শজনে–চা খাওয়া যায় দুইভাবে
১. শজনেপাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে সংরক্ষণ করা যায়। পরে চায়ের পাতার মতো ব্যবহার করা যায়। অথবা শুকনা পাতা ফুটানো পানিতে দিয়েও চা বানানো যায়।
২. তাজা শজনেপাতা পানিতে ফুটিয়ে চায়ের মতো খাওয়া যায়।
নিয়মিত শজনে–চা খাওয়ার অভ্যাস করা হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে ।
প্রতি ১০০ গ্রাম শজনেপাতাযর পুষ্টি উপাদান
ফ্যাট ১.৪ গ্রাম, সোডিয়াম ৯ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৮.৩ গ্রাম, ক্যালোরি ৯২, প্রোটিন ৬.৭ গ্রাম, খাদ্য–আঁশ ২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৩৭ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৪২ মিলিগ্রাম, ফোলেট ৪০ মাইক্রোগ্রাম, নায়াসিন ২.২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৭৫৬৪ আইইউ ও ভিটামিন সি ৫১.৭ মিলিগ্রাম।
শজনে-চায়ের উপকারিতা
প্রতি ১০০ গ্রাম শজনেপাতায় একটি কমলার চেয়ে প্রায় সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে। তাই এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে।
শজনেপাতায় দুধের চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তাই এটি হাড় ও দাঁতের সুস্থতার জন্য উপকারী।
এ পাতায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই শজনে-চা পান করা হলে তা রক্তশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
মানুষের শরীরে খাদ্যের মাধ্যমে যে অ্যামিনো অ্যাসিডগুলো সরবরাহ করতে হয়, তার প্রায় সব কটিই আছে শজনেপাতায়।
শজনেপাতার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা থাকায় এটি লিভার ও কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
শজনেপাতায় আইসো থায়োসায়ানেট থাকে। ফলে নিয়মিত শজনেপাতা খাওয়া হলে তা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য শজনেপাতার চা বেশ উপকারী।
গর্ভবতী ও প্রসূতিদের জন্য শজনেপাতা খুবই উপকারী। এটি গর্ভকালীন অসুস্থতা, যেমন মাথা ঘোরানো ,বমি বমি ভাব ,খাবারে অরুচি প্রভৃতি সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া নিয়মিত শজনে–চা খাওয়া হলে তা মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
শজনেপাতা অ্যান্টি–অক্সিডেন্টে ভরপুর। তাই এটি পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
শজনেপাতায় প্রচুর ফাইবার থাকে এবং এতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড থাকে, যা স্বাভাবিকভাবে ওজন কমাতে ও শরীরে জমে থাকা চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাই ওজন কমানোর জন্য শজনে-চা খুব উপকারী ভূমিকা পালন করে।
শজনেপাতায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন ই ইত্যাদি থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। এ ছাড়া এতে ভিটামিন সি থাকে, যা নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনে সাহায্য করে। এই নাইট্রিক অক্সাইড রক্তনালির কার্যক্ষমতা সঠিক রাখে। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
শজনেপাতায় বায়োটিন, ভিটামিন বি সিক্স, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন ই ও ভিটামিন এ থাকে, যা চুল পড়া বন্ধ করে। এ ছাড়া এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলকে প্রাণবন্ত ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হতে সাহায্য করে।
তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শজনেপাতার চা রাখা হলে তা বিভিন্ন দিক থেকে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
লেখক: পুষ্টিবিদ, লেকসিটি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, খিলক্ষেত, ঢাকা