স্ট্রোক–পরবর্তী সময়ের চিকিৎসা

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

স্ট্রোক–পরবর্তী সময়ের চিকিৎসা কী হবে এ নিয়েও রয়েছে নানা জটিলতা। আমাদের দেশে অনেক সাধারণ মানুষই জানেন না স্ট্রোকে যদি কেউ প্যরালাইজড বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে তবে তাকে কী চিকিৎসা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কার্যকর একটি পদ্ধতি আছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বতন্ত্র চিকিৎসাপদ্ধতি। আর সেটা হলো ফিজিওফেরাপি। তবে অনেকেরই এ বিষয়ে তেমন কোনো ধারণা নেই।

ডা. লুবাইনা হকের সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা খাতুন

স্ট্রোক বিষয়ে সচেতন করতে ২৯ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। এ উপলক্ষে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘স্ট্রোক প্রতিরোধ ও পরামর্শ’। অনুষ্ঠানটির পঞ্চম পর্বে ডা. লুবাইনা হকের সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা খাতুন।

অনুষ্ঠানটি ৩১ অক্টোবর প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ ছাড়া সম্প্রচারিত হয় এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও।

স্ট্রোক বা স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এ ধরনের রোগীর মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায় অথবা শরীর অবশ হয়ে যায়। এসব রোগীর শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়ানো এবং অস্থিসন্ধি সচল রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাদের প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম করে তুলতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই। এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা খাতুন বলেন, স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর শারীরিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে। হেমোরেজিক স্ট্রোকের কারণে ক্ষতিটা হয় দীর্ঘ সময়ের জন্য। ইসকেমিক স্ট্রোকের উন্নতি খুবই ভালো।

তিনি বলেন, আমরা অভিজ্ঞতায় দেখেছি, রোগী যদি খুব দ্রুত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার আওতাধীন হয়, ৯৫ ভাগই আগের জীবনে ফিরে আসতে পারে। অসুস্থ অবস্থার একজন মানুষকে আগের মতো পরিস্থিতিতে নিয়ে আসাকেই আমরা পুনর্বাসন বলি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়। স্ট্রোকের পর শরীরের এক পাশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় অথবা কারও কারও কথা বলতে সমস্যা হয়। অনেকের চোখেও সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ ব্রেনের কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে শরীরে নানা সমস্যা তৈরি হয়। কারণ ব্রেনের এক এক অংশ শরীরের এক এক অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে।

আমাদের হাঁটাচলা, কাজকর্ম, কথা বলা, চোখে দেখা এবং আবেগ–অনুভূতি সবকিছুই ব্রেনের ভিন্ন ভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ব্রেনের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হলে এসব কাজেরও বিঘ্ন ঘটে। যেমন মস্তিষ্কের ডান দিকের অংশ শরীরের বাঁ দিকের অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে আবার বাঁ দিকের অংশ শরীরের ডান দিকের অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং কারও যদি ব্রেনের ডান দিকে স্ট্রোক হয়, তাহলে শরীরের বাঁ পাশের হাত-পায়ে প্যারালাইসিস হবে। যেহেতু আমাদের কথা বলা নিয়ন্ত্রণ করে ব্রেনের বাঁ অংশ সেহেতু কারও যদি বাঁ পাশে স্ট্রোক হয় তাহলে ডান হাত-পা প্যারালাইজড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কথা বলাতেও সমস্যা হতে পারে।

ফিজিওথেরাপি না নেওয়া হলে রোগী পেশির শক্তি ফিরে না–ও পেতে পারে। এ সময় রোগীর বিছানা থেকে উঠতে না পারা, হাঁটতে না পারা, নিজের দৈনন্দিন কাজ করতে না পারার কারণে মানসিক যন্ত্রণা ও বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়।

সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা খাতুন আরও জানান, একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের মূল লক্ষ্যই হলো স্ট্রোক–পরবর্তী সমস্যাগুলো নির্ণয় করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনা। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধও এই কাজ পুরোপুরি করতে পারে না। এর জন্য দরকার সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। তাই কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে অতি দ্রুত কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে এবং রোগী কিছুটা স্থিতিশীল হলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করতে হবে। মনে রাখতে হবে স্ট্রোকের পর যত তাড়াতাড়ি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করা যায়, রোগীর কার্যক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে। বিশেষ করে কিছু কিছু ব্যায়াম তাদের করতেই হয়।

পাশাপাশি তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে কিছু বিষয় থাকে, এগুলো একটু মেনে চলতে হয়। ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করার পরও মাঝেমধ্যে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে হবে। চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ করে দেখবেন রোগীর পেশিশক্তির কতটুকু উন্নতি হলো। যদি কোনো সমস্যা থাকে, এর ভারসাম্য রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন দেওয়া হবে। বিশেষ করে রোগীর অবস্থা বুঝে ভিন্ন ভিন্ন ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়।

সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরিদা খাতুন আবারও মনে করিয়ে দেন যে ফিজিওথেরাপি না নেওয়া হলে রোগী পেশির শক্তি ফিরে না–ও পেতে পারে। এ সময় রোগীর বিছানা থেকে উঠতে না পারা, হাঁটতে না পারা, নিজের দৈনন্দিন কাজ করতে না পারার কারণে মানসিক যন্ত্রণা ও বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়। সাধারণভাবে দুর্বল পেশি বা দুর্বল পাশটি রোগী কম ব্যবহার করতে চায়। ফলে এই দুর্বল পেশির আকার ছোট হয়ে আসে, কুঁচকে যায় ও শক্ত হয়ে যায়। অবশ অংশে সংক্রমণ, ঘা বা বেড সোর, রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো জটিলতা হতে পারে।