রেস্তোরাঁয় অনেক দিন পর বন্ধুরা একসঙ্গে খেতে গেছেন। জমিয়ে আড্ডা চলছে। হঠাৎ কেউ একজন গলায় হাত দিয়ে তীব্র কাশি শুরু করলেন। চোখমুখ লাল, ইশারায় বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ বাংলায় একে আমরা বলি বিষম খাওয়া বা চোকিং। কিন্তু এই সমস্যা প্রাণঘাতীও হতে পারে! এ অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে কী করণীয়, আসুন জেনে নিই।

কাদের হয় ও কেন

বয়োবৃদ্ধ এবং ছোট শিশুদের গলার গ্যাগ রিফ্লেক্স কম থাকে। ফলে গলায় খাবার আটকে যেতে পারে। অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনেও একই ঘটনা ঘটে। অনেক সময় কিছু অসুখের কারণে এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়। যেমন পারকিনসনস ডিজিজেস বা ডিমেনশিয়ায় মানুষ খাবার গিলতে ভুলে যায়। ফলে গলায় খাবার আটকে যায়।

স্ট্রোকের রোগীদেরও পক্ষাঘাত বা প্যারালাইসিসের জন্য এমন ঘটনা ঘটে। অনেক বড় লোকমায় খাবার খেতে গেলে সেটা পুরো চিবানোর সুযোগ পাওয়া যায় না। ফলে না চিবানো খাবার গলায় ঢুকে আটকে যায়। অনেক সময় বাদামের মতো খুব ছোট আকারের খাবারও অতি সহজে আমাদের শ্বাসনালিতে ঢুকে চোকিং সৃষ্টি করে। খাবারের প্রতি মনোযোগের অভাব চোকিংয়ের একটি বড় কারণ। এ সমস্যা বেশিরভাগ সময় শিশুদের হয় কারণ, তারা খাওয়ার সময় খেলতে থাকে, টেলিভিশন দেখে বা দৌড়াদৌড়ি করে। খাওয়ার সময় কেউ যদি অন্য কাজ করেন, সেক্ষেত্রেও এই সমস্যা হতে পারে। ভাজাপোড়া শক্ত খাবার, চুইংগাম, ক্যান্ডি, বাদাম, পনির, পপকর্ন, পয়সা, কাঁচা সবজি ইত্যাদি থেকে অসাবধানতায় চোকিং হতে পারে।

শ্বাসনালির মুখে খাবার আটকে গেলে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। শরীরে অক্সিজেন চলাচল কমে যায়। এমনকি পুরোপুরি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে অ্যাসফাইক্সিয়া। শ্বাসনালি একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে হৃদ্‌যন্ত্র ও মস্তিষ্ক অক্সিজেনের অভাবে কাজ করতে পারে না। অবস্থা সংকটজনক হয়ে ওঠে। একে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে অ্যানোক্সিয়া। এ ক্ষেত্রে আটকে যাওয়া বস্তুটি দ্রুত বের না করে দিলে রোগীকে বাঁচানো যায় না।

খাবার হোক বা অন্য কিছু—শ্বাসনালিতে আটকে গেলে প্রথমেই নিশ্বাসে কষ্ট হবে। কাশি, বুকের মধ্যে হাওয়ার মতো শব্দ, বমি বমি ভাব, কথা বলতে না পারা, ঠোঁট নীল হওয়া বা জ্ঞান হারানোর মতো সমস্যাও হতে পারে।

তাৎক্ষণিক করণীয়

কোনো মানুষকে এ রকম পরিস্থিতিতে পড়তে দেখলে হেমলিচ্ ম্যানেউভারের সাহায্যে তাঁকে সুস্থ করে তোলা যায়। অসুস্থ মানুষকে পেছন থেকে জড়িয়ে দুই হাত দিয়ে পেটের ওপরের দিকে জোরে জোরে চাপ দিলে আটকে যাওয়া বস্তুটি দ্রুত বের হয়ে যাবে। খুব ছোট শিশুকে কোলে নিয়ে হাতের ওপর উপুড় করে পিঠে চাপড় দিতে হবে। অ্যাম্বুলেন্স ডেকে কাছের হাসপাতালে নিতে হবে। জিনিসটি বের না হওয়া বা হাসপাতালে চিকিৎসা না শুরু হওয়া পর্যন্ত পদ্ধতিটি চালিয়ে যেতে হবে। পুরোটা সময় খেয়াল রাখতে হবে রোগীর জ্ঞানের মাত্রা কমে যাচ্ছে কি না, রোগীর হার্ট বন্ধ বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে যাচ্ছে কি না। তাহলে দ্রুত বুকে চাপ তথা সিপিআর শুরু করতে হবে।

প্রতিরোধ

খাওয়ার সময় প্রতিটি খাবারে মনোযোগ দিন। ছোট ছোট গ্রাসে খাবার খেতে হবে এবং খাওয়ার সময় কথা কম বলতে হবে। দেড়-দুই বছরের শিশু বাড়িতে থাকলে তার হাতের কাছে ছোটখাটো জিনিস না রাখাই ভালো। খাওয়ানোর সময় বেশি তাড়াহুড়া করা যাবে না, জোর করে শিশুর মুখে খাবার গুঁজে দেওয়া অনুচিত। অসুস্থ ও বয়স্ক রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার দেওয়া উচিত।

লেখক: রেজিস্ট্রার, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা