আসছি। প্রেমে পড়ে প্রতারিত হলে দেশের প্রচলিত আইনে তেমন কোনো প্রতিকার নেই। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটি পক্ষ মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রেম করে। নিজের পরিচয়, আর্থিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অন্য পক্ষকে প্রভাবিত করে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে। সেসব ক্ষেত্রে যে পক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়, সে অপর পক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
দণ্ডবিধির ৪১৬ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তির নকল হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে এবং সেই পরিচয়ে কারও সঙ্গে প্রেম করে ধোঁকা দেয় বা প্রতারণা করে, তবে সে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। এর জন্য সে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে এক পক্ষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আদালতে মোকদ্দমা করতে পারে। যদি কোনো এক পক্ষ অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করে এবং বিশ্বাস অর্জন করে অপর পক্ষের অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেয়, তাহলে বাংলাদেশে প্রচলিত দণ্ডবিধির ৪১৫ থেকে ৪২০ পর্যন্ত বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী তা প্রতারণা হিসেবে বিবেচিত হবে। দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারাতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব খাটিয়ে তার কোনো কিছু হাতিয়ে নেয়, (তার সম্মতি থাকলেও) সেটা প্রতারণা হিসেবে গণ্য করা হবে। উপরিউক্ত প্রতারণার জন্য সেই ব্যক্তি দণ্ডবিধির ৪১৭ ধারার অধীনে এক বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আবার যদি কোনো ব্যক্তি কোনো সম্পত্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রতারণা করেন, তবে তিনি দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় দোষী হবেন এবং সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে।
আপনার প্রশ্ন থেকে আমার মনে হচ্ছে না আপনার সাবেক প্রেমিকা এমন কিছু করেছেন, যা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে। তবে তিনি আপনার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে বিষয়টি দুই পক্ষের জন্যই সম্মানজনক হতো। কী পরিস্থিতিতে তিনি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। আপনার সাবেক প্রেমিকা তাঁর স্বামীকে ঠকালেন কি না, এটি আপনার বিষয় নয়। এটি তাঁদের দুজনের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। অনেকেই প্রেমে প্রতারিত হয়ে সাবেকের নানা ক্ষতি করার চেষ্টা করেন, যা ভীষণ রকম অন্যায়।
যিনি চলে গেছেন, তাঁকে নিয়ে আফসোস না করে ইতিবাচকভাবে নিজের জীবনে পরিবর্তন আনুন। শুভকামনা।
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ই-মেইল: [email protected], ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA খামের ওপর ও ই-মেইলের subject–এ লিখুন ‘মনের বাক্স’