ননস্টিক পাত্রে খাবার রান্না করলে কি স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে?

রান্নার কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায় ননস্টিক পাত্র ব্যবহারে। কিন্তু প্রচলিত ননস্টিক পাত্রগুলোতে এমন উপকরণ ব্যবহার করা হয়, যার কারণে এসব পাত্রের ভুল ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই প্রচলিত ননস্টিক পাত্র ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো। জেনে রাখুন বিস্তারিত—

প্রচলিত ননস্টিক পাত্র ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা ভালোমডেল: প্রমি। ছবি: প্রথম আলো

শুরুতেই বলে রাখা ভালো, এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। এসব তেমন জটিল কোনো নিয়ম নয়। তা ছাড়া এসব পাত্রের বিকল্প হিসেবে আপনি রান্নার কাজে এমন কোনো পাত্রও বেছে নিতে পারেন, যেসব নামে ‘ননস্টিক’ না হলেও কাজ করে ‘ননস্টিক’ পাত্রের মতোই।

প্রচলিত ননস্টিক পাত্রে ‘পিএফএএস’ ব্যবহার করা হয়। সে আবার কী জিনিস? কিছু বিশেষ রাসায়নিক উপাদানকে সংক্ষেপে ‘পিএফএএস’ বলা হয়। পুরো নামটা আরও খটমটে—পার অ্যান্ড পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল সাবস্ট্যান্সেস। ইংরেজিতে সহজভাবে এসবকে বলা হয় ‘ফরএভার কেমিক্যাল’। তার মানে এসব রাসায়নিক উপকরণ কখনো ‘ভাঙে’ না; অর্থাৎ এসব পরিবেশেই থেকে যায়।

বহু বছর আগে ননস্টিক পাত্রে যে ধরনের ‘পিএফএএস’ ব্যবহার করা হতো, তারও ছিল এক খটমটে নাম—পার ফ্লুরো অক্টানয়িক অ্যাসিড। সংক্ষেপে এর নাম ‘পিএফওএ’। ২০১৫ সালের আগে ননস্টিক পাত্র তৈরি করা হতো ‘পিএফওএ’ দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি (ইপিএ)-এর হস্তক্ষেপে সেই উপকরণ বদলে ফেলা হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো, এরপরও ভিন্ন ধরনের ‘পিএফএএস’ ব্যবহার করা হচ্ছে, আর তাতেও কাছাকাছি ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে!

এই স্বাস্থ্যঝুঁকি আদতে কী, সে ধারণাও নিয়ে রাখা যাক। ‘পিএফএএস’-এর কারণে কিডনির ক্যানসার, রক্তে চর্বির মাত্রাধিক্যসহ কিছু রোগের ঝুঁকি আছে বলে জানা যায়। আগেকার দিনের সেই ‘পিএফওএ’ ব্যবহারে এসবের পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ আর থাইরয়েডের সমস্যার ঝুঁকিও ছিল। তবে বাস্তবতা হলো, পরিবেশের নানা জায়গাতেই ‘পিএফএএস’ ছড়িয়ে আছে, আর এই পরিবেশেই বাস করি আমরা। কাজেই কেউ এ ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যায় আক্রান্ত হলেও সরাসরি ননস্টিক পাত্রকে ‘নন্দ ঘোষ’ তকমা দেওয়ার সুযোগ নেই! তা ছাড়া ননস্টিক স্তরটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও সেটিতে রান্না করলে মাইক্রোপ্লাস্টিক ও ন্যানোপ্লাস্টিকের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়। আমাদের আশপাশে মাইক্রোপ্লাস্টিকও কিন্তু ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে।

তারপরও যাতে রান্নার পাত্রের কারণে বাড়তি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি না হয়, সেদিকটা নিশ্চিত করতে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলা ভালো—

  • ননস্টিক পাত্র খালি থাকা অবস্থায় তা গরম করবেন না।

  • পাত্রের ননস্টিক স্তরটা ক্ষয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে ওই পাত্র আর ব্যবহার করবেন না। শক্ত পরিষ্কারক দিয়ে পরিষ্কার করলে ভেতরের স্তরটা সহজে নষ্ট হয়ে যায়।

  • অত্যধিক উত্তাপ সৃষ্টি হয়, এমন চুলায় ননস্টিক পাত্র ব্যবহার করবেন না।

  • আর ননস্টিক পাত্রের বিকল্প হিসেবে সিরামিক বা স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রেও রান্না করতে পারেন, যেসবে বাড়তি কোনো ‘কোটিং’ বা স্তর না থাকায় বাড়তি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকে না। তাই বাড়তি সতর্কতা মানার বালাই নেই।

সূত্র: ইয়াহু লাইফ