শিশুর স্থূলতা প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

জোর করে না খাওয়ানো। মুঠোফোন, টেলিভিশন দেখিয়ে খাওয়ানোর অনুশীলন বন্ধ করতে হবে। শিশুরা ক্ষুধার্ত হলেই শুধু খাবার দিতে হবে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীর একটু ভারী হবে, মেদ জমবে, স্থূল হয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শিশুদের ঝরঝরে পাতলা ছুটন্ত শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমা, মুটিয়ে যাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া মোটেও স্বাভাবিক নয়। তবে ইদানীং শিশুদের মধ্যেও স্থূলতার হার বেড়েছে।

শিশুর স্থূলতার কারণ

কোনো শিশুর শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে বয়স অনুপাতে ওজন বেশি হয়ে গেলে, তাকে স্থূলকায় বলা যায়। বৈজ্ঞানিকভাবে শিশুর শরীরের ওজন এবং তার উচ্চতার একটা আনুপাতিক হিসাব করে স্থূলতা সঠিকভাবে নির্ণয় করা হয়।

শিশুর মোটা হয়ে যাওয়ার যতগুলো কারণ আছে, তার মধ্যে প্রয়োজনীয় কায়িক পরিশ্রমের ঘাটতি এবং বেশি বেশি ও বারবার খাওয়ানো অন্যতম। অধিক শর্করাযুক্ত খাবার, যেমন বেশি ভাত, মিষ্টি, কোমল পানীয় অথবা চর্বিযুক্ত খাবার, জাঙ্ক ফুডে আসক্তি শিশুর স্থূলতার কারণ। এর পাশাপাশি বংশগত কারণ, শরীরে হরমোনজনিত সমস্যা, যেমন থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি, মেয়েদের পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা, লম্বা সময় ধরে স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ সেবন অথবা শরীরে করটিসল হরমোনের আধিক্যও স্থূলতায় ভূমিকা রাখে।

স্থূলতার কারণে যেসব সমস্যা হয়

  • অতিরিক্ত মোটা শিশুদের অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

  • স্থূলকায় শিশুদের রক্তে অতিরিক্ত চর্বি বেড়ে যায় এবং তাদের করনারি রক্তনালির সমস্যা, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি বেশি।

  • শরীরের অতিরিক্ত ওজনে হাতে ব্যথা, পা বাঁকা ইত্যাদি সমস্যাও হতে পারে।

  • স্থূলকায় অনেক শিশুর নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে হাঁপানির প্রকোপও বেশি। অনেকের আবার ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট হয়।

  • অনেকের ঘাড়ের চামড়া কালো হয়ে যায়।

  • স্থূলকায় শিশুরা কাজকর্মে অল্পতে হাঁপিয়ে যায়। এদের অলস হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।

  • অনেকের যকৃতে চর্বি জমে ফ্যাটি লিভার নামক একধরনের রোগের সৃষ্টি হয়।

প্রতিরোধ

  • স্বাস্থ্যকর ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের বিষয়ে শিশুকে সচেতন করা।

  • দৈনিক খাবারের সময় নির্ধারণ করে বাসার সবাই যতটা সম্ভব একসঙ্গে বসে খাওয়ার অনুশীলন করা।

  • জোর করে না খাওয়ানো। মুঠোফোন, টেলিভিশন দেখিয়ে খাওয়ানোর অনুশীলন বন্ধ করতে হবে। শিশুরা ক্ষুধার্ত হলেই শুধু খাবার দিতে হবে।

  • শিশুকে সব সময় খাইয়ে না দিয়ে নিজে নিজে খেতে উৎসাহ দিতে হবে।

  • দোকানের কেনা অতিরিক্ত চর্বি ও চিনিজাতীয় খাবার না দিয়ে বাড়িতে তৈরি শাকসবজি, মাছ, ডাল ইত্যাদি শিশুর চাহিদা অনুযায়ী দিতে হবে। পরিমিত মাংস খাওয়াতে হবে। চিনিযুক্ত কোমল পানীয় নিরুৎসাহিত করতে হবে।

  • নিয়মিত কায়িক পরিশ্রমের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

  • শিশুর স্থূলতার কারণ নির্ণয় করতে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র অথবা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। জটিলতা তৈরি হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।