সৌন্দর্য আর সুস্থতার জন্য অ্যালোভেরা


শীত চলে গেছে, এসেছে বসন্তের দিন। হাওয়া বদলের এ সময়ে শরীরেও দেখা দেয় নানা পরিবর্তন। ত্বক ও চুল হারায় তাদের নিজস্ব আর্দ্রতা। এক্ষেত্রে সৌন্দর্য ধরে রাখতে ব্যবহার করতে পারেন ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরা।

ল্যাটিন শব্দ অ্যালোভেরা, বাংলায় এর নাম ঘৃতকুমারী। তবে, অ্যালোভেরা নামেই বেশি পরিচিত সাকুলেন্ট প্রজাতির এ উদ্ভিদ। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে, ত্বক ভালো রাখতে এর নির্যাস শরবত হিসেবে খাওয়া ও ত্বকে ব্যবহার দুটোই দারুণ উপকারী।

ত্বকের সৌন্দর্যে
মিসরের লোককাহিনি থেকে জানা যায়, রানি ক্লিওপেট্রা তাঁর সৌন্দর্য রক্ষায় ঘৃতকুমারী ব্যবহার করতেন। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ত্বককে মসৃণ ও কোমল রাখতে আজকাল প্রসাধনী তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় ঘৃতকুমারীর নির্যাস।

মেছতার দাগ দূর করতে
ঘৃতকুমারীর নির্যাসের সঙ্গে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল মিশিয়ে ত্বকে আলতোভাবে ঘষতে পারেন। নিয়মিত এটি ব্যবহারে ধীরে ধীরে মেছতার দাগ কমে যাবে।

ব্রণের সমস্যায়
ঘৃতকুমারীতে থাকা অ্যান্টি-ফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ নিরাময়ে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ব্রণের দাগ দূর করে। ঘৃতকুমারীর ভেতর থেকে জেল বের করে আইস ট্রেতে জমিয়ে বরফের কিউব তৈরি করেও ব্যবহার করতে পারেন।

মসৃণ ঠোঁট পেতে
ঠোঁটের মৃত কোষ দূর করতে চালের গুঁড়ার সঙ্গে ঘৃতকুমারীর রস মিশিয়ে কিছুক্ষণ ঘষতে পারেন। নিয়মিত ঘৃতকুমারীর জেল ব্যবহারের মাধ্যমে ঠোঁট থাকবে উজ্জ্বল ও কোমল।

চুলের যত্নে
ঘৃতকুমারী বা অ্যালোভেরায় থাকা অ্যালোমিন চুলকে লম্বা হতে সাহায্য করে। নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস খেলে বা চুলে ব্যবহার করলে খুশকি ও চুল পড়া কমে যায়। চুল হয়ে উঠে ঝরঝরে ও মসৃণ।

শরীর সুস্থ রাখতে
ঘৃতকুমারীতে রয়েছে মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যক আটটি অ্যামাইনো অ্যাসিড, বি-সিসটারোলসহ ১২টি উপাদান, যা শরীরে কোনো প্রদাহ তৈরি হওয়া ঠেকায়। হাত-পায়ের জয়েন্ট ও গিঁটের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস খেতে পারেন। আঁশযুক্ত হওয়ায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। পাকস্থলি সুস্থ রাখে। হজমের সমস্যা দূর করে। গরমে ঘৃতকুমারীর নির্যাসে তৈরি শরবত শরীর ঠাণ্ডা রাখবে। এতে থাকা নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ওজন কমিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতেও সাহায্য করে।

যেভাবে খাবেন ঘৃতকুমারী
শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে এবং রোগবালাই দূর করতে অতুলনীয় ঘৃতকুমারী। তবে, এটি ব্যবহারে সতর্কতার প্রয়োজন আছে। দিনে ২ বার ও ১০ মিলিলিটারের বেশি করা যাবে না। খেতে হবে শুধু পাতার ভেতরের জেল অংশের রসটুকু। চাইলে মধু মেশাতে পারেন।

শিশুদের খাওয়ানো যাবে না। তবে, কিশোর বয়স থেকে স্বাভাবিক সুস্থ, যে কেউ খেতে পারবেন। সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্যে খেতে চাইলে, কী পরিমাণ খাবেন, কখন খাবেন, কতদিন খাবেন সেটি একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন। রাস্তার পাশের ভ্যানে বিক্রি হওয়া অস্বাস্থ্যকর ঘৃতকুমারীর শরবত খাবেন না।