শিশুর কোভিড–সংশ্লিষ্ট রোগ

করোনাকালে শিশুর জ্বর, র‌্যাশ, চোখে রক্ত ওঠা, জিহ্বা-ঠোঁট লাল, গলার পাশের গ্রন্থি ফোলা—এসব লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে।

ইদানীং শিশুরাও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, করোনা–পরবর্তী ঢেউয়ে শিশু-কিশোরদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনা–সংশ্লিষ্ট প্রদাহের কারণে একধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে শিশুদের। এই রোগের নামÑএমআইএস-সি (মাল্টিপল ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম-ইন চিলড্রেন), কখনো বলা হয় পিএমআইএস (পেডিয়াট্রিকস মাল্টিপল ইনফ্ল্যামেটরি সিনড্রোম)। এই মারাত্মক সিনড্রোমের কার্যকারণ, রোগচিত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ব্যবস্থাপনা এখনো সম্পূর্ণ জানা যায়নি।

করোনা–পরবর্তী প্রদাহজনিত জটিলতা থেকে এর উৎপত্তি। যেহেতু শিশুর করোনা সংক্রমণ প্রায় উপসর্গহীন থাকে বা মৃদু উপসর্গ থাকে, তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ল্যাব পরীক্ষায় তা সুনিশ্চিত হওয়া যায় না। অনেক সময় শিশুদের ক্ষেত্রে পিসিআর টেস্টেও করোনা ‘নেগেটিভ’ আসে। তবে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর অনেক সময় শিশুদের শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়। এতে অনেকেই মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। ধারণা করা হয়, করোনা সংক্রমণের ফলে শরীরে ‘ইমিউনোলজিক্যাল অতি প্রতিক্রিয়া’ এর জন্য দায়ী। এর কারণে হৃদ্‌যন্ত্র, রক্তনালি, কিডনি, ত্বক, চোখ, ফুসফুসসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে জটিলতা দেখা দেয়। তাই করোনাকালে শিশুর জ্বর, র‌্যাশ, চোখে রক্ত ওঠা, জিহ্বা-ঠোঁট লাল, গলার পাশের গ্রন্থি ফোলা—এসব লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে। ৩ থেকে ১২ বছরের শিশুদের এ রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষণসমূহ

● প্রধান লক্ষণগুলো হলো ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে একনাগাড়ে জ্বর, বমি, ডায়রিয়া, পেটব্যথা, বুকব্যথা, চোখ ওঠা বা রক্তাভ চোখ, হাত-পা ফোলা ও র‌্যাশ, জিহ্বা-মুখগহ্বরে লালচে ঘা।

● হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, পানীয়, খাবার গ্রহণ বা বসতে-দাঁড়ানোর সক্ষমতা কমে যাওয়া, চৈতন্য লোপ পাওয়া।

● এই রোগে আক্রান্তদের তেমন শ্বাসকষ্ট থাকে না। তবে কাশি, গলাব্যথা থাকে। অনেক সময় রক্তচাপও কমে যায়।

● হাঁটতে গেলে একদিকে হেলে পড়া, কথা বলতে অসুবিধা—এমন সমস্যাও হতে পারে।

চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও প্রতিরোধ

● শিশুর এসব উপসর্গ দেখা দিলে সময়ক্ষেপণ না করে হাসপাতালে বা শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। দেরিতে চিকিৎসা শুরু করলে বেশির ভাগ শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। ফলে মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ে।

● চিকিৎসকের পরামর্শে করোনা অ্যান্টিবডি পরীক্ষাসহ ফুসফুসের সিটি স্ক্যান ও রক্তের কিছু সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা করাতে হবে।

● এই রোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে বড় উপায় হলো শিশু যাতে করোনা রোগীর সংস্পর্শে না আসে, সেদিকে লক্ষ রাখা। তাই শিশু আছে, এমন পরিবারের কেউ যাতে করোনায় আক্রান্ত না হয়, সে জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

● দেশে শিশুরা যেহেতু টিকার আওতার বাইরে, তাই তাদের নিয়ে অকারণে বাড়ির বাইরে না যাওয়াই শ্রেয়। এরপরও বাইরে গেলে শিশুর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিন।