স্তনে চাকা হলে ভয় নয়, সচেতনতা জরুরি
জিনিয়া রহমান (ছদ্মনাম), বয়স ৩২ বছর। সম্প্রতি স্তনে ছোট ছোট চাকার মতো অনুভব করছেন। চিনচিনে ব্যথাও হচ্ছে। এদিকে মাসিকের সময়ও এগিয়ে আসছে। লক্ষ করলেন, প্রায়ই মাসিকের আগে এই ব্যথা হচ্ছে। এবারের ব্যথাটি মনে হচ্ছে একটু বেশিই অস্বস্তিকর। বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি। এত দিন মাথা না ঘামালেও এবার আর ব্যাপারটি নিয়ে অবহেলা করা ঠিক হবে না বলে মনে হচ্ছে তাঁর।
অনেক সময় নারীরা তাঁদের স্তনে এমন চাকা বা গোটা ভাব অনুভব করে থাকেন, ব্যথাও হয়। কখনো এক পাশের স্তনে, আবার কখনো উভয় স্তনেই এমন হতে পারে। সব চাকাই যে ক্যানসারের পূর্বলক্ষণ, তা নয়। এটি ব্রেস্ট সিস্টও হতে পারে। ক্যানসার ভেবে চিন্তিত হওয়ার কারণ না থাকলেও আপাতনিরীহ এসব চাকাকে অবহেলা করা উচিত নয়।
ব্রেস্টে সিস্ট কেন হয়
নারীশরীর নানা রকম পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এর মধ্যে স্তনের পরিবর্তন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কৈশোরে স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধির সময় থেকে শুরু করে মাসিক, গর্ভধারণ, স্তন্যদান, মেনোপজ বা রজোবন্ধ—এই রকম একেক ধাপে স্তনের আকৃতিগত বিবর্তন ঘটে। হরমোনের ওঠানামা, আঘাত, জীবাণুর সংক্রমণ, এমনকি বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এমন হতে পারে। এসব ক্রমাগত পরিবর্তনের ফলে স্তনের স্বাভাবিক গঠন ও গড়নে প্রভাব পড়ে। ফলে ব্রেস্টে সিস্ট হয়।
যেভাবে বুঝবেন
স্তনে সিস্ট চাকা বা গোটা হিসেবে অনুভূত হয়। এটি নরম বা শক্ত উভয়ই হতে পারে। সাধারণত খুব ছোট হয়ে থাকে, হাত দিয়ে অনেক সময় বোঝাও যায় না। তবে এটি কয়েক মিলিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। চিনচিনে ব্যথা হয়। মাসিকের আগে এ ব্যথা বেড়ে যায় এবং ফুলে বড় হয়। আলট্রাসনোগ্রাম বা ম্যামোগ্রাম করে স্তনের সিস্ট সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
যাঁদের হয়ে থাকে
ব্রেস্ট সিস্ট হতে পারে যেকোনো বয়সেই। তবে ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীরা, বিশেষ করে যেসব নারী ঋতুজরার দিকে যাচ্ছেন, তাঁরা এতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। মাসিক বন্ধের পর হরমোনের প্রভাব কমে যাওয়ায় এ সিস্ট হয়। এ ছাড়া যাঁরা হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন, তাঁদেরও এ সমস্যা হতে পারে।
সিস্ট ও ক্যানসার
সিস্ট থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে অনেক সময় ক্যানসারের সঙ্গে সিস্ট হয়ে থাকে। আর এটি হয়ে থাকে স্তনের নালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে। সিস্টের তরল পদার্থ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে রক্তের মতো কিংবা কিছুটা বেশি লালচে মনে হলে ক্যানসারের কোষ বা সন্দেহজনক কোষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
চিকিৎসা
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্রেস্ট সিস্টের জন্য চিকিৎসার দরকার হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব সিস্ট স্তনেই মিলিয়ে যায়। বেশি অসুবিধা হলে সুচ দিয়ে তরল পদার্থ বের করে ফেলা হয়। এরপর অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে একেবারেই সেরে যায়। এ ক্ষেত্রে সিরিঞ্জের মাধ্যমে বের করে আনা তরলের রং যদি লালচে বা রক্তমিশ্রিত হয়, তাহলে অবশ্যই পরীক্ষাগারে পাঠাতে হবে। আবার অনেকের ক্ষেত্রেই সিস্টের আকার ক্রমশ বড় হতে থাকে। এমতাবস্থায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই সিস্ট অপসারণের প্রয়োজন পড়ে।