হাত-পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরলে যা করবেন

হাত-পায়ের ওপর দীর্ঘক্ষণ চাপ পড়লে বা একই ভঙ্গিতে শুয়ে-বসে থাকলে সাময়িক অসাড় অনুভূতি হয়। পেশির এই সাময়িক অসাড়তাকে ঝিঁঝিঁ ধরা বলা হয়। কেতাবি ভাষায় একে টেম্পোরারি প্যারেসথেশিয়া বলে। ইংরেজিতে বলে পিনস অ্যান্ড নিডলস। মানুষের হাত ও পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরার বিষয়টি বেশি দেখা যায়। যেখানে ঝিঁঝিঁ ধরে, সেখানে অসাড়তার পাশাপাশি এমন অনুভূতি তৈরি হয় যেন অসংখ্য সুই দিয়ে একসঙ্গে খোঁচা দেওয়া হচ্ছে।

কেন ও কীভাবে ঝিঁঝিঁ ধরে?
মানবদেহের সর্বত্র অসংখ্য স্নায়ু রয়েছে, এই স্নায়ুগুলো মস্তিষ্ক ও দেহের অন্যান্য অংশের মধ্যে তথ্য আদান–প্রদান করে। স্নায়ুতে চাপ পড়ার কারণে তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে না। পাশাপাশি দেহের ওই অংশে রক্ত চলাচলকারী শিরার ওপর চাপ পড়ায় রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। ফলাফল ঝিঁঝিঁ ধরা। ঝিঁঝিঁ ধরার অনুভূতিটিকে মোটামুটিভাবে তিন ধাপে বিভক্ত করা যায়।

প্রথম ধাপে তিন থেকে চার মিনিটের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়, এই সময় মনে হয় যেন ত্বকের ভেতর অসংখ্য পিঁপড়া হেঁটে বেড়াচ্ছে। এই বিষয়টিকে কমপ্রেশন টিঙ্গলিং বলা হয়। দ্বিতীয় ধাপটি সাধারণত শুরু হয় ৫ থেকে ১০ মিনিট পর। এই ধাপে হাতে বা পায়ের সংশ্লিষ্ট অংশটি অসাড় হয়ে আসে। তৃতীয় ও শেষ ধাপটি শুরু হয় চাপ অপসারণ করার পর। এই অংশটিকেই ইংরেজিতে পিনস অ্যান্ড নিডলস বলা হয়। এই সময়ে মনে হয় যেন অসংখ্য সুচ দিয়ে একসঙ্গে ওই অংশে খোঁচা দেওয়া হচ্ছে।

ঝিঁঝিঁ ধরলে যা করবেন

  • হাঁটাহাঁটি বা নড়াচড়া করলে রক্তপ্রবাহ বাড়বে এবং ঝিঁঝিঁ ধরার অস্বস্তিকর অনুভূতি চলে যাবে। পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকলে ধীরে ধীরে হাঁটার চেষ্টা করুন অথবা হাতের ভার সরিয়ে নাড়াচাড়া করুন।

  • হাতে ঝিঁঝিঁ ধরলে হাতকে মুষ্টিবদ্ধ করুন ও খুলুন। প্রক্রিয়াটি কিছুক্ষণ পরপর করুন। এই ব্যায়ামে রক্তপ্রবাহ বাড়বে ও স্নায়ুগুলো প্রশান্ত হবে।

  • পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরলে পায়ের আঙুলগুলো ওপর-নিচ করে নাড়াচাড়া করলে উপকার পেতে পারেন।

  • হাতের বাহুতে ঝিঁঝিঁ ধরলে মাথা একপাশ থেকে আরেক পাশে ঘোরালে অস্বস্তিকর অনুভূতি উধাও হবে। তবে কাজটা করতে হবে ধীরে ধীরে। এতে ঘাড়ের স্নায়ুগুলো থেকে চাপ কমে যায়। ফলে বাহুর অসাড়তা দূর হয়ে যায়।

সাধারণত কিছুক্ষণের মধ্যেই অসাড়তা এবং খোঁচা লাগার মতো অস্বস্তিকর অনূভুতি চলে যায়। স্বাভাবিক অনুভূতি ফিরে আসে। তবে নানা কারণে দীর্ঘ সময় ঝিঁঝিঁ ধরার ঘটনা ঘটে। উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটি হতে পারে। এ ছাড়া হাত বা পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে গেলে পেরিফেরাল আর্টারাল ডিজিজ হিসেবে ঝিঁঝিঁ ধরতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে এই সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।