শিশুর মানসিক দুশ্চিন্তা!

শিশু বয়সে এমন কতগুলো উপসর্গ আছে, যা তার মানসিক দুশ্চিন্তাজাত। কিন্তু এসব আবার কোনো কোনো গভীর অসুখের উপসর্গও বটে। বস্তুত এ অবস্থায় এসব উপসর্গ কোনো গুরুতর অসুখজাত কি না, তা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়েই কেবল তার আচরণজনিত কারণে হচ্ছে—রায় দেওয়া যায়। তবে প্রয়োজনে শিশুর যথাযথ কেস হিস্ট্রি, শারীরিক পরীক্ষা ও ল্যাব টেস্টের সাহায্য লাগে।
মনে রাখা চাই:
*শিশু বয়সে অনেক অসুখ যেমন তার মানসিক রোগের সৃষ্টি করে, তেমনি শারীরিক রোগের উপসর্গ নিয়ে আসে।
*শিশু অ্যাজমার রোগীর কথা ধরা যাক: মা-বাবা সামান্য সর্দি-কাশি হলে ‘বাচ্চার অ্যাজমা অ্যাটাক’ হয়ে যাবে বলে সন্তানকে স্কুলে পাঠান না। এতে সন্তান ক্লাস ও রুটিন পরীক্ষায় পিছিয়ে যাওয়ার জন্য টেনশনে পড়ে যায়। স্কুল কামাই যত চলতে থাকে, ততই শিশু ও মা-বাবা দারুণ চ্যালেঞ্জে পড়ে যান। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সাহায্য নিয়ে এই দুর্ভেদ্য চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মা-বাবার শিশুকে নিয়ে ‘অতি দুশ্চিন্তা রোগ’ থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে।
*স্কুলের পড়াশোনার বেশ কিছু সমস্যা শিশুর মানসিক উপসর্গ তৈরি করে। স্কুলের পড়া ভালোমতো বলতে না পারা, শিক্ষক–ভীতি, তার মধ্যে আচরণজনিত উপসর্গ তৈরি করে। সে তখন হয়ে পড়ে স্কুল পালানো ছাত্রছাত্রী।এর সঙ্গে শিশুর কোনোরূপ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা তাকে আরও পিছিয়ে দেয়, যেমন সে যদি হয় শ্রবণপ্রতিবন্ধী।
*শিশু যদি মৃগীরোগী হয়, বিশেষ করে খিঁচুনি নিরোধক অনেক ওষুধ সেবন তার মনোযোগ ধরে রাখাতে সমস্যা সৃষ্টি করে।
*যে শিশু প্রিম্যাচিওর বা জন্মকালীন শ্বাসরোধ জটিলতার শিকার হয়েছে, বুদ্ধি বিকাশে পিছিয়ে আছে, তার জন্য সমানতালে অন্য শিশুদের মতো জীবনযাপন সম্ভব হয় না। ফলে সে হতে পারে মানসিক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রোগীও।
*যে শিশু ঘন ঘন রক্তে কম গ্লুকোজ মাত্রা অসুখে পতিত হয়, বা অ্যানিমিয়ায়, ইনফেকশনে বা দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়ায় ভোগে, সে শিশু খিটখিটে মেজাজের হতে পারে।
*শিশুর মস্তিষ্কের টিউমার বা মস্তিষ্কের যক্ষ্মা রোগ আচরণগত উপসর্গ দিয়ে প্রকাশ পায়।
*যেসব শিশু দীর্ঘমেয়াদি অন্যান্য রোগে ভোগে যেমন: ডায়বেটিস, হিমোফেলিয়া, মাসকুলার ডিসট্রোপি, বাত ব্যাধি, কান বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, তার স্কুল পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়, সে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হতে পারে।
*একইভাবে থাইরোটক্সিকোসিস (থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য), মাইগ্রেন (শিরঃপীড়া), মেদবহুল শিশু, খাটো শিশু নানা রূপ আচরণজনিত উপসর্গ নিয়েও হাজির হয়। শিশু বয়সে একজিমা জাতীয় শিশু অসুখ; চিরস্থায়ীভাবে যা খুব চুলকায় ও তাকে কষ্ট দেয়, তার মধ্যে মানসিক উপসর্গ তৈরি করতে পারে।
*শিশু বয়সে মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে শিশু যেসব শারীরিক উপসর্গ প্রকাশ করে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ডায়রিয়া, পেটব্যথা, বমি, বারবার প্রস্রাব আসা, বিছানা ভেজানো, খিদে লোপ পাওয়া, খাবার হজমে গন্ডগোল, অখাদ্য খেয়ে ফেলা, মাথাব্যথা, বুকব্যথা ও হাত–পায়ে ব্যথা ইত্যাদি।
শিশুর মধ্যে কোনো শারীরিক অসুখ নেই, কিন্তু মানসিক দুশ্চিন্তা লাঘবের তাড়না থেকে তার মধ্যে এসব উপসর্গ জন্ম নেয়।
প্রণব কুমার চৌধুরী
বিভাগীয় প্রধান, শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ