এন্ডোমেট্রিওসিসের ঝুঁকিতে কারা

মেয়েদের মাসিকের সময় তলপেটে মৃদু ব্যথা ও অস্বস্তি লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু তীব্র ব্যথা ও অসুস্থতা হলেও কেউ কেউ বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে উড়িয়ে দেন। অথচ এই তীব্র ব্যথা একজন নারীর জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। যেসব কারণে এমন হয়, তার মধ্যে এন্ডোমেট্রিওসিস অন্যতম।

জরায়ুর বাইরে এন্ডোমেট্রিয়ামের মতো কোষের উপস্থিতি হলো এন্ডোমেট্রিওসিস। রোগটি নির্ণয় করতে বিলম্ব হয় বলে অনেক জটিলতা
দেখা দেয়।

ঝুঁকিতে কারা

অল্প বয়সে মাসিক শুরু, প্রজনন নালির অস্বাভাবিকতা, প্রসবসংক্রান্ত কোনো ইতিহাস না থাকা, বিলম্বিত মেনোপজ, এন্ডোমেট্রিওসিসের পারিবারিক ইতিহাস, সংক্ষিপ্ত মাসিকচক্র (সাধারণ চক্র ২১-৩৫ দিন হয়), পিরিয়ড এক সপ্তাহের বেশি সময় স্থায়ী হওয়া, নিম্ন বিএমআই (বডি মাস ইনডেক্স), অত্যধিক ইস্ট্রোজেন, প্রজননতন্ত্রের কোনো ব্যাধি, স্তন্যপান কম করানো, মাসিকের সময় শরীর থেকে রক্ত চলাচলে বাধা দেয় এমন চিকিৎসা পরিস্থিতি।

লক্ষণ কী

মাসিকের সময় তলপেটে তীব্র ব্যথা, মাসিক ছাড়াও কোমর ও তলপেটে ব্যথা, যৌন মিলনের সময় বা পরে ব্যথা, মূত্রথলি খালি করার সময় ব্যথা বা বেদনাদায়ক প্রস্রাব, মলত্যাগের সময় ব্যথা, মলদ্বারে বেদনাদায়ক রক্তপাত ও প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, বন্ধ্যত্ব, ক্লান্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, মাসিকের সময় কাশি, বুকে ব্যথা অথবা কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, মাসিকের সময় ক্ষতচিহ্ন বা দাগ ফুলে যাওয়া ও ব্যথা।

চিকিৎসা

ওষুধের মধ্যে আছে হরমোন চিকিৎসা ও ব্যথানাশক বড়ি। ব্যথানাশক, যেমন মাসিকের সময় নন-স্টেরয়েডাল প্রদাহনাশক ব্যবহার করা যায়। আর হরমোন চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে—

  • গর্ভনিরোধক হরমোন বড়ি

  • প্রজেস্টেরন (জরায়ুর অভ্যন্তরে ব্যবহৃত ডিভাইসসহ)

  • গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোনসহায়ক ওষুধ

  • গোনাডোট্রপিন রিলিজিং হরমোনবিরোধী ওষুধ

  • অ্যারোমাটেজ প্রতিবন্ধক

ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি

এন্ডোমেট্রিওসিসের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার অন্যান্য কারণ বের করতে ব্যবহার করা যায়। ল্যাপারোস্কোপি এন্ডোমেট্রিওসিসকে জমাট, অ্যাবলেশন বা দৃশ্যমান ইমপ্লান্টের রিসেকশন এবং আঠালো লাইসিস করে চিকিত্সার সুযোগ তৈরি করে।

এন্ডোমেট্রিওসিস হলে কি বন্ধ্যত্ব হবে

  • এন্ডোমেট্রিওসিস আক্রান্ত সবাই বন্ধ্যত্বে ভোগেন না।

  • আক্রান্ত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ নারী স্বাভাবিকভাবে গর্ভবতী হতে পারেন।

  • তবে আক্রান্ত নারীদের একাংশ গর্ভধারণ সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে নানা ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। রোগীর পছন্দ, চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসার প্রাপ্যতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

  • ড. শারমিন আব্বাসি, গাইনি ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ