
ম্যালেরিয়া নামের রোগটি বর্তমানে বিশ্বের ১০০টি দেশে এখনো বড় ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা, যার শিকার প্রায় পৃথিবীর ১৬০ কোটি মানুষ। বাংলাদেশও এ ঝুঁকির বাইরে নয়। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু।
অ্যানোফিলিস জাতীয় স্ত্রী মশার কামড়ের মাধ্যমে প্লাজমোডিয়াম নামের জীবাণু মানুষের রক্তে মেশে। নির্দিষ্ট সময় পর শরীরে এ সংক্রমণের উপসর্গ প্রকাশ পায়। ইদানীং প্লাজমোডিয়াম নোলেসি নামের নতুন ম্যালেরিয়া জীবাণুর আবির্ভাব হয়েছে, যা দেখা যাচ্ছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে। বাংলাদেশে ভিভাক্স গোত্রের প্রাদুর্ভাব বেশি। একে আপাতনিরীহ বলা হলেও এ থেকে শিশুমৃত্যুর হার একেবারে কম নয়। অসুখের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো: কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, জ্বরের মাত্রা সাধারণত অনেক বেশি, ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়া, অনেক সময় নির্দিষ্ট সময় পর পর জ্বর আসা, ক্লান্তি, রক্তাল্পতা, ধীরে ধীরে প্লীহা স্ফীতি ইত্যাদি। অনেক সময় জ্বর বেড়ে গিয়ে শিশু অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
প্রচণ্ড জ্বর এবং জ্বরের সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়ার ঘটনায় অন্যান্য জীবাণুঘটিত কারণের সঙ্গে ম্যালেরিয়াকেও বিবেচনায় রাখা উচিত। বিশেষ করে বিগত কিছুদিনের মধ্যে যদি শিশুর দেশে-বিদেশে কোনো পাহাড়ি বা জঙ্গল এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার ইতিহাস থাকে। তবে কেবল পাহাড়ি এলাকায় গেলেই যে ম্যালেরিয়া হবে, এমন কোনো কথা নেই। চিকিৎসক সঠিক রোগ নির্ণয় করে মুখে খাবার ওষুধ বা ইনজেকশন দিতে পারেন। হাসপাতালে ভর্তি করতে পারেন। তবে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অভিভাবকের অনেক কিছু করার আছে। যেমন শিশুকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করার জন্য—কোথাও বেড়াতে গেলে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন। ফুলহাতা জামা-প্যান্ট এবং মোজা ও জুতা পরাবেন। প্রয়োজনে ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় ঘুরতে গেলে পারমিথ্রিনযুক্ত বিশেষ মশারি ব্যবহার করবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওসব এলাকায় বেড়াতে যাওয়ার এক-দুই সপ্তাহ আগে থেকে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী ওষুধ সেবন করাতে শুরু করুন এবং ফিরে আসার পর চার সপ্তাহ পর্যন্ত তা চালিয়ে যেতে হবে। বিগত দু-এক মাসের মধ্যে ম্যালেরিয়াপ্রবণ এলাকায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলে শিশুর জ্বর বা অসুস্থতায় অবশ্যই তা চিকিৎসককে অবহিত করুন। শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল |