প্যানিক অ্যাটাক হলে কী করবেন
প্রচণ্ড ভয়ে শরীরের মধ্যে যে অস্বাভাবিক অবস্থা তৈরি হয় চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় তাকেই বলে প্যানিক অ্যাটাক। প্যানিক অ্যাটাক একধরনের মানসিক সমস্যা। কারও প্যানিক অ্যাটাক হলে তাঁর মনে হতে থাকে যে সে মারা যাচ্ছে কিংবা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। যে কারণে বাঁচার জন্য সে হাঁসফাঁস করতে থাকে, যার প্রভাব শরীরেও পড়ে। হুট করেই হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, ঘাম, কাঁপুনি, শ্বাসকষ্ট—প্রতিটি উপসর্গই মনে হয় মাত্রাতিরিক্ত। মনে হয় মৃত্যু অতি সন্নিকটে। প্যানিক অ্যাটাকে যা যা মনে হয়, তার কোনটাই কিন্তু ঠিক নয়, বরং মনের ভুল। প্যানিক অ্যাটাকের ক্ষেত্রে শরীরের স্নায়ুব্যবস্থা অত্যধিক সক্রিয় হয়ে যায়। একত্রে শরীরের প্রতিটি সমস্যার সমাধান খুঁজতে শুরু করেন তাঁরা। আর তা থেকেই বিভিন্ন রোগের উপসর্গ একসঙ্গে শরীরে এসে পড়ে, শুরু হয় প্যানিক অ্যাটাক।
যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গায় আঘাত হানতে পারে প্যানিক অ্যাটাক। সদ্য টিনএজে পা রাখা কিশোর–কিশোরী থেকে বৃদ্ধ, যে কেউ হতে পারে এর শিকার। প্যানিক অ্যাটাক বিরল কোনো অবস্থা নয়। কিন্তু নিয়মিত এই ঘটনাই হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী। প্যানিক অ্যাটাক ঠেকানোর কোনো উপায় এখনো বের হয়নি। কিন্তু একটু সাবধান হলেই দ্রুতই প্যানিক অ্যাটাক থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। চলুন জেনে নেই, হুট করে নিজের কিংবা প্রিয় কারও প্যানিক অ্যাটাক হলে কী করতে হবে।
প্যানিক অ্যাটাক যেহেতু খুব বেশি স্থায়ী হয় না, মনকে শক্ত করাই এই রোগের প্রতিকারের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। নিজেকে শান্ত রাখুন ও ধৈর্য ধারণ করুন। সামান্য কয়েকটি টিপস আপনার পরবর্তী প্যানিক অ্যাটাকের তীব্রতা ও সময় দুটিই কমিয়ে আনতে পারে।
লম্বা শ্বাস নিন
প্যানিক অ্যাটাক শুরু হওয়া মাত্র লম্বা করে শ্বাস নিন। এরপর আস্তে করে ছেড়ে দিন। মস্তিষ্ক অক্সিজেন পেতে শুরু করলে আস্তে আস্তে আক্রমণের তীব্রতা কমে আসবে।
পানি খান
পানি শরীরকে শান্ত করে। ঠাণ্ডা পানি স্নায়ুকে শান্ত করতে সাহায্য করে। সম্ভব হলে পানি দিয়ে মুখ ও চোখ পরিষ্কার করে আসুন। এতে শরীর যেমন শান্ত হবে, প্যানিক অ্যাটাকের মাত্রাও আস্তে আস্তে কমে আসবে।
মানসিক প্রস্তুতি নিন
একবার প্যানিক অ্যাটাক দেখা দিলে কিছুক্ষণের মধ্যে পরবর্তী আক্রমণও হতে পারে। প্রথম অ্যাটাকের তুলনায় দ্বিতীয় অ্যাটাক আরও তীব্র হতে পারে। যে কারণে পরবর্তী অ্যাটাকের আগেই নিজের সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যান।
পছন্দের মানুষের সঙ্গে কথা বলুন
প্যানিক অ্যাটাকের সময় মন বড্ড বিক্ষিপ্ত থাকে। সম্ভব হলে পছন্দের মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন। এতে করে বিক্ষিপ্ত মন শান্ত হবে, যা প্যানিক অ্যাটাকের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পছন্দের কাজ করার চেষ্টা করুন
যে কাজটি করলে মন শান্ত হয়, সেটি করার চেষ্টা করুন। মন বিক্ষিপ্ত থাকা অবস্থায় কাজ করা অনেকটা অসম্ভবই বটে, কিন্তু পছন্দের গান গাওয়া বা কাজ করা প্যানিক অ্যাটাক থেকে দ্রুত প্রশান্তি দেয়।
মাংসপেশি শিথিল পদ্ধতি
প্যানিক অ্যাটাকের সময় মনে হতে থাকে, আপনি আপনার শরীরের ওপর থেকে সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন। সে সময় মাংসপেশি শিথিল করার পদ্ধতি শরীরের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে। প্যানিক অ্যাটাক হলে শুয়ে পড়ে শরীরের মাংসপেশিকে হালকা করার চেষ্টা করুন। এতে করে প্যানিক অ্যাটাকের তীব্রতা অনেকাংশে কমে আসে।