একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের মোট ওজনের ৫৫ দশমিক ৬০ শতাংশ গঠিত হয় পানির মাধ্যমে। তবে এক বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে এ হার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ। প্রশ্ন হলো, ছোট্ট শিশুর পানির চাহিদা পূরণ হয় কীভাবে? উত্তরটাও সহজ; বুকের দুধ, খাবার ও পানি খাওয়ানোর মাধ্যমে।
একেবারে ছোট শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করে। ছয় মাস বয়স হলে বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে বাড়তি খাবার দেওয়া হয়। সাধারণত শিশুখাদ্যে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। এ ছাড়া বেশির ভাগ শক্ত খাবারেও পানি থাকে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। ফল ও শাকসবজিতে রয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ পানি। শিশুর খাওয়ার উপযোগী খিচুড়িজাতীয় খাবার শরীরে প্রতি ১০০ কিলোক্যালরি শক্তি উৎপাদনের পাশাপাশি ১২ গ্রামের মতো পানিরও জোগান দেয়।
খাবার ও পানি পানের মধ্য দিয়ে শিশুর শরীরে পানি প্রবেশ করে। অন্যদিকে শ্বাসপ্রশ্বাস ও ত্বকের মাধ্যমে পানির জলীয় অংশ এবং প্রস্রাব ও মলের মাধ্যমে পানি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এ দুইয়ে মিলে মানুষের শরীরে জলীয় পদার্থের ভারসাম্যমূলক চক্র তৈরি হয়, যা কিডনির সুরক্ষায় সহায়ক।
উৎস ও সমস্যা
শিশুর পানির চাহিদা মেটানোর প্রধান উৎস মায়ের বুকের দুধ, খাবার পানি, অন্যান্য পানীয় ও খাবার (যেমন তরমুজ, স্যুপ প্রভৃতি)।
শিশুর পানির চাহিদার দৈনিক পরিমাণ পরিপাকক্রিয়া, শ্রম, শরীরের গঠন, আবহাওয়া ও সুস্থতা-অসুস্থতার ওপর নির্ভরশীল। জন্মের পর প্রথম ছয় মাস বুকের দুধ শিশুর পানির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। ছয় মাস পূর্ণ হলে পরিপূরক খাবারের সঙ্গে শিশুকে পানির জোগান দিতে হবে।
শিশুর শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে ও কর্মক্ষমতা অটুট রাখতে সমস্যা হয়। ফলে শিশুর হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, রক্তচাপ হ্রাস পায়, শিশু হঠাৎ মূর্ছা যাওয়ার রোগে (সিনকোপাল অ্যাটাক) আক্রান্ত হয়। এমনকি দীর্ঘদিন এ সমস্যা চলতে থাকলে শিশুর কিডনির সমস্যা ও কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়।
আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পান করার ফলেও হাইপোনেট্রেমিয়া বা শিশুর শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
করণীয়
শিশুকে প্রয়োজনের তুলনায় কম কিংবা বাড়তি পানি পান করানো যাবে না। বয়স অনুযায়ী শিশুকে কতটা পানি পান করানো উচিত, সেটা আগে জানতে হবে। সে অনুযায়ী পানি পান করাতে হবে।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল