মলত্যাগের পর মল ভেসে থাকা কি কোনো রোগের লক্ষণ
মলত্যাগের পর কমোড বা প্যানের পানির স্তরের নিচে মল ডুবে যাওয়াই স্বাভাবিক। তবে কখনো কখনো মলত্যাগের পর মল ভেসে থাকতে পারে। কেন এমন হয়? এটা কি পেটের কোনো রোগের লক্ষণ? রাফিয়া আলমকে এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সার্জন ডা. রেজা আহমদ
কখনো কখনো কেন মল পানিতে ভাসে
সাধারণত মল পানির চেয়ে ভারী হয়। স্বাভাবিকভাবেই তাই মল পানিতে ডুবে যায়। তবে মলের ভেতর যদি বাতাসের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে মল পানির চেয়ে হালকা হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে মল পানিতে ভেসে থাকে। আবার মলে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকলেও ঘটে একই ঘটনা।
কেন এমন হয়
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যান্ড হেপাটোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বিষয়টি উঠে এসেছে। ১ হাজার ২৫২ জন রোগীর ওপর করা সেই গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ফাংশনাল বাওয়েল ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীদের ২৬ শতাংশই জানিয়েছেন, মলত্যাগের পর তাঁদের মল পানিতে ভাসে। এখানে ফাংশনাল বাওয়েল ডিজঅর্ডার সম্পর্কে একটু বলে রাখা প্রয়োজন।
গঠনগত বা অন্য কোনো বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও যখন একজন ব্যক্তির অন্ত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না, তখন ধরে নেওয়া হয় তিনি ফাংশনাল বাওয়েল ডিজঅর্ডারে ভুগছেন।
অন্ত্র ছাড়া পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য অংশেও এমন ‘ফাংশনাল’ সমস্যা হতে পারে। অর্থাৎ সে ক্ষেত্রেও বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা নেই, তবু পরিপাকতন্ত্রের কাজে দেখা দেয় গন্ডগোল।
ওই গবেষণায়ই জানা গেছে, ফাংশনাল বাওয়েল ডিজঅর্ডার ছাড়াও পরিপাকতন্ত্রের অন্যান্য ফাংশনাল সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ শতাংশ ব্যক্তি মলত্যাগের পর মল ভেসে থাকতে দেখেছেন। বিভিন্ন ফাংশনাল সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত গ্যাস হয়ে থাকে।
আঁশসমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে অন্ত্রে গ্যাসের মাত্রা বাড়তে পারে। কারণ, অন্ত্রে স্বাভাবিকভাবে বাস করা ব্যাকটেরিয়াগুলো এসব আঁশের ওপর কিছু ফারমেন্টেশন, অর্থাৎ গাঁজন ঘটায়। তাতে তৈরি হয় গ্যাস।
শাক, শিমজাতীয় সবজি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, মসুর ডাল প্রভৃতিতে প্রচুর আঁশ থাকে। ফল ও সবজির খোসায়ও প্রচুর আঁশ থাকে।
এ ধরনের খাবার অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে মল পানিতে ভাসতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে দুধের ল্যাকটোজ এবং ফলের ফ্রুকটোজের কারণেও অন্ত্রে গ্যাসের মাত্রা বাড়ে। সে ক্ষেত্রেও মল ভাসতে পারে পানিতে।
একইভাবে মলে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে, যদি কেউ অতিরিক্ত তেল-চর্বিজাতীয় খাবার খান। তবে কারও যদি খাবারের চর্বি স্বাভাবিকভাবে শোষণে কোনো বাধা সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রেও তাঁর মলে চর্বির মাত্রা বেড়ে যাবে। অন্ত্র, অগ্ন্যাশয় বা পিত্তথলির নির্দিষ্ট ধরনের রোগে এমনটা হতে পারে।
করণীয়
মল পানিতে ভাসলেই তা কোনো রোগের লক্ষণ না-ও হতে পারে। তবে প্রায়ই এমন হলে আপনি কী খাচ্ছেন বা কীভাবে খাচ্ছেন, সে বিষয়ে একটু যত্নশীল হতে পারেন। অর্থাৎ আপনি খেয়াল করতে পারেন, অতিরিক্ত বায়ু উৎপন্নকারী খাবার বা খাবারে অতিরিক্ত চর্বি থাকার কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে কি না।
তবে কারণটা আপনি খুঁজে না পেলেও সাধারণত কোনো ক্ষতি হয় না। অবশ্য কিছু লক্ষণের দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, যেসব দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে
একটানা বেশ কয়েক দিন যদি মলত্যাগের পর পানিতে মল ভাসে।
যদি মলের স্বাভাবিক গন্ধের চেয়ে আলাদা ধরনের দুর্গন্ধ হয়।
যদি মল বেশ আঠালো হয়।
যদি মলের পরিমাণ খুব বেশি হয়।
যদি মলের সঙ্গে রক্ত আসে বা টয়লেট পেপারে রক্ত দেখা দেয়।
কোনো চেষ্টা না করার পরও ওজন কমতে থাকে।
পেটব্যথা হয়।
অতিরিক্ত গ্যাস বের হয়।
এমন কোনো লক্ষণ থাকলে চিকিৎসক সমস্যার কারণ খুঁজে বের করবেন এবং প্রয়োজনমাফিক চিকিৎসার নির্দেশনা দেবেন।